ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে গতকাল শনিবার। রাষ্ট্রপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ এতে সভাপতিত্ব করেছেন। কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অন্টারিওর প্রেসিডেন্ট ও ভাইস চ্যান্সেলর অমিত চাকমা সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য রেখেছেন এবং তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সম্মানসূচক ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, ড. অমিত চাকমা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিশিষ্ট রাসায়নিক প্রকৌশলী। আমরা তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। পাশাপাশি ৫০তম সমাবর্তনে যেসব গ্র্যাজুয়েট অংশ নিয়েছেন, তাদেরও করছি অভিনন্দিত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান সমাবর্তনটি যে বিশেষ কারণে গুরুত্ব পাচ্ছে তা হলো, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম সমাবর্তন। যদিও প্রতিটি সমাবর্তন আলাদা ঔজ্জ্বল্যে ভাস্বর; কিন্তু কিছু সংখ্যা নানা কারণে গুরুত্ব পায়। ৫০ তার একটি। এ সমাবর্তনে যেসব গ্র্যাজুয়েট আনুষ্ঠানিকভাবে সনদপত্র গ্রহণ করবেন, তারা নিশ্চয়ই দিনটির কথা চিরকাল মনে রাখবেন। পাশাপাশি সমাবর্তন বক্তাদের দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য তাদের পরবর্তী জীবনের পাথেয় হিসেবে কাজ করবে। আমরা আশা করবো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের পুরো জনগোষ্ঠী যাদের বছরের পর বছর ধরে তৈরি করেছে, তারা এখন থেকে দেশকে প্রতিদান দেওয়ার কাজে নিরলসভাবে রত হবেন। উচ্চশিক্ষার ব্যয় অনেক। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা যে পরিমাণ ব্যয় করেন, তা সামান্য; রাষ্ট্রই ব্যয় করে বেশি। আর রাষ্ট্রের ব্যয়ের উৎস মূলত সাধারণ মানুষের অবদান। যারা গ্র্যাজুয়েট হয়েছেন, তাদের প্রতিটি অর্জনেই জনসাধারণের অবদান রয়েছে। সততা, দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পরবর্তী জীবনে যদি গ্র্যাজুয়েটরা নিজস্ব কর্ম করে যান, তাহলে বাড়তি কিছু না করেও ওই অবদানকে সম্মান জানানো হবে বলে আমরা মনে করি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সমাবর্তন আয়োজন একটি নিয়মিত কাজ। গ্র্যাজুয়েশনের পর গ্র্যাজুয়েটদের জন্য কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার অন্য নামই হচ্ছে সমাবর্তন। প্রতি বছরই বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউট থেকে হাজার হাজার গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছেন। সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত প্রতি বছর সমাবর্তনের আয়োজন করা। যদিও সমাবর্তন অনেক বড় ব্যাপার এবং প্রতি বছর এরকম আয়োজন কষ্টকর; কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মকানুন ও দর্শনের অনুষঙ্গ হিসেবে প্রতি বছরই তা আয়োজন করা উচিত বলে আমরা মনে করি। যারা আনুষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন শেষ করেন, তারা কেন দীর্ঘদিন পর পর সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করবেন? দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মিত সমাবর্তনের আয়োজন করে না। এ চর্চা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। সমাবর্তনের দর্শন ও ঐতিহ্য বজায় রেখে এর ফি নির্ধারণ, মানসম্পন্ন ও অভিজ্ঞ বক্তাকে আমন্ত্রণ জানানো, বাণিজ্যিক পরশ থেকে সমাবর্তনকে মুক্ত রাখা প্রভৃতি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এটি আয়োজন করা হলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত মানে নতুন পালক যুক্ত করবে বলে আমরা মনে করি।
Add Comment