২০১০ সালের পর থেকে যেসব কোম্পানি বাজারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ওইসব কোম্পানির বেশিরভাগের শেয়ারদর এক বছরের মাথায় অভিহিত মূল্যের নিচে নেমে গেছে। এমনও কোম্পানি বাজারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে যে কোম্পানির অফিস নেই। আবার যে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকা ওই কোম্পানি বাজার থেকে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে। আসলে এ বিষয়গুলো সঠিকভাবে অনুসন্ধান করে আইনের আওতায় এনে বিচার করা হচ্ছে না। ওই কোম্পানি আনার ক্ষেত্রে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের জবাবদিহিতায় আনলে বাজারের এ রকম অবস্থা হবে না। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইআরএফের সাবেক সভাপতি সুলতান মাহমুদ এবং এএফপির ব্যুরো চিফ শফিকুল আলম।
সুলতান বলেন, দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং পুঁজিবাজার। এখন যদি ব্যাংক ও পুঁজিবাজারকে অর্থনীতির উন্নয়নের চালিকা শক্তি হিসেবে ধরে নেই, সেক্ষেত্রে এ দুটি খাত অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে নাজুক অবস্থানে রয়েছে। সূচক পাঁচ হাজারের ঘরে ছুইছুই করছে, টার্নওভার ৩০০ কোটিতে নেমে এসেছে এবং অনেক কোম্পানি লভ্যাংশ দিতে পারছে না। মানি মার্কেট ও পুঁজিবাজার একে ওপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এ দুটি প্রতিষ্ঠানকে আলাদাভাবে চিন্তা করলে চলবে না। কারণ মানি মার্কেটে কোনো সমস্যা হলে পুঁজিবাজরে তার প্রভাব পড়ে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিএসইসি এ দুটি সংস্থার সমন্বিতভাবে পথচলার বিষয়টি এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। যদি এ দুটি সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ থাকতো তাহলে বর্তমানে ব্যাংক ও পুঁজিবাজারের যে অবস্থা সেটি দেখা যেত না। উন্নয়নশীল থেকে উন্নত বাংলাদেশ গঠন এবং প্রবৃদ্ধি উন্নয়নের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে অর্থাৎ অর্থনৈতিক উন্নয়নের এ বড় দুটি খাতকে ভঙ্গুর রেখে কতটা উন্নয়ন করা সম্ভব সরকার সেটি বিবেচনা করবে।
তিনি আরও বলেন, ২০১০ সালের পর থেকে অভিহিত মূল্য ১০ টাকার সঙ্গে আরও পাঁচ টাকা প্রিমিয়াম যোগ করে যেসব কোম্পানি বাজারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ওইসব কোম্পানির শেয়ারদর এক বছরের মাথায় অভিহিত মূল্যের নিচে রয়েছে। এমনও কোম্পানি বাজারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে যে কোম্পানির অফিস নেই। আবার যে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকা ওই কোম্পানি বাজার থেকে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে। আসলে এ বিষয়গুলো সঠিকভাবে অনুসন্ধান করে আইনের আওতায় এনে বিচার করা হচ্ছে না। যদি একটি কোম্পানি ধরে বিচার করা হয় অর্থাৎ কেন ওই কোম্পানির শেয়ারের দর কমে যাচ্ছে, কেন লভ্যাংশ দিতে পাচ্ছে না এবং কোম্পানি বাজারে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সময় শেয়ারের দর কত ছিল এবং এখন শেয়ারের দর কত। ওই কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন জনসম্মুখে তুলে ধরেন এবং এর পাশাপাশি ওই কোম্পানির আনার ক্ষেত্রে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের জবাবদিহিতায় আনেন, যদি সেটি করা যায় তাহলে বাজারের এ রকম অবস্থা হবে না।
শফিকুল আলম বলেন, দেশের জিডিপি গ্রোথ আট দশমিক ১৩ শতাংশ। বিগত ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জিডিপি গ্রোথ। ৭০ দশকের পর দুই-একটা বছর ছাড়া দেশের জিডিপি গ্রোথ ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। কিন্তু পুঁজিবাজার সেভাবে এগোচ্ছে না। ২০১০ সালে বাজার ধসের পর তেমন একটি উন্নয়ন হয়নি বরং আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। সত্যিকার অর্থে এখন বিনিয়োগকারীদের বাজারের প্রতি আস্থা নেই। আবার মিউচুয়াল ফান্ডে কেউ বিনিয়োগ করে না। কারণ ব্যাংকের চেয়ে মিউচুয়াল ফান্ডে লভ্যাংশের হার অনেক কম। কিন্তু অন্য দেশের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় সে দেশের পুঁজিবাজারে মোট বিনিয়োগের ৩৩ শতাংশ মিউচুয়াল ফান্ডে। এমনকি মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করার জন্য টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। আর আমাদের দেশের পুঁজিবাজারের মোট বিনিয়োগের মাত্র দশমিক পাঁচ শতাংশ এ খাতে বিনিয়োগ করা হয়েছে।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ