তিস্তাপাড়ের মানুষের ইফতারি চালভাজা

জাহেদুল ইসলাম সমাপ্ত, লালমনিরহাট: এক সময় গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে চালভাজা খাওয়ার প্রচলন ছিল ব্যাপক। এখন আর নেই। তবে রমজান এলে লালমনিরহাটের তিস্তা নদীর তীরবর্তী গ্রাম ও চরাঞ্চলগুলাতে চালভাজার প্রচলন দেখা যায়। তিস্তাপাড়ে প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে চালভাজা হয় ইফতারের জন্য। মূলত দরিদ্রতার কারণে রকমারি ইফতার সামগ্রী কেনার সামর্থ্য না থাকায় চালভাজাই তাদের ইফতারের একমাত্র অনুসঙ্গ।
তিস্তার চর এলাকায় দেখা যায়, ইফতারের আগে বাড়ির উঠানে উনুনের পাশে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন চরের কৃষি শ্রমিক আবু তালেব। উনুনে চাল ভাজছিলেন তার স্ত্রী নাফেদা বেগম। তাদের রোজাদার দুই শিশু কন্যা আলপনা ও তাসলিমাও অপেক্ষা করছিল ইফতারের জন্য। চাল ভাজায় পানি, লবণ, মরিচ মেখে প্লেটে প্রস্তুত তাদের ইফতার। এমন দৃশ্য তিস্তাপাড়ের প্রায় সব পরিবারেই।
জানা যায়, নদীভাঙন ও বন্যায় ঘরবাড়ি ও ভিটেমাটি হারিয়ে তিস্তাপাড়ের এসব মানুষের আশ্রয় মিলেছে বালুচরে অথবা সড়কের ওপর। রোজার শরীর নিয়ে দিনভর পরিশ্রম করে আয় করেন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, যা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। পবিত্র রমজানে সংসারের জন্য ভালো কিছু খাবার ও পরিধেয় জোগানোর সামর্থ্য নেই তাদের। পরিবারের শিশুরা বাহারি সব ইফতার প্রত্যাশা করলেও দরিদ্রতার কারণে একমাত্র ইফতার অনুসঙ্গ ‘চালভাজা’ খেতে হয় তাদের। অনেকে চালভাজা দিয়ে ইফতার করার পর ভাত খায়। কিন্তু তরকারি বলতে ডাল, আলুভর্তা, শাকসবজি। তিস্তা পাড়ের লোকজনের সাহরিও হয় একইভাবে। লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলায় তিস্তাপাড়ে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ বসবাস করেন। এর প্রায় ৩০ শতাংশ রকমারি ইফতার ও ভালো তরকারি খেতে পারেন।
লালমনিরহাটের কালমাটি, খুনিয়াগাছ, আনন্দবাজার এলাকার তিস্তা নদীর তীরবর্তী চরের কৃষি শ্রমিক আবু তালেব, ফাতেমা বেগম, আকলিমা বেগম, আফিদা বেগম, সাহেদা বেগমসহ কয়েকজন জানান, তারা প্রতি রমজানে চালভাজা দিয়ে ইফতার করে থাকেন। শহরের মানুষদের মতো রকমারি ইফতার ও ভালো তরকারি দিয়ে সাহরি তাদের কপালে কখনোই জোটে না।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০