নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল খায়েরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল কয়েকটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ইতোমধ্যে এসব অভিযোগের প্রমাণ হাতে রয়েছে, এমন ইঙ্গিত দিয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। যদিও এর আগে বেশ কয়েক দফায় তাকে অভিযুক্ত করে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রায় ৪০ মিনিট জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুদকের পরিচালক জায়েদ হোসেন খান সাংবাদিকদের জানান, গত বছরের পদ্মা অয়েলের এমডির বিরুদ্ধে নতুন কয়েকটি অভিযোগ আমাদের হাতে আসে। সেসব অভিযোগগুলোর মধ্যে খুলনা দৌলতপুরে অফিস নির্মাণে অধিক ব্যয়, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে রি-ফুয়েলিং টার্মিনাল নির্মাণে দুর্নীতি, টেন্ডার ছাড়া জ্বালানি তেল পরিবহনে ঠিকাদার ও জনবল নিয়োগে দুর্নীতিসহ রয়েছে আরও অভিযোগ।
তিনি বলেন, এসব অভিযোগের অনুসন্ধানের জন্যই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এর আগে অভিযুক্ত বিষয়গুলো নিয়ে আমরা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছি। আমরা লিখিতভাবে তাকে দুদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠাতাম। তবে বিষয়টি জেনে তিনি নিজেই এসে আমাদের সঙ্গে আজ দেখা করেছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘দুদক হাতে প্রাপ্ত তথ্য থেকে সন্দেহ করছে যে, তার অভিযোগের সত্যতা রয়েছে। অভিযোগের প্রমাণও মিলতে পারে। তবে যেহেতু এখনও কোনো ফাইনাল রিপোর্ট হাতে পাইনি, সেহেতু নিশ্চিত করে বলা হচ্ছে না।’
জানা গেছে, ইতোমধ্যে তার অভিযোগের সপক্ষে অনেক প্রমাণ দুদকের তদন্ত দল সংগ্রহ করেছে। সেগুলো নিয়েই পর্যালোচনা করছে দুদক। এর আগেও এই এমডির বিরুদ্ধে পদ্মা অয়েলে নিয়োগ জালিয়াতির তিনটি মামলা রয়েছে। এছাড়া তার অবৈধ সম্পদ নিয়ে তদন্ত করেছে দুদক।
এ বিষয়ে জায়েদ হোসেন বলেন, সেসব আমার নিয়ন্ত্রণাধীন মামলা নয়। ফলে এর আপডেট জানা নেই। সম্পদের হিসাব নিয়ে আগে যে অনুসন্ধান হয়েছে, নিষ্পত্তি না হলে তা সম্পৃক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
একাধিকবার তার বিরুদ্ধে অভিযোগের পরও তাকে স্বপদে বহাল রাখা হয়। তাকে নিয়ে কোনো চাপ আছে কি নাÑএমন প্রশ্নের জবাবে এ কর্মকর্তা বলেন, না আমরা আমাদের মতো কাজ করে যাচ্ছি।
এদিকে জিজ্ঞাসাবাদের পরই দ্রুত দুদক থেকে বেরিয়ে যান আবুল খায়ের। তিনি সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নেন জবাব দেননি।
তবে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সব কাজ নিয়ম মেনেই করেছেন বলে দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনে তথ্যাদি সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এসব মামলায় প্রায় পাঁচ থেকে সাত কোটি টাকার হেরফের করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, এর আগেও ঘুষ-দুর্নীতির অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে এ এমডির নামে। ২০১৩ সালে দুদকেই তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়। সেসব ঘটনায় পদ্মা অয়েলে বিভাগীয় শাস্তি প্রদানের জন্য সুপারিশ করে গেছে কয়েকবার। এমনকি সচিব, প্রতিমন্ত্রীসহ অনেকে তাকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তবু এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছেন এ কর্মকর্তা। এর আগেও ওইসব মামলায় পদ্মায় নিয়োগে দুর্নীতি প্রমাণ হওয়ায় দুদক আবুল খায়েরের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে। দুদকের এ নির্দেশও মানা হয়নি। এছাড়া ২০১৪ সালে এই এমডির অবৈধ সম্পদের খোঁজে মাঠে নামে দুদক।
Add Comment