পদ্মার চরে বাদাম চাষে সাফল্য

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পদ্মার চরে চীনাবাদাম চাষ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন চাষিরা। উপজেলার রামকৃষ্ণপুর, চিলমারী, মরিচা ও ফিলিপনগর ইউনিয়নের পদ্মা নদীর বিস্তীর্ণ চরে সোনালি ফসল বাদাম চাষ করে অর্থ ঘরে তুলছেন তারা। অর্থকরী এ ফসল চাষ করে সংসারে সচ্ছলতা এনেছেন অনেক দরিদ্র চাষি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বাদাম চাষে আরও বেশি আগ্রহী হবেন তারা। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মতে, চলতি মৌসুমে চরাঞ্চলে বাদাম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৪১৫ হেক্টর। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৭৫০ হেক্টর বাদাম চাষ করা হয়েছে। বিঘাপ্রতি প্রায় পাঁচ মণ হারে ফলন হয়েছে।

উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীরচর গ্রামের বাদামচাষি সাইদুর রহমান বলেন, জেগে ওঠা পদ্মা নদীর বুকজুড়ে একসময় ধু-ধু বালুচর লক্ষ করা যেত, যা চরবাসীদের কোনো কাজেই আসত না। কিন্তু কয়েক বছর আগে স্বল্প পরিসরে চাষিরা চীনা বাদামের চাষ শুরু করেন। সাফল্য পাওয়ায় ক্রমান্বয়ে এর চাষ বাড়ছে। বর্তমানে বাজারে মণপ্রতি প্রায় দুই হাজার ৫০০ টাকায় বাদাম বিক্রি হচ্ছে। খরচ বাদ দিয়ে লাভ হওয়ায় দরিদ্র চাষিদের সংসারে সুদিন ফিরেছে।
কৃষি বিভাগের সহায়তা পেলে চরজুড়ে অর্থকরী ফসল বাদাম চাষ করে আরও বেশি সাফষ্য পাওয়া সম্ভব হবে। একই গ্রামের বাদামচাষি শরিফুল ইসলাম বলেন, পদ্মার চরে অনেক জমি অনাবাদি পড়ে থাকে। এসব জমি বাদাম চাষের আওতায় আনা গেলে একদিকে যেমন চরের দরিদ্র কৃষকদের মুখে হাসি ফোটানো সম্ভব হবে, অন্যদিকে অর্থকরী ফসল বাদাম চাষ করে সচ্ছলতা আসবে।
রামকৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষক আবদুর রাজ্জাক বলেন, এবার সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় বাদামের ফলনে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। তবু এবার এক বিঘা বাদাম চাষ করে প্রায় ছয় মণ ফলন পেয়েছি। তিনি আরও বলেন, অন্য বছরের তুলনায় এবার দাম ভালো থাকায় চাষিরা বাদাম চাষে ঝুঁকেছেন। একই গ্রামের জালাল উদ্দিন বলেন, প্রতিবছর বর্ষার পানিতে চরাঞ্চলের ক্ষেত তলিয়ে যায়। এজন্য একটু আগেভাগেই বাদাম রোপণ করা হয়, যাতে পানি আসার আগে বাদাম ক্ষেত থেকে তোলা যায়। সাধারণত আষাঢ়ের মধ্যেই বাদাম তোলা শেষ হয়ে থাকে। বিঘাপ্রতি বাদাম আবাদ করতে সার, বীজ ও শ্রমিকসহ প্রায় ছয় থেকে সাত হাজার টাকা খরচ হয়।
বাদাম ক্ষেতে কাজ করে দিনমজুররাও খুশি। তারাও কৃষকের বাদাম ক্ষেতে গাছ থেকে বাদাম ঝরিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা আয় করছেন। এমনটাই বলেন আয়েসা খাতুন নামে এক নারী শ্রমিক।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. সজীব আল মারুফ বলেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও প্রায় ২০০ কৃষককে প্রণোদনা দেওয়ায় এ বছর বাদাম চাষ বেড়েছে। তবে বৃষ্টিপাতের কারণে এবার বাদামের ফলন কিছুটা কম হয়েছে। বর্তমানে বাজারে মণপ্রতি দুই হাজার ৪০০ থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকায় বাদাম বিক্রি হচ্ছে। ফলন কিছুটা কম হলেও ভালো দাম পাওয়ায় চাষিরা খুশি।

কুদরৃত দা সবুজ, কুদ্দিয়া

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০