রেশম শিল্পকে উৎসাহ জোগানো হোক

যদি রাজশাহীর সপুরা এলাকার সিল্ক বা রেশম থেকে কাপড় উৎপাদনকারী দোকানগুলোতে গিয়ে দেশের রেশম সুতা থেকে বানানো কাপড় খোঁজেন, আপনাকে হতাশ হতে হবে। একেবারেই যে পাওয়া যাবে না তা নয়; কিন্তু আকর্ষণীয় যেসব কাপড় হাতে ধরবেন, সেগুলোর অধিকাংশই দেশের নয়। মূলত চীন থেকে আসা রেশম সুতার ওপর এখন সিল্কের দোকানগুলো চলছে। বিক্রেতারা তা স্বীকার করেই বিক্রি করছেন যেমন, ক্রেতারাও সেটি মেনে নিচ্ছেন। অথচ রাজশাহীতেই রয়েছে রেশম গবেষণার জন্য একাধিক প্রতিষ্ঠান। রেশম চাষের জন্য জায়গাজমিও কম নেই। রাজশাহীর বাইরে চাঁপাইনবাবগঞ্জও রেশম চাষের জন্য বিখ্যাত। সীমান্তবর্তী এ দুই জেলার পার্শ্ববর্তী ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদহ ও মুর্শিদাবাদে ঠিকই রেশম চাষ হচ্ছে লাভজনকভাবে। শৌখিন মানুষের কাছে রেশমের তৈরি জিনিসের কদরই আলাদা। এককালে বাংলাদেশের রেশমের নামডাক ছিল; কিন্তু কালের আবর্তে রেশম এখন এক হাহাকারের নাম।

সম্প্রতি রেশম খাতের প্রাণ ফেরাতে বাংলাদেশ রেশম উৎপাদন ও রফতানিকারক সমিতি এবং সংশ্লিষ্ট অন্যরা চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে এক হাজার একর জমি নির্দিষ্ট করে ওই অঞ্চলকে রেশম শিল্পের জন্য ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। আমরা তাদের সঙ্গে একমত পোষণ করি। ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পটি এখনও যে কোনো দিক দিয়ে সম্ভাবনাময়। এখানে যেমন রয়েছে গবেষণার পর্যাপ্ত সুবিধা, তেমনি গাছ ও পোকা চাষের যথাযথ আবহাওয়া ও জমি। প্রয়োজন কেবল পৃষ্ঠপোষকতার। দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি রেশম চাষ হয় চীনে, তারপর ভারতে। বাংলাদেশও এগিয়ে যেতে পারে। একসময় বাংলাদেশের রেশম সুতার বেশ নামডাক ছিল; কিন্তু অযতেœ সেই সুদিন আর নেই। রেশম শিল্পকে কয়েকজন ব্যবসায়ী ধরে রেখেছেন এখনও। তাদের আন্তরিকতার মর্যাদা দিয়ে সরকারের উচিত হবে রেশম শিল্পকে প্রণোদনা জোগানোর যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া।
রেশম শিল্পকে উৎসাহ দিলে শুধু যে রেশমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা উপকৃত হবেন তা নয়, এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে আরও বেশকিছু পেশা। এগুলোর মধ্যে তুঁত চারার চাষ, গুটি উৎপাদন, পাওয়ার লুম, হ্যান্ড লুম, পেইন্টিং, ডায়িং ইত্যাদি। এগুলোর প্রতিটি তখন আলাদাভাবে বিকশিত হবে। যে কোনো শিল্পের জন্য এটি সত্যি। কোনো শিল্প কখনো একা বিকশিত হয় না, সঙ্গে আরও কিছু উপখাত নিয়ে কাজটি সম্পন্ন হয়। রেশম শিল্প বিকশিত হলে একদিকে তা যেমন শিল্পটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার উপকারে আসবে, তেমনি দেশের ঐতিহ্য ধরে রাখার কাজও সম্ভব হবে। রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আবহাওয়া তুঁত চাষের উপযোগী। পাশাপাশি এ এলাকায় রেশম গবেষণা সংস্থা ছাড়াও রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা ও প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগ। তাদের সঙ্গে নিয়েও রেশম উন্নয়নে গবেষণা চলতে পারে। সব মিলিয়ে রেশম শিল্প বিকাশের সব উপাদানই এখানে বিদ্যমান। প্রয়োজন কেবল সরকারি উৎসাহ ও প্রণোদনার।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০