পাখি পালনে বদলে গেল যে জীবন…

পাখির কিচিরমিচির শুনতে সবারই ভালো লাগে। নানা প্রজাতির বাহারি রঙের বিদেশি পাখির কিচিরমিচির সেই ভালোলাগা আরও বাড়িয়ে দেয়। তাই অনেকে শখের বসে পাখি পোষেন। সেই শখ আবার রূপ নেয় ব্যবসায়ও। এ দুয়ে মিলে সফল করে তোলে অনেক মানুষকে। বদলে দেয় তাদের জীবন। আজ এমন একজনের কথা বলছি। শখের বসে পাখি পালনের পাশাপাশি এর বাণিজ্যিকভাবে সফলতা অর্জন করে আলোড়ন সৃষ্টি করছেন বগুড়া সদর উপজেলার ঠনঠনিয়া ব্যাংকপাড়ার (আহলে হাদিস মসজিদ লেন) মামুন উল হাসান (শাওন)।
বিভিন্ন জাতের পাখির জন্য বাড়ির ছাদে গড়ে তুলেছেন অনেক ঘর। একেকটি ঘরে পৃথকভাবে পালন করেন বাজরিকা, প্রিন্স, ককাটিয়েল, জাভা, অস্ট্রেলিয়ান রিংনেকড ঘুঘু ও ফ্যান্সি জাতের কবুতর। তার এ সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেকে পাখি পালনের উদ্যোগ নিচ্ছেন।
শাওন পেশায় একজন উন্নয়নকর্মী। পেশাগত কাজের ফাঁকে অবসর সময়টুকু ব্যয় করেন এ খামারে। খামারের নাম দিয়েছেন ‘শৈলী এভিয়ান ফার্ম’।
প্রায় এক যুগ আগে মেয়ের আবদার পূরণের জন্য দুই জোড়া বাজরিকা ও দুই জোড়া প্রিন্স পালন শুরু করেন। মাসখানেক পর পাখিগুলো কয়েক জোড়া বাচ্চা দিলে তার আগ্রহ বেড়ে যায়। এরপর ধীরে ধীরে তিনি পাখির সংখ্যা বাড়াতে শুরু করেন। পাখি থেকে ভালোই আয়-রোজগার শুরু হয় তার। পরে বাবার ইচ্ছায় কয়েকটি ফ্যান্সি কবুতর সংগ্রহ করে পালন করতে থাকেন। এখন তার খামারে রয়েছে ইয়েলো স্যাকশন প্রিস্ট, লাক্কা, আমেরিকান লাক্কা, বিভিন্ন রঙের জ্যাকোবিন, শর্টফেস, সিরাজি, দেশি লোটন, ইন্ডিয়ান লোটন, চাইনিজ আউল, বোখারা, মাল্টেস, বিভিন্ন রকম মুক্কি (কালো, চকলেট, ইয়েলো, চকলেট বার ও ব্লুবার), বিভিন্ন ধরনের বোম্বাই (কালো, ব্লুবার ও আমেরিকান), আমেরিকান শো-কিং, রান্টসহ আরও বিভিন্ন জাতের প্রায় ১০০ জোড়া ফ্যান্সি কবুতর।
খামারের দেখভালের জন্য সার্বক্ষণিক একজন কর্মচারী রয়েছেন। খরচ বাদ দিয়ে বছরে তিন থেকে চার লাখ টাকা আয় হয় শাওনের। তাই পাখির সংখ্যা বাড়ানোর জন্য পরিকল্পনা রয়েছে তার। বাজরিকা ও প্রিন্স নামের পাখিই তার আয়ের বড় উৎস। তিনি বলেন, পাখির জাত, বয়স ও রঙের ওপর পাখির দাম ওঠানামা করে। যেমন বাজরিকার বয়স ও মিউটেশনভেদে ৪৫০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। ককাটিয়েল বয়স ও মিউটেশনভেদে দুই হাজার ২০০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। জাভা বয়সভেদে ৯০০ থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা। প্রিন্স বয়স ও মিউটেশনভেদে ৪৫০ থেকে সাত হাজার টাকা। লাভবার্ডস বয়স ও মিউটেশনভেদে দুই হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। কবুতর বয়স ও মিউটেশনভেদে এক হাজার ৫০০ থেকে ২০ হাজার টাকা। ঘুঘু বয়স ও মিউটেশনভেদে এক হাজার থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা।
শাওন অনলাইনে ‘শৈলী এভিয়ান ফার্ম’ নামে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে তার খামারে উৎপাদিত পাখি ও কবুতর বিক্রি করে থাকেন। অনলাইন বার্ড মার্কেটিংয়ে এ বিষয়ে মানুষের আস্থাও অর্জন করেছেন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে তার খামারে পাখি কিনতে আসেন অনেক পাখিপ্রেমী ও ব্যবসায়ী।
শাওন বলেন, দেশে উপার্জনের অনেক পথ রয়েছে। এ কারণে বিদেশে পাড়ি জমাইনি। স্বল্প পুঁজি দিয়েই ফ্যান্সি কবুতর ও শৌখিন পাখির খামার গড়ে তোলা সম্ভব।
বাংলাদেশ উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পাখি ও কবুতর পালনের ওপর সিএলপি কোর্স সম্পন্ন করেছেন শাওন। তার পরামর্শ ও কারিগরি সহযোগিতায় ঢাকা ও বগুড়াসহ সারা দেশে ৩৫টির বেশি পাখির খামার গড়ে উঠেছে। অনলাইনে নতুন পাখিপালকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকেন তিনি। পাখিপ্রেমী শাওনের দেখাদেখি শহরের অনেক যুবকই বিদেশি পাখি পালনের দিকে ঝুঁকছেন।

পারভীন লুনা

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০