আয়-ব্যয়ে অসংগতি: প্রতিবছরই মুনাফা কমছে মেঘনা পেট্রোলিয়ামের

পলাশ শরিফ ও সাইফুল আলম: আয়-ব্যয়ে অসংগতির কারণে গত তিন বছর ধরে রাষ্ট্রায়ত্ত মেঘনা পেট্রোলিয়ামের মুনাফা কমছে। তিন বছর আগে ২০১২-১৩ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালন ব্যয় ছিল ৬২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, যা সর্বশেষ অর্থবছরে ৯৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ তিন বছরে আয় কমলেও পরিচালন ব্যয় ৩৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা বেড়েছে। কোম্পানির সর্বশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, জ্বালানি তেলের বাজারের মন্দাবস্থা, বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে ফার্নেস অয়েল বিক্রি কমে যাওয়া, বিপিসির মাধ্যমে কনডেনসেট কেনার কারণে পণ্যের মার্জিন কমে যাওয়া ও ব্যাংকের সুদের হার কমে যাওয়ার বিপরীতে সরকারি নির্দেশনা মেনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি ও গ্র্যাচুয়িটি সংরক্ষণ করতে গিয়েই দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে প্রতিষ্ঠানটি।

আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, তিন বছর আগে ২০১২-১৩ অর্থবছরে মেঘনা পেট্রোলিয়ামের মোট আয় ছিল ১৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকা, যা পরের অর্থবছরে কমে দাঁড়িয়েছিল ১৪৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকায়। সর্বশেষ সমাপ্ত অর্থবছরে আয় আরও এক কোটি ৯৪ লাখ কমে ১৪২ কোটি দুই লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে আয় কমার বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালন ব্যয় বেড়েছে। তিন বছর আগে ২০১৩-১৩ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালন ব্যয় ছিল ৬২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, যা সর্বশেষ অর্থবছরে ৯৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ তিন বছরে আয়-মুনাফা কমলেও পরিচালন ব্যয় ৩৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা বেড়েছে। আর সর্বশেষ এক বছরেই এ ব্যয় বেড়েছে ১৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। বেতন-ভাতা বাড়ায় এ ব্যয় বেড়ে গেছে।

আয়-ব্যয়ে অসংগতির কারণে সর্বশেষ অর্থবছরে মেঘনা পেট্রোলিয়ামের পরিচালন মুনাফা ৩৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা কমে ৪৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর জের ধরে প্রতিষ্ঠানটির কর-পরবর্তী মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১৮৫ কোটি দুই লাখ টাকায়, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা কম। একই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) এক টাকা ৭০ পয়সা কমেছে। তবে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর শেষে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) ১৩ টাকা ৬০ পয়সা বেড়েছে।  অন্যদিকে তিন বছরের হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির কর-পরবর্তী মুনাফা ৫০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা কমেছে।

আয়-ব্যয়ে অসংগতির প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনীম জানিয়েছেন, বিক্রি, বিতরণ ও প্রশাসনিক খরচ এবং কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য গ্র্যাচুয়িটি সঞ্চিতি বৃদ্ধির কারণে কর-পরবর্তী মুনাফা কমেছে।  এছাড়া বিভিন্ন গ্যাসফিল্ডে উৎপাদিত পণ্য (কনডেনসেট) বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) মাধ্যমে কেনা হচ্ছে। আগে গ্যাসফিল্ডগুলোর কাছ থেকে সরাসরি কেনার সুযোগ ছিল। ক্রয় প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনার কারণে মেঘনা পেট্রোলিয়ামের পণ্যেও মার্জিন কমেছে। অন্যদিকে তিন বছরের হিসাবে দেশে পেট্রোলিয়ামজাত জ্বালানি বিক্রি এক লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন কমেছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মোট ৫৩ লাখ ৮৯ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি বিক্রি হয়েছিল। আর সর্বশেষ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মোট ৫২ কোটি ৫৬ লাখ টন পেট্রোলিয়ামজাত জ্বালানি ব্যবহার করা হয়েছে। তবে জ্বালানি তেলের ব্যবহার কমলেও দেশের বাজারে বেশ ভালো অবস্থানে আছে মেঘনা পেট্রোলিয়াম। সর্বশেষ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১৮ লাখ মেট্রিক টন সরবরাহ করেছে। এ কারণে জেট ফুয়েল বাদ দিয়ে অন্য পেট্রোলিয়াম পণ্যের বাজারের ৩৭ দশমিক ১৯ শতাংশ মেঘনা পেট্রোলিয়ামের দখলে ছিল। সেই হিসাবে পেট্রোলিয়ামজাত পণ্যের বাজারে শীর্ষে ছিল প্রতিষ্ঠানটি। তবে এ সময়ে দেশে পেট্রোলিয়ামজাত জ্বালানির ব্যবহার এক কোটি ২২ লাখ টন কমেছে। এর প্রভাব মেঘনা পেট্রোলিয়ামের বিক্রির ওপর পড়েছে। সর্বশেষ অর্থবছরে ডিজেল বিক্রি এক লাখ ৯ টন বাড়লেও ফার্নেস অয়েল বিক্রি প্রায় ৯৭ লাখ টন কমেছে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় ফার্নেস অয়েল বিদেশ থেকে সরাসরি আমদানির কারণেই ফার্নেস অয়েল বিক্রি কমেছে।

উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ১০ কোটি ৮২ লাখ শেয়ার রয়েছে। এর মধ্যে ৫৮ দশমিক ৬৭ শতাংশের মালিক বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এছাড়া ৩০ দশমিক ৭০ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও ১০ দশমিক ৬৩ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীর হাতে রয়েছে। সম্পদমূল্যের তুলনায় শেয়ারদর প্রায় পৌনে তিনগুণ বেশি হওয়ার কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কিছুটা বেড়েছে। গত দেড় বছরে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা মেঘনা পেট্রোলিয়ামের প্রায় পাঁচ শতাংশ শেয়ার কিনেছেন। এদিকে আয়-মুনাফা কমলেও লভ্যাংশ দেওয়ার হার বাড়ছে। সর্বশেষ অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে। আর সর্বশেষ কার্যদিবসে ডিএসইতে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি শেয়ার সর্বশেষ ২০৯ টাকা ৬০ পয়সা দরে লেনদেন হয়েছে।

 

 

 

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০