একনেক থেকে প্রকল্প ফেরত

নতুন ডেমু কেনার প্রকল্প বাতিল করলেন প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর কমলাপুর স্টেশন থেকে কালিয়াকৈর হাইটেক পার্কের মধ্যে চলাচলের জন্য ছয় সেট (ছয় ইউনিটে এক সেট) ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট (ডেমু) ট্রেন কেনার উদ্যোগ নিয়েছিল রেলওয়ে। এ প্রকল্পের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪৫১ কোটি ৭১ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। তবে নতুন করে ডেমু না কিনে অন্য ট্রেন কেনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা থেকে প্রকল্পটি ফেরত দেওয়া হয়েছে।
গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সময় একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভায় মোট আটটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।
একনেক সভা শেষে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব নূরুল আমিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ডেমু ট্রেন বাংলাদেশের উপযোগী নয়। নতুন করে আর ডেমু কেনা যাবে না। যেগুলো আছে, সেগুলো মেরামত করতে হবে। ডেমুর পরিবর্তে অন্য ট্রেন কিনতে হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে ৬৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০ সেট ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট বা ডেমু ট্রেন কেনা হয়। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সমস্যা দেখা দিচ্ছে দুদিকে ইঞ্জিনযুক্ত চীনের তৈরি এ বিশেষ ট্রেনে। পাঁচ বছর না যেতেই সাত সেট ডেমু পুরোপুরি অকেজো হয়ে পড়েছে। বাকি ট্রেনগুলোও ঘন ঘন বিকল হচ্ছে। তবে ডেমু মেরামতের ওয়ার্কশপ ও দক্ষ জনবল না থাকায় এসব ট্রেন নিয়ে নিয়মিতই বিপাকে পড়তে হচ্ছে রেলওয়েকে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডেমু ট্রেনগুলোর মধ্যে বেশিরভাগেরই মেরামত প্রয়োজন। অথচ বাংলাদেশ রেলওয়ের কারখানাগুলোর মধ্যে কোনো ইউনিটেই ডেমু ট্রেন মেরামতের মতো অবকাঠামো নেই। এ কারণে ওইসব ডেমু মেরামতে ৩০৮ কোটি ২২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ব্যয়ে কারখানা ও ওয়ার্কশপ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
জানা যায়, ২০১১ সালে ৪২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০ সেট ডেমু কেনার চুক্তি হয় চীনের তাংশান রেলওয়ে ভেহিকল কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে। এর সঙ্গে শুল্ক, কর, কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, বিদেশ ভ্রমণ ও ভাতা সংযুক্ত করে সব মিলিয়ে প্রকল্প ব্যয় দাঁড়ায় ৬৫৪ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে দেশে আসে ট্রেনগুলো। সে বছর ২৪ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমলাপুর স্টেশনে এ ট্রেন উদ্বোধন করেন। বছরে ১০০ কোটি টাকা মুনাফা হবে এ যুক্তিতে ট্রেনগুলো কেনা হলেও এখন রেলের লোকসানের বোঝাই ভারী করছে ডেমু।
চুক্তি অনুযায়ী, দুই বছর বিকল হলে ডেমুগুলো মেরামত করে দিত বিক্রেতা কোম্পানিটি। তবে এরপর থেকে ট্রেনগুলোর মেরামত নিয়ে জটিলতায় মুখে পড়তে হচ্ছে রেলওয়েকে। ডেমুর ইঞ্জিনসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি থাকে বগির নিচে। তাই এগুলো মেরামতে বিশেষ ধরনের অবকাঠামো দরকার, যা রেলওয়ের নেই। আবার প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ না পাওয়া ও দক্ষ জনবল না থাকায়ও ট্রেনগুলো মেরামতে নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তাই রেলওয়ের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ডেমু। এ কারণেই নতুন করে আর কোনো ডেমু না কেনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গতকাল একনেক সভায় ঢাকা থেকে কালিয়াকৈর পর্যন্ত বিরতিহীন ট্রেন চালুরও নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ তুলে ধরে নূরুল আমিন বলেন, ‘ঢাকা থেকে সরাসরি কালিয়াকৈর একটা ট্রেন যাবে। এই ব্যবস্থা রাখতে হবে। বাকিগুলো যে কোনো স্টেশন ধরবে।’ যাচাই-বাছাই করে এ ধরনের একটি প্রকল্প চালুর প্রস্তাব করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে গতকাল একনেক সভায় দেশের প্রতিটি উপজেলায় মিনি (ছোট) স্টেডিয়াম নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য ছয়টি উপজেলায় স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রকল্পও ফেরত দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান দেশের বাইরে থাকায় তার পক্ষে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মো. নূরুল আমিন একনেক সভা-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, আজকের একনেক সভায় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘নির্বাচিত ছয়টি উপজেলায় স্টেডিয়াম নির্মাণ’ প্রকল্প একনেক সভায় উত্থাপন করা হয়। তবে সংশোধনী আনতে বলে তা অনুমোদন দেওয়া হয়নি একনেক সভায়।
প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নির্দেশনা তুলে ধরে পরিকল্পনা কমিশনের সচিব নূরুল আমিন বলেন, ‘প্রত্যেক উপজেলায় এখন থেকে একটা মিনি স্টেডিয়াম হবে। সেটা কোনো কলেজ, মাদরাসা, স্কুলের মাঠে হতে পারবে না। একটা খোলা জায়গায় হতে হবে। প্রয়োজনে উপজেলা থেকে একটু দূরে হলেও চলবে। এর একদিকে গ্যালারি থাকবে। বাকি তিনদিক উš§ুক্ত থাকবে। পাবলিক যেন দেখতে পারে, কী হচ্ছে এ মাঠের ভেতরে।
উত্থাপিত প্রকল্পটি বাতিলের বিষয়টি তুলে ধরে সচিব বলেন, ‘সে জন্য ছয়টি স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে। ভবিষ্যতে যতগুলো আসবে, সেগুলো মিনি স্টেডিয়াম হিসেবে প্রস্তাব আনতে হবে।’
উল্লেখ্য, গতকালের একনেক সভায় প্রায় পাঁচ হাজার ১৪২ কোটি ছয় লাখ টাকা ব্যয় সংবলিত আটটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। এর মধ্যে সরকার দেবে চার হাজার ১২৯ কোটি ৮১ লাখ এবং বিদেশি ঋণ প্রায় এক হাজার ১২ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
গতকাল একনেক সভায় উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মো. আবদুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ. ম রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও কর্মকর্তারা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০