দর্শকরা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন, বিদেশি চ্যানেলের বাংলাদেশি ফিডে দেশি পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার হচ্ছিল গত কয়েক বছর ধরে। তাদের এও জানার কথা, কার্যক্রমটি প্রচলিত আইন পরিপন্থী। একে ঘিরে বিব্রতকর ঘটনাও ঘটেছে একাধিকবার। সাম্প্রতিক একটি উদাহরণ টানা যায়। গত ১৩ নভেম্বর রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে মিডিয়া ইউনিটির এক সমাবেশে বিজ্ঞাপন জালিয়াতচক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ‘নব্য সাংস্কৃতিক রাজাকার’ বলে মন্তব্য করেন স্থানীয় আরেক টিভি চ্যানেলের চেয়ারম্যান। এর জের ধরে ২৯ নভেম্বর দুই বেসরকারি টিভি চ্যানেল প্রধানের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ দাবি করে মানহানি মামলা দায়ের হয়। বিব্রতকর এসব ঘটনা আরও নেতিবাচক দিকে গড়াতে পারতো। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে শুক্রবার রাত থেকে বাংলাদেশে ডাউনলিংক করা বিদেশি টেলিভিশনে দেশি বিজ্ঞাপন সম্প্রচার বন্ধ থাকার খবর মিললো। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান আরও জানান, ‘এখন সবাই একমত হয়েছি যে, বিদেশি টেলিভিশনে আর দেশি বিজ্ঞাপন সম্প্রচার হবে না। ফলে সৃষ্ট ভুল বোঝাবুঝির কারণে যে মামলা হয়েছিল, সেটিও প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ তার এ বক্তব্যকে স্বাগত জানাতে চাইবেন সবাই। একই সঙ্গে অনেকে হয়তো বিস্মিত হবেন, এমন সিদ্ধান্ত কেন আরও আগে নেওয়া হলো না?
সেক্ষেত্রে গাফলতি কার, তা নির্ণয় করা জটিল। নিঃসন্দেহে এক্ষেত্রে প্রাথমিক দায়িত্ব ছিল তথ্য মন্ত্রণালয়ের। যথাসময়ে তারা সেটি করতে সক্ষম হননি বলেই প্রতীয়মান। বাকি থাকে শক্তিশালী সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স (অ্যাটকো)। অ্যাটকো কিন্তু বিষয়টি তথ্য মন্ত্রণালয়ের গোচরে আনতে পারতো একেবারে শুরু থেকে। সংগঠনটি উদ্যোগী হয়ে তেমন কিছু করেছে বলে জানা যায় না। তার কারণ খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করেন কেউ কেউ। ব্যবসায় পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট দ্বন্দ্ব অস্বাভাবিক কিছু নয়। তা নিজেদের মধ্যে মীমাংসা করে নেওয়াই ভালো। তবে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব নিরসনে অপারগতা ও মুনাফা নিয়ে সৃষ্ট বিবাদের নিরসন এক নয়। এখানে আসলে কোনটি ঘটেছিল, তা চিহ্নিত করা দরকার। একই সঙ্গে জোর দেওয়া প্রয়োজন দ্রুত টেলিভিশন রেটিংস পয়েন্ট বা টিআরপি নীতিমালা সংশোধনের ওপর। এমনিতেই আমাদের টিভি চ্যানেলগুলো ভিনদেশি চ্যানেলের সঙ্গে প্রতিযোগিতার সম্মুখীন। বাংলাদেশের বিশাল ও বিকাশমান বাজার দখলই যে এর মূল কারণ, তা বুঝতে কষ্ট হওয়ার কথা নয়। বিশেষত প্রতিবেশী এক দেশের বাংলা সিরিয়ালগুলো ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে দেশে। রক্ষণশীল নীতি নিয়ে এগুলো ঠেকানো অত্যন্ত কঠিন। তাছাড়া মুক্তবাজারের এ বিশ্বে নিজ দর্শকদের চোখে ঠুলি পরানো কিংবা অন্যের চ্যানেলকে শায়েস্তা করাও কার্যকর উপায় নয়। বরং বিষয়টিকে দেখা উচিত স্থানীয় বাজারে প্রতিযোগিতা চ্যালেঞ্জ হিসেবে। আমাদের দুর্ভাগ্য, ওই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্থানীয় চ্যানেলগুলো কীভাবে তাদের সক্ষমতা বাড়াবেÑসেদিকে দৃষ্টি না দিয়ে তারা ব্যস্ত নিজেদের মধ্যে বিবাদে। এ অবস্থা কাম্য হতে পারে না। এমন পরিস্থিতিতে নীতিমালা দিয়ে স্থানীয় চ্যানেলগুলোর প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানো যাবে কি না, জানা নেই। তবে কেউ কেউ চাইবেন, তাতে যেন অন্তত অন্তর্কলহটা কমে।
Add Comment