নিজস্ব প্রতিবেদক: মোট আয়ের ওপর ন্যূনতম দুই শতাংশ করসহ প্রত্যক্ষ করারোপ ও প্রতিকূল টেলিযোগাযোগ নীতিমালার কারণে চলতি বছর দ্বিতীয় প্রান্তিকে রবির আর্থিক ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। পরিণতিতে ওই প্রান্তিকে প্রায় এক কোটি দুই লাখ টাকা মুনাফা করেছে রবি। তবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে আর্থিক ক্ষেত্রে আইএফআরএস সিক্সটিন বাস্তবায়ন করায় প্রান্তিক শেষে ৩২ কোটি দুই লাখ টাকা লোকসান গুনেছে শীর্ষস্থানীয় সেলফোন অপারেটর কোম্পানিটি।
তথ্যমতে, চলতি আর্থিক বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে রবির আয় এর আগের প্রান্তিকের তুলনায় এক দশমিক ছয় শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা টাকার অঙ্কে প্রায় এক হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা। আর এর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রবির আয় বেড়েছে ১২ দশমিক চার শতাংশ। এর মধ্যে ভয়েস কল থেকে কোম্পানির আয় চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় দুই দশমিক আট শতাংশ ও আগের বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় ৯ দশমিক সাত শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
অন্যদিকে এর আগের প্রান্তিকের তুলনায় ডেটা থেকে রাজস্ব বৃদ্ধি পেয়েছে দুই দশমিক পাঁচ শতাংশ, যা এর আগের আর্থিক বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় ২৮ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। এর জের ধরে দ্বিতীয় প্রান্তিকে এক কোটি টাকারও বেশি মুনাফা করেছে রবি। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারিতে আর্থিক ক্ষেত্রে আইএফআরএস সিক্সটিন বাস্তবায়ন করায় মুনাফার বদলে ওই প্রান্তিক শেষে রবির লোকসান প্রায় ৩২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। তাই লোকসানের জন্য প্রতিকূল পরিবেশকেই দায়ী করা হচ্ছে।
রবির ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও মাহতাব উদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মোট আয়ের ওপর ন্যূনতম দুই শতাংশ কর, ডিজঅ্যালাওয়েন্সেসের (এক্সেস পারকুইজিট ও অন্যান্য) ওপর প্রত্যক্ষ করারোপ এবং বিদ্যমান প্রতিকূল টেলিযোগাযোগ নীতিমালার কারণে দ্বিতীয় প্রান্তিকে রবির আর্থিক ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এছাড়া সিম কর দ্বিগুণ করা ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো আমাদের আর্থিক পরিস্থিতিকে সামনের দিনগুলোতে আরও ঝুঁকিতে ফেলবে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে আমাদের রাজস্ব অর্জন সন্তোষজনক হলেও পরিবর্তিত কর ব্যবস্থা বাজারের প্রচলিত চ্যালেঞ্জগুলোর চেয়েও বড় প্রতিবন্ধক হিসেবে দেখা দিয়েছে।’
এদিকে দ্বিতীয় প্রান্তিকে রবি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ৬৭৯ কোটি সাত লাখ টাকা জমা দিয়েছে, যা দ্বিতীয় প্রান্তিকের মোট আয়ের প্রায় ৩৫ দশমিক ছয় শতাংশ। আর বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরুর পর থেকে অদ্যাবধি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে প্রায় ২৫ হাজার ১৯০ কোটি টাকা জমা দিয়েছে রবি।
রবির ডিজিটাল পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে রবির ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও আরও বলেন, “ডিজিটাল অগ্রযাত্রায় এ প্রান্তিকে রবি বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে। এগুলোর মধ্যে ডেটা সায়েন্টিস্ট ও ডেটা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য আয়োজিত দেশের প্রথম ‘ডেটাথন’, সমন্বিত লাইফস্টাইল অ্যাপ ‘নূর’-এর মাধ্যমে অনুদান প্রদানের সুযোগ ও নারীদের জন্য ডিজিটাল লাইফ স্টাইল সল্যুশন প্যাক ‘ইচ্ছেডানা’ উল্লেখযোগ্য।”
চলতি আর্থিক বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে গ্রাহকসংখ্যা এক দশমিক তিন শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে চার কোটি ৭৯ লাখে দাঁড়িয়েছে, যা দেশের মোট সেলফোন ব্যবহারকারীর ২৯ দশমিক ছয় শতাংশ। আর আগের বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় গ্রাহকসংখ্যা সাত দশমিক দুই শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিক শেষে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর গ্রাহকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন কোটি এক লাখে, যা মোট গ্রাহকের ৬২ দশমিক আট শতাংশ।
তথ্যমতে, চলতি আর্থিক বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে রবির মূলধনি বিনিয়োগ গত প্রান্তিকের চেয়ে ১১ দশমিক সাত শতাংশ কমে ২৬৯ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। দেশজুড়ে ৪.৫জি নেটওয়ার্কের বিস্তৃতি ও অন্যান্য নেটওয়ার্কের আধুনিকায়নের জন্য ওই মূলধনি বিনিয়োগ করা হয়েছে। দেশজুড়ে আট হাজার ৮০টি সক্রিয় ৪.৫জি সাইট নিয়ে দেশের বৃহত্তম ৪.৫জি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে রবি। কার্যক্রম শুরুর পর থেকে ২০১৯ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত রবি মোট প্রায় ২৩ হাজার ৭২০ কোটি টাকা মূলধনি বিনিয়োগ করেছে। এর বিপরীতে একই সময়ে উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ হিসেবে ২৯০ কোটি টাকা দিয়েছে।
করারোপ ও প্রতিকূল পরিবেশের জের দ্বিতীয় প্রান্তিক শেষে লোকসানে রবি
