জীবনভর শিক্ষায় ইতিবাচক জীবন

২০১৫ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার কলেজ অব ক্যানিয়নস থেকে সামাজিক বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন ডরিথা ড্যানিয়েলস। আর দশটা সাধারণ ছাত্রছাত্রীর মতো নন ডরিথা। কেননা তখন তার বয়স হয়েছিল ৯৯ বছর। কলেজ অব ক্যানিয়নসের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, শুধু আত্মিক উন্নতির জন্য তিনি ছয় বছর এ কলেজে পড়ালেখা করেছেন। লেখাপড়ার প্রতি তার আগ্রহ, অধ্যবসায় ও চেষ্টায় কোনো কমতি ছিল না, জানিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।

নব্বই পেরিয়ে ডিগ্রি নেওয়ার ঘটনা বিশ্বে হাতেগোনা। অবসরপ্রাপ্ত বুড়োদের কজনই বা কলেজে কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার জন্য ভর্তি হন? এমনকি ক্যারিয়ারের মাঝামাঝি সময়েও অনেকে পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, বয়স বেশি হলেও অনেকে নতুন করে পড়াশোনা শুরু করতে চান।

এটাও সত্য, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা গ্রহণ কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা, প্রয়োজনীয় বই সংগ্রহ, ম্যাসিভ অনলাইন ওপেন কোর্সে অংশ নেওয়ার সময় বের করা প্রভৃতির বেলায় ঝামেলা পোহাতে হয়। তারপরও পড়ালেখা করে বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়ন ঘটানো যায়, জীবনযাপনে পরিবর্তন আনা যায়।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও জীবনভর উপার্জনের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছে। ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তিন গবেষক ক্রিস্টোফার ট্যামবোরিনি, চ্যাংহোয়ান কিম ও আর্থার সাকামোটো তাদের এক গবেষণাপত্রে উল্লেখ করেছিলেন, স্নাতক ডিগ্রিধারী একজন মানুষ চাকরিজীবনে বছরে চার লাখ ৪৫ হাজার থেকে ছয় লাখ ৫৫ হাজার ডলার আয়ের আশা করেন। স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীরা আরও অধিক আয়ের ইচ্ছাপোষণ করেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চাহিদার পাল্লাও ভারী হচ্ছে। অতীতের তুলনায় ২০১৭ সালে মানুষের চাহিদা আরও বেড়েছে। এর পাশাপাশি কাজের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারও বেড়েছে। অর্থাৎ নতুন নতুন কাজের ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। এর মধ্য দিয়েও মানুষ তার জানার ইচ্ছা জিইয়ে রাখতে পারে।

স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটায় শিক্ষা। পড়ালেখা করে মানসিক চাপ কমানো যায়। মনোযোগ দিয়ে বই পড়ার ফলে দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে। একটি ভালো বই স্বাস্থ্য সজীব রাখতে সহায়তা করে। পড়ালেখার মধ্য দিয়ে সঠিকভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়ে। গল্প কিংবা উপন্যাসের কথাই ধরুন, প্রতিটি গল্পের শুরু আছে, শেষ আছে। গল্পের এ গঠন মস্তিষ্কের ওপর ঘটনার পরম্পরা, পরিণতি প্রভৃতির নিরিখে চিন্তার সক্ষমতা বাড়ায়।

যার শেখার আগ্রহ আছে, যিনি কৌতূহলী তিনি সামাজিক ও পেশাগতজীবনে অন্যদের চেয়ে বেশি সুখী। আপনার সহকর্মীদের মধ্যে কাকে বেশি শ্রদ্ধা করেন? যিনি শিক্ষিত, দিলখোলা, বুদ্ধিমান, পরোপকারী তাকেই নিশ্চয়ই পছন্দ করেন? একই সঙ্গে যিনি শিখতে চান, নতুন নতুন বিষয় গ্রহণে পিছপা হন না, এমন সহকর্মীকে ঘিরে সবার আগ্রহ রয়েছে।

প্রত্যেক মানুষেরই নিজস্ব চিন্তা-চেতনা রয়েছে। নিজস্ব ধারণক্ষমতা আছে। পড়ালেখার মধ্য দিয়ে নিজেকে আরও শানিয়ে নেওয়া যায়। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট থিওডর রুজভেল্ট ২৩ বছর বয়সে প্রথম বইটি লেখেন। তার জীবনীকার এডমুন্ড মরিস বলেছেন, রুজভেল্ট প্রতিদিন একটি বই পড়ে শেষ করতেন। এ পড়ালেখাই তাকে ক্যারিশম্যাটিক নেতা করে তুলেছিল। প্রতিদিনই কিছু না কিছু শেখার চেষ্টা করতেন রুজভেল্ট। ব্যক্তিগত আনন্দ ও পেশাগত উন্নতির জন্য তিনি এমন অভ্যাস গড়ে তুলেছিলেন। বিনিয়োগগুরু ও বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের সিইও ওয়ারেন বাফেট কর্মদিবসের ৮০ শতাংশ সময় ব্যয় করেন পড়াশোনায়। দৈনিক পত্রিকা থেকে বার্ষিক প্রতিবেদন, যা পান তা-ই পড়েন। এমন অভ্যাস আমরাও অনুকরণ করতে পারি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০