নিজস্ব প্রতিবেদক: ডেঙ্গুতে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সকাল সাড়ে ৭টার দিকে সে মারা যায়। ওই ছাত্রীর নাম ইসরা তাসকিন অস্মিতা (১৩)।
ইসরা তাসকিন আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানির ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আমানাত মাওলার বড় মেয়ে। ইসরা তাসকিনের বাবা আমানাত মাওলা বলেন, সম্প্রতি ইসরা তাসকিনসহ তার পরিবারের চার সদস্য ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হন। সবাইকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ইসরা তাসকিনের অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে আরেকটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ছয় দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর আজ সকালে তার মৃত্যু হয়।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি রোগীর সংখ্যা আবার বেড়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে ৮২০ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ভর্তি হয়েছে ৩৪৫, ঢাকার বাইরে ৪৭৫ জন। সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে নতুন রোগী ভর্তি হয় ৭৮৩ জন। সরকারিভাবে ৫৭ জনের মৃত্যু ডেঙ্গুজনিত বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা আরও বেশি।
সারা দেশে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত ৯৫ শতাংশ রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে বলে বুধবার দাবি করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭৩ হাজার ৫৬৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। এর মধ্যে ৬৯ হাজার ৭৮৫ জন ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছে।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে জেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা তিন হাজার ৫৮৮ জন। এর মধ্যে ঢাকার ৪১টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে এক হাজার ৯৮৯ জন। অন্যান্য বিভাগে এ সংখ্যা এক হাজার ৫৯৯ জন।
এদিকে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) জন্য ২০০টি ফগার মেশিন, ১৫০টি হস্তচালিত মেশিন ও ৪০ হাজার লিটার মেথরিয়ান কীটনাশক ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে সরকারের ব্যয় হবে পাঁচ কোটি ৩২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।
গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সম্মেলন কক্ষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সংক্রান্ত প্রস্তাবের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, উত্তর সিটি করপোরেশনে দ্রুততম সময়ে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগ-প্রতিরোধের জন্য ২০০টি ফগার মেশিন, ১৫০টি হস্তচালিত মেশিন এবং ৪০ হাজার লিটার (রেডি ফর ইউজ) কীটনাশক স্থানীয় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান থেকে বাজারদরে সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ বাবদ পাঁচ কোটি ৩২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা ব্যয় হবে। এক মাসের মধ্যে এসব যন্ত্রপাতি ও কীটনাশক দেশে আসবে। এসব ক্রয়ের জন্য টেন্ডার করলে অনেক সময় লাগবে। জাতির কথা বিবেচনা করে এ ক্রয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা কয়েক দেশ সফর করেছেন। তারা পরবর্তীতে সিঙ্গাপুর যাবেন। সিঙ্গাপুরের একটি প্রকল্প আছে, মশাকে আকৃষ্ট করে তারা একত্রে মারে। তারা গর্ত করে সব মশা আকৃষ্ট করে সেখানে আনে, তখন সব মশা একসঙ্গে মারা হয়। আমাদের আগে মশা তাড়ানো হতো, তাই লাভ বেশি হয়নি। আমরা দেখছি মোটামুটি পরিবর্তন আসছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, এবারের ডেঙ্গু স্মরণকালের ভয়াবহতা দেখিয়েছে। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের বিষয়টি জাতীয়ভাবে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে সরকার। শুরুর দিকে সেবাদান প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয় না থাকলেও ডেঙ্গু প্রতিরোধে বর্তমানে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান সমন্বিতভাবে কাজ করছে।
অর্থমন্ত্রী আরও জানান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) জন্য এ সংক্রান্ত প্রস্তাব না পাওয়ায় এবার শুধু উত্তর সিটির জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে। উত্তর সিটি যেহেতু কিনছে, দক্ষিণেও হয়তো কিনবে। মশা মারার এ কার্যক্রম বছরব্যাপী চলবে। শীত বেশি হলে এত মশা থাকবে না।