হুমায়ূন আহমেদ মূলত লেখালেখি করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় নিজেই বলেছেন, লেখা ছাড়া আর কিছু পারেন না তিনি। সেটিকেই তাই পেশা হিসেবে নিয়েছিলেন। এরকম আরও অনেকে আছেন, যারা লেখালেখিকে সম্বল করে এগিয়ে গেছেন। তাদের সংখ্যা কিন্তু খুবই কম! অধিকাংশেরই ৩০০ কপি বই বিক্রি হতে যেখানে বছরের পর বছর লেগে যায়, তারা তো আর শুধু লিখে দিন যাপন করতে পারেন না। সেটি সম্ভবও নয়। সুতরাং লেখালেখিকে পেশা হিসেবে নেওয়া কষ্টকর এদেশে! তারপরও অনেকে লেখালেখিকে পেশা হিসেবে নিতে আগ্রহী। কিন্তু অভিযোগ আছে, সেটি সম্ভব হচ্ছে না প্রকাশকদের কারণে। প্রকাশকদেরও আছে পাল্টা বক্তব্য। প্রকাশক-লেখকের পাল্টাপাল্টি অভিযোগে ঘুরপাক খাচ্ছে প্রকাশনা শিল্পে পেশাদারিত্বের বিষয়টি।
বই প্রকাশের আগে লেখকের সঙ্গে প্রকাশকের চুক্তি হওয়া জরুরি। প্রকাশক ও লেখক উভয়ই চুক্তি মেনে চলবেন এটি আশা করা হয়। অনেক ক্ষেত্রেই এ-ধরনের চুক্তি হয় না। যেখানে চুক্তি হয়, সেখানে ওটা মানা হয় না। চুক্তি না মানার অভিযোগটা সাধারণত লেখকের পক্ষ থেকেই আসে। অনেক ক্ষেত্রে লেখককে বলতে শোনা যায় প্রকাশক ঠিকমতো রয়্যালটি দেন না, প্রয়োজনানুসারে ইচ্ছাকৃতভাবে কম বা বেশি বই ছাপান; কিন্তু লেখককে জানান না, বছরে কয়টি বই বিক্রি হলো, তাও লেখককে জানানো হয় না ইত্যাদি। আমাদের প্রকাশনা-শিল্প এমন অদ্ভুত নিয়মে চলে যে, এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক নিয়মকানুনের সাযুজ্য মেলে না। লেখককে এখানে টাকা দিয়ে বই প্রকাশ করতে বা টাকা না দিলে বিক্রির ব্যবস্থা করে দিতে হয়। প্রকাশকরা এসব ক্ষেত্রে লেখকদের সঙ্গে পেশাদার আচরণ করেন না। লেখক বই লিখবেন, বাদবাকি কাজ হওয়ার কথা প্রকাশকের; কিন্তু বিক্রির দায়িত্বও যদি লেখককে নিতে হয়, তাহলে প্রকাশকের দায়িত্ব কী? বই বিক্রি হয় না বলে যে কথা প্রচলিত আছে, এখন সে অবস্থার অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। এও ঠিক, অনেক লেখকের বই বিক্রি হয় না একেবারেই। সেখানেও প্রশ্নটা ঘুরেফিরে প্রকাশকের কাছে আসে। প্রকাশকরা কি টাকার বিনিময়ে পাণ্ডুলিপি ছেপে দেবেন? পাণ্ডুলিপি বাছাইয়ের ব্যবস্থা থাকবে না তাদের? লেখকদের নিয়েও আছে প্রকাশকদের অভিযোগ। তবে বড় কোনো অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো কঠিন। লেখক যদি মানহীন পাণ্ডুলিপি টাকার বিনিময়ে ছাপাতে চান, তাহলে প্রকাশকেরই উচিত সেটি প্রকাশ না করা। বই প্রকাশে প্রকাশকেরও নিজস্ব মান বজায় রাখতে হবে। বাংলাদেশে প্রকাশনা এখনও শিল্প হয়ে উঠতে পারেনি; কিন্তু এর সম্ভাবনা বিদ্যমান। একটি সুস্থ প্রকাশনা শিল্প গড়ে ওঠার জন্য প্রকাশকদেরই জোরালোভাবে এগিয়ে আসতে হবে। প্রকাশনা ব্যবসায় পেশাদারিত্ব না থাকলে প্রকাশক হয়তো সাময়িকভাবে লাভবান হবেন, কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হবেন পাঠক ও লেখক। এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব প্রকাশক চাইলেও এড়াতে পারবেন না।
Add Comment