উন্নত দেশ গড়তে কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে হবে

দেশের অর্থনীতির সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। নিন্ম, মধ্য আয়ের মানুষের আয় বেড়েছে। ধনীদের আয় আরও বেশি বেড়েছে। আয়ের অনেক ব্যবধান থাকলেও কোনো শ্রেণির আয় কিন্তু কমেনি। যাদের কর দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে তাদের কর দিতে হবে। অর্থাৎ ব্যক্তি বা কোম্পানিকে করের আওতায় আনতে হবে। কারণ দেশের ট্যাক্স জিডিপি রেশিও অন্য দেশের তুলনায় অনেক কম। মাত্র ১০ দশমিক দুই শতাংশ। উন্নত দেশ গড়তে হলে সরকারের আয় বাড়াতে হবে অর্থাৎ ট্যাক্স জিডিপির হার বাড়াতে হবে। তবে এখানে বড় সমস্যা হচ্ছে, যারা কর দেয় তাদের ওপর করের হার আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এখানে সরকারের নজরদারি করতে হবে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান, শ্যামল ইকুইটি লিমিটেডের এমডি মো. সাজেদুল ইসলাম শামীম এবং কোম্পানি আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার এমএ মাসুম।
ড. মিজানুর রহমান বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতির ফান্ডামেন্টাল বিষয়গুলো বিবেচনা করলে দেখা যায়, দেশের অর্থনীতির সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। অর্থাৎ নিন্ম, মধ্য আয়ের মানুষদের আয় বেড়েছে। ধনীদের আয় আরও বেশি বেড়েছে। তবে এদের মধ্যে আয়ের অনেক ব্যবধান রয়েছে কিন্তু আয় কারও কমেনি। যাদের কর দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে তাদের কর দিতে হবে। অর্থাৎ ব্যক্তি বা কোম্পানিকে করের আওয়াতায় আনতে হবে। কারণ দেশের ট্যাক্স জিডিপি রেশিও অন্য দেশের তুলনায় অনেক কম। মাত্র ১০ দশমিক দুই শতাংশ। উন্নত দেশ গড়তে হলে সরকারের আয় বাড়াতে হবে অর্থাৎ ট্যাক্স জিডিপির হার বাড়াতে হবে। তবে এখানে বড় সমস্যা হচ্ছে, যারা কর দেয় তাদের ওপর করের হার আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়। তবে এখানে সরকারকে বেশি নজরদারি করতে হবে। যারা কর ফাঁকি দিচ্ছে বা যাদের কর দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে কিন্তু করের আওতায় নেই তাদের করের আওতায় আনতে হবে।
তিনি আরও বলেন, গত ১০ বছরে দেশের অর্থনীতিতে যে উন্নয়ন হয়েছে সে তুলনায় পুঁজিবাজারের উন্নয়ন নগণ্য। বর্তমানে দেশের ক্যাপিটাল মার্কেটের টার্নওভার জিডিপির ১০ শতাংশের নিচে। আসলে এটা কোনো উন্নয়নের সূচক হতে পারে না। যেখানে ক্যাপিটাল মার্কেটে টার্নওভার জিডিপির ১০ শতাংশের নিচে সেখানে কোনোভাবেই বলা যাবে না পুঁজিবাজার যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো। অর্থনৈতিক উন্নয়ন অনুসারে, যদি পুঁজিবাজারের টার্নওভার জিডিপির ৫০ থেকে ১০০ শতাংশ থাকত সেক্ষেত্রে বলা যেত বাজার স্থিতিশীল বা উন্নয়নের দিকে যাচ্ছে।
মো. সাজেদুল ইসলাম শামীম বলেন, পুঁজিবাজার উন্নয়নের সঙ্গে ট্যাক্সের বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কারণ পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত কোম্পানিগুলো করের আওতায় রয়েছে। ওইসব কোম্পানি নিয়মিত ৩৫ শতাংশ কর দিয়ে আসছে। কিন্তু আবার তাদের ওপর কর ধার্য করা হচ্ছে। এতে পুঁজিবাজার উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি হবে। বাজার উন্নয়ন করতে হলে ভালো কোম্পানি আনতে হবে এবং তাদের প্রণোদনা দিতে হবে। সরকারের প্রায় ৫০টি ভালো প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারে অন্তর্ভুক্ত করলে বাজারের গতিবিধি পরিবর্তন হয়ে যেত কিন্তু সরকার সেটি করছে না। সরকার ইচ্ছে করলে যে কোনো সময় বাজারে প্রতিষ্ঠানগুলো অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। আসলে এখানে সরকারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। এখানে শুধু বিনিয়োগকারীদের দোষ দিলে হবে না।
তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজারে এ পর্যন্ত অনেক সংস্কার হয়েছে এটা অস্বীকর করা যাবে না। প্রয়োজনে আরও সংস্কার করা হবে বা হচ্ছে। পুঁজিবাজার আগের চেয়ে অনেকটা স্বচ্ছ এবং সুশাসনও বেড়েছে। তবে বর্তমানে পুঁজিবাজার নিন্মগতিতে রয়েছে। কারণ তারল্য সংকট। মানি মার্কেট সঙ্গে পুঁজিবাজার ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যদি মানি মার্কেট কোনো সমস্যা হয় এর প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়ে।
এমএ মাসুম বলেন, ট্যাক্স হচ্ছে দুই প্রকার। একটি হচ্ছে প্রত্যক্ষ অন্যটি হচ্ছে পরোক্ষ কর। উন্নয়নশীল দেশে পরোক্ষ করটি কম আর প্রত্যক্ষ করটি বেশি থাকে। আমাদের দেশে প্রত্যক্ষ করটি বাড়াতে হবে। যদি প্রত্যক্ষ করের আওতা বাড়ানো যায় সেক্ষেত্রে কর আয়ের পরিমাণ বাড়বে। ইতোমধ্যে পার্লামেন্টে ৩০০ জন খেলাপির নাম প্রকাশ করা হয়েছে। এ ৩০০ খেলাপির কাছে প্রায় ৫১ হাজার কোটি টাকা রয়েছে। যদি দেশের মোট জনসংখ্যা বিবেচনা করি, মুষ্টিমেয় কয়েকজন অসাধু ব্যক্তির কারসাজির কারণে দেশের আর্থিক খাতে এ অবস্থা বিরাজ করছে। এখন এ জায়গাটি যেভাবেই হোক জবাবদিহিতায় আনতে হবে।

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০