নিজস্ব প্রতিবেদক: বর্তমানে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে ১৩টি সাধারণ এবং ১৩টি পেশাগত ও কারিগরি ক্যাডার রয়েছে। ১৩টি সাধারণ ক্যাডারের মধ্যে একটি তথ্য ক্যাডার। তবে তথ্য ক্যাডারে যারা নিয়োগ পান তাদের তিনটি উপধারায় ভাগ করে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে একটি অংশকে সহকারী তথ্য অফিসার বা সহকারী পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় গণযোগাযোগ ও তথ্য অধিদফতরে। বাকি দুটির ধারা থেকে বাংলাদেশ বেতারে সহকারী পরিচালক (অনুষ্ঠান) ও সহকারী বার্তা নিয়ন্ত্রক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার আগে কেউ জানতে পারেন না যে, কার পদায়ন কোথায় হবে। কিন্তু চাকরিতে যোগদানের পর তথ্য (সাধারণ) ও তথ্য (বেতার)—এমন উপধারা সৃষ্টি করে নিজেরা দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছেন।
জানা যায়, প্রশাসন, পররাষ্ট্র, পুলিশ, সমবায় বা কর ক্যাডারের মতোই বিসিএস (তথ্য) একটি সাধারণ ক্যাডার। তবে অন্যান্য সাধারণ ক্যাডারের প্রকৃতির মতো এটি সাধারণ নয়, প্রকৃতিগতভাবে এটি একটি আজব ক্যাডার। একটি সাধারণ ক্যাডারের রয়েছে তিনটি ভাগ। এর মধ্যে একটি অংশকে সহকারী তথ্য অফিসার বা সহকারী পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় গণযোগাযোগ ও তথ্য অধিদফতরে। বাকি দুটির ধারা থেকে বাংলাদেশ বেতারে সহকারী পরিচালক (অনুষ্ঠান) ও সহকারী বার্তা নিয়ন্ত্রক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু এ তিনটি অংশের মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয় নেই। তাদের কার্যক্রম দেখে মনে হয় এ তিনটি ধারা যেন প্রত্যেকটি পৃথক ক্যাডার। ফলে পারস্পরিক অসন্তোষ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। সাধারণত তথ্য অধিদফতরে নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্য থেকে পিআইডি, ডিএফপি ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে তথ্য কর্মকর্তা নিয়োগ নেওয়া হয়। কিন্তু বিসিএসে নিয়োগবিধির কোথাও নেই যে, বেতারে কর্মরতদের মধ্য থেকে এসব পদে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। তারপরও তথ্য অধিদফতরে নিয়োগপ্রাপ্তরা নিজেদের তথ্য (সাধারণ) দাবি করে এসব পদে নিজেদের একাধিপত্য দাবি করতে চাইছেন। সম্প্রতি বেতারে নিয়োগপ্রাপ্ত কয়েকজন কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে তথ্য কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পর নিজেদের মধ্যকার পারস্পরিক দ্বন্দ্ব রীতিমতো হিংসাত্মক রূপ নিয়েছে।
তবে বেতারের জন্য একটি কারিগরি ক্যাডার রয়েছে, কিন্তু সে ক্যাডারের সঙ্গে অনুষ্ঠান ও বার্তায় যারা কাজ করেন, তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে বিসিএস (তথ্য)-এর এ ভাগগুলোর মধ্যে পারস্পরিক রেষারেষি চরম আকার ধারণ করে। গণযোগাযোগ ও তথ্য অধিদফতরের অংশ তাদের তথ্য সাধারণ বলে দাবি করছে, যার দরুন বেতার অংশকে বেতার ক্যাডার নামে অভিহিত করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে বেতার ক্যাডার নামে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে কোনো ক্যাডার নেই। তথ্য সাধারণ বলেও কোনো ক্যাডার নেই। বিসিএস (তথ্য) হচ্ছে আরও কয়েকটি সাধারণ ক্যাডারের মতো একটি সাধারণ ক্যাডার, যেটির আরও কিছু ক্যাডারের মতো একটি কারিগরি অংশও রয়েছে। বেতারের তিনটি অংশেরও মধ্যেও রয়েছে চরম অসন্তোষ, কেননা পদোন্নতি ও পদায়নের ক্ষেত্রেও রয়েছে চরম অসংগতি। বার্তা ও প্রকৌশল শাখায় ৩০ ব্যাচের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি হলেও অনুষ্ঠান বিভাগের ২৮তম ব্যাচেরই এখনও পদোন্নতি হচ্ছে না।
বিসিএস (তথ্য) ক্যাডারের বাংলাদেশ বেতারের অনুষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তা মো. জসীম উদ্দিন বলেন, বিসিএস (তথ্য) ক্যাডারে বিশৃঙ্খলা ও বৈষম্য নিরসনে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি প্রয়োজন। বিসিএস (তথ্য) ক্যাডারে বিভেদ, বিভক্ত ও বৈষম্য বিরাজমান। একটি সাধারণ ক্যাডারের মধ্যে এসব বিভাজন এ ক্যাডারের উন্নয়নে অন্তরায়। এ ক্যাডারে দুটি বিভাজন (সাধারণ ও প্রকৌশল) যৌক্তিক। প্রকৌশলী বাদে অন্য তিন বিভাগের কাজের ধরন, শিক্ষাগত যোগ্যতা, সিভিল সার্ভিসের সব ওরিয়েন্টেশন এক ও অভিন্ন। এই কর্মকর্তারা সবাই মিডিয়া, কমিউনিকেশন ও পাবলিক রিলেশন (গণসংযোগ) নিয়ে কাজ করেন।
বিসিএস (তথ্য) ক্যাডারের বাংলাদেশ বেতারের বার্তা বিভাগের পরিচালক বলেন, আইসিটি/ইন্টারনেট বিপ্লবের ফলে মিডিয়ার তিনটি ধারা (অডিও, ভিডিও ও নিউজ পেপার) একীভূত হয়ে গেছে। ভবিষ্যতে হয়তো বাংলাদেশ বেতার, বিটিভি এবং পিআইডি’র কাজের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকবে না। অযৌক্তিক এসব বিভাজনের ফলে একটি প্রফেশনের মধ্যে রেষারেষি ও দ্বন্দ্ব হচ্ছে। ক্যারিয়ার প্ল্যানিং ও পেশাগত উন্নয়ন হচ্ছে না। অন্তঃক্যাডার (একই ক্যাডারের মধ্যে) বৈষম্য হচ্ছে এবং ক্যাডারে শৃঙ্খলা থাকছে না। তাই বিসিএস (তথ্য) ক্যাডারকে সংস্কার করে ঢেলে সাজানো জরুরি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।