সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের একটি নির্দিষ্ট সীমা রয়েছে এবং এখানে কারা বিনিয়োগ করতে পারবে তাও সুনির্দিষ্টভাবে বলা আছে। কিন্তু এখানে যাদের বিনিয়োগ করার কথা তারা করেছে না বরং অন্য কেউ করেছে। অর্থাৎ যেখানে ব্যক্তির করার কথা সেখানে কোনো প্রতিষ্ঠান করছে কিনা। আমার জানা মতে, এখানে অনেক প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করেছে। এ খাতে সরকারের নজরদারি বাড়াতে হবে। ব্যাংক এবং পুঁজিবাজারে তারল্য সংকটের কারণ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
আহমেদ রশীদ লালীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক এম শাহজাহান মিনা এবং ইআরএফের সাবেক সভাপতি সুলতান মাহমুদ বাদল।
অধ্যাপক এম শাহজাহান মিনা বলেন, এখন মানুষ সঞ্চয়পত্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনে দেখা গেছে, যারা নির্বাচন করেছেন তাদের বেশিরভাগ হলফনামায় প্রচুর অর্থ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ দেখিয়েছেন। কারণ সঞ্চয়পত্রে সুদহার বেশি। যখন প্রথম সঞ্চয়পত্র বিক্রি শুরু হয় তখন এর মূল উদ্দেশ্য ছিল যারা পেনশনধারী, যারা নির্দিষ্ট পরিমাণ আয় করতে চান অথবা যাদের অন্য কোনোভাবে আয় করার সুযোগ নেই তাদের জন্য এটি করা। এখানে বিনিয়োগের একটি নির্দিষ্ট সীমাও ছিল। পরিবার সঞ্চয়পত্রে ৪৫ লাখ টাকা, পেনশনধারীদের জন্য ৫০ লাখ এবং অন্যরা ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবে। কিন্তু নির্দিষ্ট পরিমাণ থাকা সত্ত্বেও অনেকে বেশি টাকা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে। এখানে সরকারকে ভালোভাবে নজরদারি করতে হবে। কারণ সরকার এ সঞ্চয়পত্র থেকে যে ঋণ নিচ্ছে তার জন্য প্রচুর সুদ দিতে হচ্ছে।
সুলতান মাহমুদ বাদল বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনের পর ও পাস হওয়ার আগ পর্যন্ত কিছু বিষয় এখনও সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়নি সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে। বিশেষ করে লভ্যাংশের ওপর ১০ শতাংশ বা ৫০ শতাংশ ট্যাক্স কেটে রাখা হবে। এখন কীভাবে কত পরিমাণ টাকা কেটে রাখা হচ্ছে সে বিষয়গুলো ৯০ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারী জানে না বলে আমার মনে হয়। আবার পুঁজিবাজারে যে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছিল তার মধ্যে দুটি বিষয় নিয়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু পরে সে দুটি বিষয় সাধারণ বিনিয়োগকারীর স্বার্থে সহনীয় পর্যায়ে আনা হয়েছে। এ বিষয়গুলো সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জানাতে হবে। এ দায়িত্ব বিএসইসির। তবে ডিএসই-সিএসই বিষয়গুলো এড়িয়ে যেতে পারে না। গত অর্থবছরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৯০ শতাংশ ব্যাংক বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ হিসেবে দিয়েছে। কিন্তু প্রতিটি ব্যাংকের প্রফিট বেড়েছে। প্রফিট বাড়াও সত্ত্বেও ব্যাংকগুলো বিনিয়োগকারীদের তেমন কিছু দিচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের একটি নির্দিষ্ট সীমা রয়েছে এবং এখানে কারা বিনিয়োগ করবে তাও সুনির্দিষ্টভাবে বলা আছে। এখন কথা হচ্ছে সঞ্চয়পত্রের এজেন্সি বা যারা দায়িত্বে রয়েছে তাদের কঠোর হতে হবে। কারণ যাদের বিনিয়োগ করার কথা তারা করেছে না। অন্য কেউ বিনিয়োগ করেছে। অর্থাৎ যেখানে ব্যক্তির করার কথা সেখানে কোনো প্রতিষ্ঠান করছে কি না? আমার জানা মতে, এখানে অনেক প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করেছে। আবার আমরা বলি ব্যাংকে তারল্য সংকট রয়েছে এবং পুঁজিবাজারেও তারল্য সংকট রয়েছে। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের কারণে ব্যাংক ও পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট দেখা যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিটি বাজেটে কোন খাত থেকে কী পরিমাণ অর্থ নিতে হবে তার বর্ণনা দেওয়া থাকে। অর্থাৎ বাজেট ঘাটতি পূরণে সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক থেকে কী পরিমাণ অর্থ নিতে হবে সেটা বলা থাকে। কিন্তু গত কয়েক বছরের বাজেটে দেখা যাচ্ছে, ব্যাংকের চেয়ে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার বেশি অর্থ নিচ্ছে। আগে এ বিষয়টি ছিল না। আসলে এখানে সরকারের উদাসীনতা, অনেকটা ধীরে চলো নীতি বা না দেখার প্রবণতা কাজ করছে।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ