শিশুর দাঁত ওঠা

শিশুর দাঁত ওঠে কোন বয়সে? ওঠার লক্ষণ কী? এ সময় শিশুরা কেমন আচরণ করে? এসব বিষয় নিয়ে অভিভাবকদের যেমন বিশেষ আবেগ অনুভূতির কাজ করে, তেমনি দুশ্চিন্তাও হয়। সাধারণত শিশুদের চার থেকে ছয় মাস বয়সে দুধদাঁত গজানোর প্রথম চিহ্ন দেখা যায়। সর্বপ্রথম নিচের পাটিতে জোড়া দাঁত গজায়। তাদের সব দাঁত গজাতে প্রায় দুই বছর লাগে। দাঁত গজানোর সময় শিশুদের মধ্যে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়।

খিটখিটে হয়
দাঁত গজানো শুরু হলে শিশুরা একটু খিটখিটে হতে পারে। অনেক শিশু ঘন ঘন ঘ্যান ঘ্যান করতে পারে। ক্ষুধা কমে যেতে পারে এ সময়ে। অন্য সময়ের তুলনায় বেশিক্ষণ ঘুমিয়ে থাকতে পারে। অবস্থা গুরুতর হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই উত্তম।

রাতে যন্ত্রণা করে
শিশুদের দাঁত উঠার সময় রাতে বেশি যন্ত্রণা করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুরা সাধারণত সারাদিন খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকে বলে ব্যথা অতটা অনুভব করতে পারে না। রাতে তারা ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তখন ব্যথা অনুভূত হয়।

লালা পড়তে থাকে
দাঁত গজানোর সময় শিশুদের সারাক্ষণ লালা পড়তে থাকে। এতে মুখ ও থুতনির চামড়াগুলোতে জ্বালা হয়। এমনকি এ জন্য ঘা-ও হতে পারে। এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে শিশুর মুখ ও থুতনিতে ভ্যাসলিন বা পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করতে পারেন। লালা পরিষ্কার করার সময় মোলায়েম কাপড় ব্যবহার করুন। বেশি ঘষাঘষি করলে জ্বালা যন্ত্রণা বেড়ে যেতে পারে কিংবা ঘা শুকাতে সময় নিতে পারে।

জ্বর
শিশুর দাঁত গজানোর সময় জ্বরও হতে পারে। শরীরের তাপমাত্রা ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। তাপমাত্রা যদি ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে যায়, তাহলে সেটা ইনফেকশনের লক্ষণ। তাই অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

যত্ন
শিশুর প্রথম দাঁত গজানোর পর তার যত্ন নেওয়াটা খুব জরুরি। ছয় মাসের শিশুর দাঁত একটা মোলায়েম কাপড় দিয়ে দিনে এক থেকে দুবার পরিষ্কার করা দরকার। এক বছর বয়স থেকে সামান্য নন ফ্লোরাইড টুথপেস্ট ব্যবহার করতে পারেন। এ সময়ে একজন পেডিয়াট্রিক ডেন্টিস্টের পরামর্শ মেনে চলা ভালো।

সাবধানতা

দাঁত ওঠার সময় শিশুদের মাড়ি কিট কিট করে বা যন্ত্রণা করে। তাই হাতের কাছে যে কোনো কিছু পেলেই সে কামড়ায়। এ কারণে অনেক অভিভাবক শিশুর মুখে চুষনি দিয়ে রাখেন। এ ধরনের চুষনি বা খেলনা মুখে দিলে সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাছাড়া শিশুর একটি বদ-অভ্যাসও গড়ে ওঠে, যা পরে ছাড়াতে বেগ পেতে হয়। জীবাণুর সংক্রমণ এড়াতে শিশুর হাত ও খেলনা সবসময় পরিষ্কার রাখুন। দাঁত ওঠার সময় শিশুর মুখ থেকে লালা ঝরলে তা কিছুক্ষণ পরপর পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে দিন। কারণ এতে মুখে র‌্যাশ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। দুধদাঁত উঠতে দেরি হলে অর্থাৎ ছয়-সাত মাসের বেশি সময় পার হয়ে যাওয়ার পরও যদি দাঁত না উঠে, তাহলে চিন্তিত না হয়ে বিশেষজ্ঞ ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শমতো এক্স-রে করিয়ে নিতে হবে। তাতে বোঝা যাবে দুধদাঁত বের হতে কত দিন বাকি আছে অথবা কোনো সমস্যা রয়েছে কি না।
শিশুদের যখন দাঁত গজায়, তখন তাদের ব্যথা অনুভব হয়। অনেকে কান্নাকাটি করে। তাই শিশুর মা পেইন রিলিভার দিয়ে শিশুর ব্যথা কমাতে চায়। কিন্তু ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ না করে পেইন রিলিভার দেওয়া ঠিক নয়।

কামরুন নাহার ঊষা

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০