নাজমুল ইসলাম ফারুক: কম্প্র্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস (সিএনজি) ব্যবসা দেশে বেশ ভালোই চলছিল। কিন্তু মজুত কমে আসায় এ ব্যবসা নিরুৎসাহিত করেছে সরকার। এ কারণে খাতটির ব্যবসায় কিছুটা মন্দার প্রভাব পড়ে। এতে মুনাফার হার কমছে নাভানা সিএনজির। শুধু সিএনজিতে নয়, সাবসিডিয়ারির ওপর নির্ভর করে মুনাফা ধরে রাখতে চেষ্টা করছে প্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি মুনাফা বাড়াতে এলপিজি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ঘুরে দাঁড়াতে এলপিজি প্ল্যান্ট চালু করতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এতে ব্যবসা পূর্ণা উদ্যম ফিরে পাবে বলে মনে করছেন কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, গ্যাসের মজুত কমে আসায় সিএনজির ব্যবহার নিরুৎসাহিত করছে সরকার। তবে বিকল্প হিসেবে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) ব্যবহার বাড়াতে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এতে সিএনজি ব্যবসায় কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সরকারের নিরুৎসাহের কারণে দেশে কিছু সিএনজি কনভারশন কমে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নাভানা সিএনজিতে। এ কারণে কোম্পানিটির ব্যবসা কিছুটা মন্দার কবলে পড়েছে। ফলে দিন দিন মুনাফার হার কমছে। তবে সিএনজির বিকল্প এলপিজি প্রকল্পের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত আছে প্রতিষ্ঠানটির।
তথ্যমতে, সর্বশেষ প্রকাশিত ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে দ্বিতীয় প্রান্তিকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি কনসোলিডেট আয় (ইপিএস) হয়েছে ৫৯ পয়সা, আগের বছর একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৭৮ পয়সা। অর্থাৎ তিন মাসে কোম্পানির ইপিএস কমেছে ১৯ পয়সা। ওই বছর জুলাই থেকে ডিসেম্বর ছয় মাসে কোম্পানির ইপিএস হয়েছে এক টাকা ৩৬ পয়সা, আগের বছর একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল এক টাকা ৫৩ পয়সা। অর্থাৎ ছয় মাসে কোম্পানির ইপিএস কমেছে ১৭ পয়সা।
আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১২ সালে নাভানা সিএনজির বিক্রির তুলনায় কর-পরবর্তী মুনাফার অনুপাত ছিল ১৭ দশমিক ১২ শতাংশ। এ সময় কোম্পানিটির ইক্যুয়িটির তুলনায় দায়ের হার ছিল ২৩ শতাংশ এবং রিটার্ন ইক্যুয়িটি অনুপাত দাঁড়িয়েছিল ১৪ দশমিক ২৮ শতাংশ। পাঁচ বছর পর ২০১৬ সালের পনেরো মাসের হিসাবে কোম্পানির কর-পরবর্তী মুনাফার অনুপাত কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৭০ শতাংশ। আলোচিত সময়ে ইক্যুয়িটির তুলনায় দায়ের হার ছিল ৫১ শতাংশ এবং রিটার্ন ইক্যুয়িটি অনুপাত দাঁড়ায় ১৩ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।
ইক্যুয়িটির তুলনায় দায় বাড়ার বিষয়ে কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার (ফাইন্যান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস) তরুণ কুমার কইরি বলেন, ওয়েল্ডিং ইউনিটে বিনিয়োগ করার কারণে ২০১২ সালের পর থেকে ইক্যুয়িটির চেয়ে দায়ের হার বেড়েছে। তবে তা অচিরেই সমন্বয় হয়ে যাবে। আর মুনাফার অনুপাত কমার বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার সিএনজি ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার কারণে এ খাতে ব্যবসায় কিছুটা মন্দা ভাব বিরাজ করছে। তবে বিভিন্ন পণ্য নিয়ে ব্যবসা করার কারণে মুনাফায় কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। সেলসে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব থাকলেও তা কাটিয়ে ওঠা যাবে। কারণ সরকার সিএনজি ব্যবহারের বিকল্প হিসেবে এলপিজি ব্যবহার উৎসাহিত করেছে। আমাদের এলপিজি প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলেই ব্যবসায় ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে। এদিকে কোম্পানির আয়ের সঙ্গে বেড়েছে ব্যয়ের পরিমাণ। ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত ১২ মাসে কোম্পানির আয় হয়েছিল ১৬৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এ সময়ে নিট মুনাফার পরিমাণ দাঁড়ায় ১৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা এবং ইপিএস দুই টাকা ২৮ পয়সা। আলোচিত সময়ে কোম্পানির প্রশাসনিক ও বিপণন ব্যয় হয়েছিল ২৭ কোটি তিন লাখ টাকা। আগের বছর একই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির আয় হয়েছিল ১৪০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এ সময় নিট মুনাফা ১৬ কোটি সাত লাখ টাকা এবং ইপিএস হয়েছিল দুই টাকা ৩৫ পয়সা। ওই সময় প্রশাসনিক ও বিপণন ব্যয় হয়েছিল ২০ কোটি ১৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যধধানে আয়ের পাশাপাশি প্রশাসনিক ও বিপণন ব্যয় বেড়ে গেছে। তবে মুনাফা, ইপিএসের পরিমাণ কমেছে।
লেনদেন পর্যালোচনা দেখা গেছে, গত দুই বছরে কোম্পানির শেয়ার সর্বনি¤œ ৪১ টাকা ৫০ পয়সা এবং সর্বোচ্চ ৮০ টাকা ৪০ পয়সায় বেচাকেনা হয়েছে। গতকাল কোম্পানির শেয়ার সর্বশেষ ৭২ টাকায় বেচাকেনা হয়েছে।
ডিএসইতে দেওয়া তথ্যানুসারে, কোম্পানিটি ২০০৯ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানির শেয়ার সংখ্যা ছয় কোটি ৮৫ লাখ ২৮ হাজার ৫৯২টি। কোম্পানি তালিকাভুক্ত হওয়ার পর থেকে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিয়ে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। কোম্পানির মোট শেয়ারে মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে ৪২ দশমিক ৪৯ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৩৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
Add Comment