নিজস্ব প্রতিবেদক: বিদায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ এসেছে ৪৯ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। অথচ ওই অর্থবছরে ঘাটতি মেটাতে মূল বাজেট সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এ খাতের ঋণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকা করা হয়।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। সর্বশেষ গত জুন মাসে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ থেকে সরকারের নিট ঋণ এসেছে তিন হাজার ২০৮ কোটি টাকা।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, উৎসে কর সামান্য বাড়ানো হলেও এখনও ব্যাংক আমানতের তুলনায় অনেক বেশি মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ থেকে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৮৭ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছর থেকে সঞ্চয়পত্রে ঝোঁক কমাতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এ খাতে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর উৎসে কর পাঁচ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। তবে পেনশনার সঞ্চয়পত্রে উৎসে কর আগে যেমন ছিল তেমনটাই রাখা হয়েছে। এছাড়া এক লাখ টাকার বেশি মূল্যমানের সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সীমার অতিরিক্ত সঞ্চয়পত্র কেনা ঠেকাতে একটি সেন্ট্রাল ডেটাবেজ করা হয়েছে। এর আগে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১০ মে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদহার গড়ে দুই শতাংশ কমানো হয়েছিল। তারপরও সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ব্যাংক আমানতের সুদের হারের থেকে প্রায় দ্বিগুণ ছিল। যে কারণে সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ বাড়ছেই।
এর আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪৪ হাজার কোটি টাকা সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে নিট ঋণ আসে ৪৬ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৬-১৭ অর্থবছর সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ ছিল ৫২ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা।
চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ২৭ হাজার কোটি টাকা নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের।
বর্তমানে পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক শূন্য চার শতাংশ, পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ২০১৫ সালের ২৩ মের পর থেকে এই হার কার্যকর রয়েছে। এর আগে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ছিল ১৩ শতাংশেরও বেশি।
জানা গেছে, জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোয় বিনিয়োগকৃত অর্থের ওপর একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর মুনাফা দেয় সরকার। মেয়াদপূর্তির পরে বিনিয়োগকৃত অর্থও ফেরত দেওয়া হয়। প্রতি মাসে বিক্রি হওয়া সঞ্চয় স্কিমগুলো থেকে প্রাপ্ত বিনিয়োগের হিসাব থেকে আগে বিক্রি হওয়া স্কিমগুলোর মূল ও মুনাফা বাদ দিয়ে নিট ঋণ হিসাব করা হয়। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা প্রয়োজন অনুযায়ী বাজেটে নির্ধারিত বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিনিয়োগকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়।
বিদায়ী অর্থবছর
সঞ্চয়পত্রে নিট ঋণ ৫০ হাজার কোটি টাকা
