সময়ের সঙ্গে পাল্টে গেছে জাদুঘরের প্রদর্শনীর বিষয়বস্তু। সংগৃহীত নিদর্শন প্রদর্শনে লেগেছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। পৃথিবীর ১০ হরর
জাদুঘর নিয়ে লিখেছেন মুতাসিম বিল্লাহ নাসির
হাউস অন দ্য রক:
যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের ডজভিলে ও স্প্রিংগ্রিন শহরের মাঝামাঝি স্থানে জাদুঘরটির অবস্থান। শুরুতে আমেরিকার বিশ শতকের শহুরে মানুষের বিনোদনের জন্য এটি ব্যবহƒত হতো। এখানে ২০০ ফুটের অধিক উচ্চতার এক জলদানবের মডেলও রয়েছে। পরবর্তী সময় এটি গড়ে ওঠে সংগ্রহশালারূপে। সর্বপ্রথম ১৯৫৯ সালে খুলে দেওয়া হয়। জাদুঘরের জায়গাটি অন্ধকার। পরিত্যক্তও বটে। জায়গাটি যদিও ভৌতিক নয়, তেমন কোনো ভয়ঙ্কর শব্দও নেই; কিন্তু এখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করলে গা ছমছম করে উঠবে। ভাবছেন কেন! তাহলে কল্পনা করুন আপনি এমন একটি স্থানে দাঁড়িয়ে যেখানে সব জরাজীর্ণ, পাবেন না কোনো গান কিংবা সুর আছে কেবল সুরসংগীতের বাদ্যযন্ত্র। সে সঙ্গে কানে ভেসে আসবে বিদঘুটে শব্দ, মনে হতে পারে নরক থেকে ভেসে আসা কোনো শব্দ নিনাদ। কখনও সেখানে গেলে নিজেই আবিষ্কার করবেন এখানে বিবরণের চেয়ে অভিজ্ঞতা বড্ড বাজে ও ভয়ঙ্কর।
গ্লোর সাইকিয়াটিক:
যেখানে গেলে হারিয়ে যাবেন ইতিহাসের সঙ্গে। ইলেকট্রো শক ও লোবোটোমাইস চিকিৎসার পদ্ধতির মতো কিছু বিস্ময়কর বিষয়ের দেখা মেলবে। এমন দৃশ্য কে-না দেখতে চায়! কিন্তু শক খাওয়ার মতো তিক্ত অভিজ্ঞতা যার আছে, তার জন্য গ্লোর সাইকিয়াটিক মিউজিয়াম ভয়ঙ্কর। সেখানে যদি আপনি ভয়ঙ্কর গ্যালারি খুঁজে বের করতে চান তাহলে ‘ওউফুল থিংস’ পিপল হ্যাভ শ্যালোড (ভয়ঙ্কর কিছু জিনিস যা মানুষ গিলে খাচ্ছে) প্রদর্শনীটি দেখতে হবে। সে সঙ্গে কিন্তু প্রাচীন চিকিৎসা গ্যালারি দেখতে ভুল করা চলবে না। এখানে দেখতে পাবেন রক্তক্ষরণ রোগীদের জন্য ব্যবহƒত সরঞ্জামাদি এবং চিত্তাকর্ষক ডায়ারোমা, যা ধাপে ধাপে আপনাকে নিয়ে যাবে সাইকোসার্জিক্যাল অপারেশনে।
নিউ হ্যাভেন ভেন্ট্রিলোকোয়েস্ট:
ইন ফোর্ট মিচেল, কেনটাকিতে একটি জাদুঘর আছে, যেটি মূলত পৃথিবী থেকে চলে যাওয়া মানুষের ডামি এবং ডামিগুলো তাদের প্রকৃত স্বরেই কথা বলে। এ থিয়েটারের প্রতিটি আসন ডামি মানুষের জন্য সংরক্ষিত। মূলত আপনি যখন সেখানে ভ্রমণ করতে যাবেন সেখানে আপনাকে মঞ্চের সামনে দাঁড়াতে হবে। কেননা, সেখানে কোনো আলাদা কক্ষ নেই। যদিও অধিকাংশ মানুষ অটোম্যানোফোবিয়াতে (কৃত্রিমভাবে তৈরি করা রোবটের আওয়াজ) ভোগে না, কিন্তু বায়ুরোধক বদ্ধকুঠুরির এ স্থানে সত্যিই ভয়ঙ্করভাবে একে প্রদর্শন করা হয়েছে। যদি আপনি কেবল চার্লস লি রয় এর ভয়ঙ্কর চুকি (ঈযঁপশু) কার্টুনের কথাই ভাবেন তাহলে ব্যাপারটি সহজেই বুঝতে পারবেন।
ক্যাটাকম্বস অব পালেরমো:
এটাকে জাদুঘর বলাটাও ঠিক হবে না। এ পালেরমো সমাধি যেন মৃত্যু জাদুঘর। শুরুতে এটি ছিল একধরনের সন্ন্যাসীদের আশ্রমের স্থান। যেখানে সন্ন্যাসী ও স্থানীয় শত শত মানুষের শবদেহ রাখা হতো। এসব মানুষকে যে কাপড়ে মৃত্যু-পরবর্তী যজ্ঞ পালন করা হয়েছিল সে কাপড়েই দেয়ালে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। ১৬ শতকের শেষ দিকের লাশগুলো এখানে রাখা হয়েছে। এখানে শুষ্ক পরিবেশ আর শীতল বায়ু শবদেহগুলো ভালোভাবেই সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে। ফলে দেখলে মনে হবে কিছুক্ষণ আগে বোধ হয় মানুষগুলো ঘুমিয়ে গেছে। তবে সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়ালে মনে হবে শবদেহগুলো যে কোনো মুহূর্তে আপনাকে আক্রমণ করে বসবে।
লন্ডন ডানজিয়ন:
লন্ডন অন্ধকূপ (ডানজিওন) খুবই বিখ্যাত। এ অর্থে এটি ভীতিকর যে, কোনো আগন্তুক এখানে আসলে মধ্যযুগের যে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দিয়ে মেরে ফেলা হতো সে দৃশ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।
লমব্রোসো মিউজিয়াম অব ক্রিমিন্যাল অ্যানথ্রোপোলজি সিজার লমব্রোসো ইতালিতে অপরাধবিজ্ঞান স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এটা জাদুঘরের বিশেষত্ব নয়। বরং এটি যে স্থানে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে সে জায়গাটি অনেক ভয়ানক। অনেক ভয়ঙ্কর অপরাধের চিত্র এখানে সংগ্রহ করা হয়। মানুষকে বধ করতে ব্যবহƒত অস্ত্রশস্ত্রও সংগৃহীত আছে এখানে। এমনকি লমব্রোসোর নিজের মাথাও এখানে ফর্মালহাইড বোতলে সংরক্ষিত আছে। আপনি যদি অপরাধের ধরন বুঝতে চান কিংবা সরাসরি মাথার খুলি, দেহাবশেষ কিংবা কোনো বীভৎস দৃশ্য দেখতে চান তাহলে এখান থেকে ঘুরে আসতে পারেন।
মাদাম তুসো:
এ তালিকায় সবগুলোর চেয়ে মাদাম তুসো হয়তো বেশি পরিচিত। বিখ্যাত লন্ডনে মাদাম তুসো বিখ্যাত হওয়ার অন্যতম কারণ এখানের বিপুল পরিমাণ মোমের নিদর্শনের জন্য (ওয়াক্স ফিগার)। কিন্তু জাদুঘরের বিখ্যাত হওয়ার শুরুতে ছিল গা ছমছমে ভাব। ফ্রান্স বিপ্লবের পরবর্তী সময় মাদাম তুসো তার সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করে। সে চেয়েছিল গিলোটিনে কাটা অভিযুক্ত মানুষদের ছিন্ন মস্তকে মোমের প্রলেপ দিতে। জায়গাটি সম্ভবত ফ্রান্সের সর্বশেষ রাজার কারণে বেশি বিখ্যাত। এখানে ছিন্ন হওয়া সব মাথাগুলো প্রদর্শন করা হয়। ঐতিহাসিক যেসব ভয়ঙ্কর বীভৎস দৃশ্যে আছে তার অন্যতম প্রদর্শনী করা হয় এখানে। মস্তক ছিন্নকারী যন্ত্রসহ মৃত মস্তকগুলো এখানে দেখা যাবে। এ প্রবেশের সময় নিজে যে রকম স্বাভাবিক ছিলেন দৃশ্য দেখে তেমনটি আর থাকতে পারবেন না। মাদাম তুসোর প্রদর্শনকে আরও ভীতিকর করতে দর্শকদের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে হরর অভিনেতাদেরও।
মিউজিয়াম অব অ্যানাটমি:
হনার ফ্রাগোন্যার্ড অ্যানাটমি বিভাগের একজন অধ্যাপক ছিলেন। ১৭৯৪ সাল থেকে অ্যানাটমি মিউজিয়াম গড়ে তোলার উদ্দেশে তিনি ডেডবডি সংগ্রহ শুরু করেন। তার পরিকল্পনা ছিল বাড়িতে একটি মৃতদেহের একটি রাক্ষুসে সংগ্রহশালা তৈরির। মৃতদেহ সংগ্রহ করে তিনি নিজেই সেগুলোর চামড়া তুলে সেগুলো সংগ্রহ করে ফেলতেন। এ বিশাল সংগ্রহশালায় আছে পশুপাখি, শিশু, মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হওয়া আসামি এবং মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত মানুষদের মৃত্যু-পরবর্তী মাথার খুলি। সুতরাং বুঝতেই পারছেন কেমন ভীতিকর এ জাদুঘর! তবে চাইলেই আপনি প্রবেশ করতে পারবেন না এখানে। প্যারিসের এ জাদুঘরে প্রবেশ করতে গেলে পূর্ব থেকেই অনুমতি নিয়ে রাখতে হবে আপনাকে।
মাটার মিউজিয়াম:
মাটার মিউজিয়াম বিখ্যাত হওয়ার পেছনে আছে বিপুল পরিমাণ মাথার খুলি, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের হাড়, একজন স্ত্রী লোকের মোমের তৈরি মডেল, যাতে কপাল থেকে বের হয়ে আসা শিং দেখা যায়। আছে উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে বড় মানুষের কোলন। যেখানে ৪০ শতাংশ পুপ রয়েছে। এ জাদুঘরটির আরেকটি পরিচয় হলো এখানে প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড এর অপসারণ করা টিউমার সংরক্ষিত আছে। আরও দেখতে পাবেন শ্যামদেশীয় যুগল চ্যাং এবং ইঞ্জিনিয়ার বাঙ্কার অপসারিত লিভার। আব্রাহাম লিংকনের গুপ্তহত্যাকারী জন উইকস বুথের অপারেশন হওয়া শরীরের অংশ। যদিও এ বিবরণ আপনাকে তেমন কোনো ভীতিকর সংবাদ দিচ্ছে না। কিন্তু নিশ্চিতভাবে বলা যায়, সরাসরি এ দৃশ্য দেখার শেষে আপনার রঙিন স্বপ্নের লাগাম সেখানেই নিঃশেষ হয়ে যাবে।
দ্য পারগেটরি মিউজিয়াম:
ক্যাথলিক মতবাদ অনুসারে একজন ব্যক্তি যিনি তার আত্মার সামান্য পাপ নিয়ে মারা গেলে, আগুনে জ্বলে যন্ত্রণাভোগের মাধ্যমে শুদ্ধ হয়ে বেহেশতে প্রবেশ করবে। রোমের প্রতি জেলার ভক্তিমূলক হার্টের চার্চে, বেদির পাশ ঘিরে একটা ছোট জাদুঘর আছে, যা পারগেটরি বা যন্ত্রণাভোগ জাদুঘর নামে পরিচিত। এ স্থানকে এমনভাবে প্রদর্শন করা হয়েছে যা সত্যিই ভয়ানক! যেখানে দেখানো হয়েছে আত্ম-যন্ত্রণাভোগের পর পৃথিবীর জীবন আঁধারে ফিরে এসেছে। টেবিলের ওপর সাজানো প্রদর্শনীতে আরও দেখানো হয়েছে আগুনে ঝলসে দেওয়ার চিহ্নসহ পারলৌকিক অঙ্কিত হাতের ছাপ। কাপড়ের ওপর আঙুলে পোড়ানো হাতের ছাপ। সব ঐশ্বরিক আইটেম, যেন পুরো মানবজাতির হাতের ছাপ বইটির পৃষ্ঠাগুলোর মধ্যে গভীরভাবে ঝলসিত। হাতের ছাপগুলো একজন বড় মাপের সন্ন্যাসী যিনি আগুনে ঝলসে গেছেন তার অজানা পাপের কারণে।
Add Comment