সুপ্রাচীনকাল থেকে নদীবেষ্টিত ছিল মুন্সীগঞ্জ। ছোট-বড় অনেক নদী বয়ে গেছে এর বুক চিরে। মুন্সীগঞ্জ তথা আদি বিক্রমপুরের তেমনই একটি ঐতিহ্যবাহী নদী রজতরেখা। নদীটিকে ঘিরে অনেক কবি ও লেখক মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন। সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এ জেলার শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য রজতরেখা নামে একটি বাসও চালু করেছে। তবে কাগজে-কলমে জ্যোতি ছড়ালেও বাস্তবে দখল ও দূষণের কারণে প্রায় বিলুপ্তির পথে রজতরেখা।
পদ্মা নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে মুন্সীগঞ্জ সদর ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলার সীমান্তঘেঁষে এঁকেবেঁকে ১২ থেকে ১৪ কিলোমিটার অতিক্রম করে ধলেশ্বরী নদীর সঙ্গে মিশেছে রজতরেখা। বিশদভাবে বলা যায়, দিঘিরপাড় থেকে বেশনাল-পুরা বাজার-মাকাহাটি থেকে কাটাখালী, এরপর ধলেশ্বরীতে মিশে গেছে। বর্তমানে এ নদীর উৎপত্তিস্থল থেকে শুরু করে সর্বত্র চলছে দখলবাজদের আগ্রাসী থাবা।
নদীর দুই পাড় দখল করে ক্ষান্ত হয়নি দখলবাজরা। নদীর ওপর তারা বানিয়েছে ঘরবাড়ি। দোকানপাট তৈরি করে চলছে রমরমা বালুর ব্যবসা। ক্রমাগত বেদখলে ৪৮০ ফুট প্রস্থের নদীটি বর্তমানে ৩০ থেকে ৪০ ফুটে এসে দাঁড়িয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় নদীটি বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীটির উৎপত্তিস্থল টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দিঘিরপাড় এলাকায় পলি জমে নদী মুখ অনেকটা বন্ধ হয়ে আসছে। তার ওপর পদ্মা নদীতে ড্রেজার বসিয়ে রজতরেখার উৎপত্তিস্থলের কয়েক ফুট দূরে চলছে প্রভাবশালীদের অবৈধ ভরাটকাজ। প্রভাবশালীরা নদীর পাশে পকেট তৈরি করে রমরমা বালুর ব্যবসা করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। উৎপত্তিস্থল থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার জায়গাজুড়ে একশ্রেণির স্বার্থলোভী প্রভাবশালীরা নদীটি ভরাট করছে।
ইতিহাস অনুসন্ধান করে জানা যায়, ধবধবে সাদা উত্তাল জলরাশির জন্য নদীটির নামকরণ রজতরেখা করা হয়েছে। তবে কালের বিবর্তনে সে ধবধবে উত্তাল জলরাশি হারিয়ে নাব্যসংকটে নদীটি শুকিয়ে এখন মৃতপ্রায়। বর্ষা মৌসুমে নদীতে সামান্য জল থাকলেও বাকি সারা বছর নদীটি শুকিয়ে নিছক এক নালায় পরিণত হয়।
অথচ অবিভক্ত বাংলার কৃতী সাঁতারু পরেশ নাথ দত্ত রজতরেখা নদীতে সাঁতার কাটতেন। তার বাড়ি ছিল নশংকর গ্রামে। পরবর্তীকালে বোম্বেতে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত সাঁতার প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন। সাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের একটি লেখায় রজতরেখা নদীর কথা উল্লেখ রয়েছে।
বর্ষাকালে রজতরেখা তার পুরোনো রূপ ফিরে পায়। তখন একটি মোহিনী নদীতে পরিণত হয়।
শেখ মোহাম্মদ রতন, মুন্সীগঞ্জ