নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯২১ সালের আজকের এই দিনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। সে অনুযায়ী প্রতিবছর ১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালন করে আসছে কর্তৃপক্ষ। দেশের প্রাচীন এ বিশ্ববিদ্যালয়টির ৯৮তম জন্মদিন আজ। দিবসটি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীসহ দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। এছাড়া এ উপলক্ষে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ভবনে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। এছাড়া তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথে সুসজ্জিত তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। দিবসটি উদ্যাপন উপলক্ষে আজ সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত থাকবে। তবে হল, বিভাগ, ইনস্টিটিউট ও অন্যান্য অফিস যথারীতি খোলা থাকবে।
দিবসটি উদ্যাপনের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে সবাইকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, এ বছরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস ‘মুজিববর্ষ ২০২০’ এবং ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উৎসব ২০২১’-এর আগমনী বার্তা। এ দুটি বেঞ্চমার্ককে সামনে রেখে শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাস্তবসম্মত ও বিজ্ঞানভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, শিক্ষা ও গবেষণার উৎকর্ষসাধনের লক্ষ্যে একজন ইমেরিটাস অধ্যাপকের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটির পরামর্শ ও সুপারিশের ভিত্তিতে নতুন কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে। বিশ্ব র্যাংকিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান সুসংহত করতে এ কমিটি ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে তিনি গণমাধ্যমের সমর্থন ও সহযোগিতা চান।
সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীনসহ সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে আজ দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল ১০টার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রশাসনিক ভবনসংলগ্ন মলে জমায়েত, জাতীয় পতাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও হলসমূহের পতাকা উত্তোলন, পায়রা ওড়ানো, কেক কাটা, সংগীত বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন এবং উপাচার্যের নেতৃত্বে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাসহ ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে গমন।
উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান সকাল ১০টায় প্রশাসনিক ভবনসংলগ্ন মল-চত্বরে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে দিনব্যাপী এ কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। সকাল ১১টায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে ‘গুণগত শিক্ষা, প্রতিবন্ধকতা ও উত্তরণ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ইংরেজি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এএফএম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে দুর্লভ পাণ্ডুলিপি প্রদর্শন করা হবে। চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে বেলা ৩টায় অনুষদ প্রাঙ্গণে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। বায়োমেডিক্যাল ফিজিক্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের উদ্যোগে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত কার্জন হল ভবনের উত্তর-পূর্ব বারান্দায় উদ্ভাবিত চিকিৎসা প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি প্রদর্শন করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) উদ্যোগে সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় সুইমিং পুলে সাঁতার প্রতিযোগিতা, বেলা সাড়ে ১২টায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র থেকে সাইকেল শোভাযাত্রা এবং বিকাল ৩টায় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি ও ডাকসুর মধ্যে প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অনুষদ, বিভাগ, ইনস্টিটিউট ও হল দিনব্যাপী নিজ নিজ কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি উদ্যাপন করবে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে কেক কাটা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা, রচনা প্রতিযোগিতা, বৃক্ষরোপণ, মিষ্টি বিতরণ ও আলোকসজ্জা।
জানা যায়, নানা ঘটনাপ্রবাহের পর ১৯২১ সালের ১ জুলাই ছাত্রছাত্রীদের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বার উš§ুক্ত হয়। সে সময় ঢাকার সবচেয়ে অভিজাত ও সৌন্দর্যমণ্ডিত রমনা এলাকায় প্রায় ৬০০ একর জমির ওপর তিনটি অনুষদ ও ১২টি বিভাগ নিয়ে একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এর যাত্রা শুরু হয়। প্রথম শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন বিভাগে মোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৮৭৭ জন এবং শিক্ষকসংখ্যা ছিল মাত্র ৬০ জন।
১৯৫২ সালের ভাষা-আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১-এর স্বাধীনতাযুদ্ধ ছাড়াও এ দেশের ইতিহাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। বর্তমানে ১৩টি অনুষদ, ৮৩টি বিভাগ, ১২টি ইনস্টিটিউট ও ৫৬টি গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এছাড়া ছাত্রছাত্রীদের থাকার জন্য রয়েছে ২০টি আবাসিক হল ও তিনটি হোস্টেল। প্রায় ৩৭ হাজার ছাত্রছাত্রীর জন্য শিক্ষক রয়েছেন এক হাজার ৯৯২ জন।
