তারল্য সংকটে ব্যাংকগুলো কীভাবে সরকারকে ঋণ দিবে

বাজেটে জিডিপির পাঁচ শতাংশ ঘাটতি রয়েছে, অর্থাৎ ঘাটতির পরিমাণ এক লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। ঘাটতি পূরণে ব্যাংক থেকে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা নেওয়া হবে। প্রশ্ন হচ্ছে যেখানে ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট চলছে, সেখানে কীভাবে ব্যাংক এত টাকা দেবে? যদি সরকার এ পরিমাণ টাকা নেয়, সেক্ষেত্রে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের জন্য টাকা দেবে কোথা থেকে? গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর মুরশিদ কুলি খান।
ড. মোহাম্মদ হেলাল বলেন, বাজেট ঘোষণার পর প্রতিবছরই বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা হয়। আসলে এ আলোচনা-সমালোচনার ৯৯ ভাগই অসার অর্থাৎ এ আলোচনার কোনো প্রয়োজন নেই। আর প্রতিবছরই ঘাটতি বাজেট ঘোষণা করা হয়। কথা হচ্ছে, যেখানে জিডিপির গ্রোথ আট শতাংশের বেশি, সেখানে ঘাটতি থাকলে সমস্যা কোথায়? কর সবার জন্য বোঝা। কর অনেকেই দিতে চান না। তাহলে দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়, সেগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন হবে? ওইসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নের জন্য জনগণের ওপর কর ধার্য করা হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, জনগণের ওপর কতটা কর ধার্য সহনশীল হবে, যেখানে নেতিবাচক প্রভাব কম পড়বে। আমাদের প্রত্যক্ষ কর সংগ্রহের হার ২৩ শতাংশ। আর পরোক্ষ সংগ্রহের হার ৭০ শতাংশ। পরোক্ষ কর হচ্ছে যারা আয়ের অনুপাতে বেশি কর দেন। কর আদায়ের পর যদি সেটি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়, তখন কর দেওয়া জনগণের জন্য সার্থক হবে।
তিনি আরও বলেন, এ বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য বেশ কয়েকটি বিষয় ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য পুঁজিবাজার থেকে টাকা নিতে হবে। এক্ষেত্রে শুধু ঘোষণ করলেই হবে না, তা সঠিকভাবে বাস্তবায়নও করতে হবে।
মুরশিদ কুলি খান বলেন, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেটে পুঁজিবাজার-সংক্রান্ত যে বিষয়গুলো ঘোষণা করা হয়েছে, ডিএসই ও সিএসই তাতে সাধুবাধ জানিয়েছে। ডিএসই ও সিএসই ছাড়াও বিভিন্ন মহল ধন্যবাদ জানিয়েছে। তবে কেউ কেউ কিছু বিষয় নিয়ে সমলোচনা করেছে।
দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে ব্যাংক। বর্তমানে ব্যাংক খাতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে, তার মধ্যে খেলাপি ঋণ নিয়ে বেশি সমস্যা রয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে ব্যাংক কমিশন গঠন করা জরুরি। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ঋণখেলাপিদের প্রতি কঠোর হবেন। এ বাজেটে জিডিপির পাঁচ শতাংশ ঘাটতি রয়েছে; অর্থাৎ ঘাটতির পরিমাণ এক লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। ঘাটতি পূরণে ব্যাংক থেকে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা নেওয়া হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, যেখানে ব্যাংকগুলোয় তারল্য সংকট চলছে, সেখানে কীভাবে ব্যাংক এত টাকা দেবে? যদি সরকার এ পরিমাণ টাকা নেয়, সেক্ষেত্রে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের জন্য টাকা দেবে কোথা থেকে? এমনিতেই বেসরকারি খাতে কয়েক বছর ধরে তেমন প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না। এ বিষয়ে সরকারকে বিবেচনা করতে হবে। আমি মনে করি, বেসরকারি খাতে বেশি ঋণ দেওয়া হোক। যাতে করে বেশি অর্থনৈতিক জোনসহ ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করা হয়। এতে কর্মসংস্থান বাড়বে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। অন্যদিকে যেখানে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো সরকারকে লাভ দেওয়ার কথা, সেখানে উল্টো সরকার তাদের ঘাটতি পূরণে জনগণের করের টাকা দিচ্ছে। এটি আসলে কোনো দেশে নেই। এক্ষেত্রে সরকারকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০