দ্য গ্লোবাল লিভেবিলিটি ইনডেক্স ২০১৯

বাস অযোগ্য শহরের তালিকায় তৃতীয় ঢাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: অপরিকল্পিত নগরায়ণ, তীব্র যানজট, নিম্নমানের স্বাস্থ্যসেবা, ভাঙাচোরা সড়ক, অপর্যাপ্ত নাগরিক সেবা, বাতাসে প্রচুর ধুলোবালি, দুর্গন্ধে বিপর্যস্ত পরিবেশ, উঁচু-নিচু অট্টালিকার পাশাপাশি অতি নিচুমানের বস্তি বিশ্ববাসীর কাছে এই হলো রাজধানীর চিত্র। এক দশকের বেশি সময় ধরেও ঢাকার এ অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। বরং পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। ফলে আবারও বিশ্বের বাস-অযোগ্য শহরের তালিকায় ওপরের দিকে এসেছে ঢাকার নাম। চলতি বছর এ তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে এ শহর।
গতকাল প্রকাশিত ‘দ্য গ্লোবাল লিভেবিলিটি ইনডেক্স ২০১৯’তে এ চিত্র উঠে এসেছে। বিশ্বের ১৪০ শহরের ওপর জরিপ চালিয়ে এ প্রতিবেদন প্রতি বছর নিয়মিত প্রকাশ করছে বৈশ্বিক অর্থনীতিবিষয়ক ম্যাগাজিন দ্য ইকোনমিস্টের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। এতে দেখা যায়, ২০১৯ সালে বাস-অযোগ্য শহরের তালিকায় এক ধাপ এগিয়েছে ঢাকা। যদিও ২০০৮ সাল থেকেই শীর্ষ পাঁচের মধ্যেই থাকছে ঢাকা শহরের নাম।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বাস-অযোগ্য শহরের শীর্ষে রয়েছে যুদ্ধকবলিত সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক। ১০০-এর মধ্যে শহরটির স্কোর ৩০ দশমিক ৭০। গত বছরও একই অবস্থানে ছিল সিরিয়া। আর ৩৮ দশমিক ৫০ স্কোর নিয়ে চলতি বছর এ তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে নাইজেরিয়ার শহর লাগোস। গত বছর এ শহরটি ছিল তৃতীয় অবস্থানে। এতে বাস-অযোগ্য শহরের তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে নেমেছে ঢাকা।
চলতি বছর ঢাকা শহরের স্কোর দাঁড়িয়েছে ৩৯ দশমিক ২০। গত বছর এ স্কোর ছিল ৩৮ ও তার আগের বছর ৩৮ দশমিক ৭০। একই স্কোর ছিল ২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে। ওই তিন বছর ঢাকার অবস্থান ছিল যথাক্রমে ১৩৯, ১৩৭ ও ১৩৭। আর ২০০৮ সালে ৩৬ দশমিক ৯০ স্কোর নিয়ে ঢাকার অবস্থান ছিল ১৩৯-এ। অর্থাৎ, ঢাকা শহর বাস-উপযুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে এক দশকে উল্লেখযোগ্য কোনো অগগ্রতি হয়নি।
এদিকে চলতি বছর বিশ্বের বাস-অযোগ্য শহরের তালিকায় রয়েছে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলি। শহরটির স্কোর ১০০-এর মধ্যে ৪০ দশমিক ৪০। আর ৪০ দশমিক ৯০ স্কোর নিয়ে রয়েছে পাকিস্তানের শহর করাচি। বাস-অযোগ্য শহরের তালিকায় ষষ্ঠ থেকে দশম স্থান পর্যন্ত রয়েছে যথাক্রমে পাপুয়া নিউগিনির রাজধানী পোর্ট মোরসবি, জিম্বাবুয়ের রাজধানী হারারে, ক্যামেরুনের বাণিজ্যিক শহর ডোয়ালা, আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্স ও ভেনেজুয়েলার রাজধানী কারাকাস।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. সারওয়ার জাহান শেয়ার বিজকে বলেন, প্রতিবেদনটির লক্ষণীয় দিক হলো বাস-অযোগ্য শীর্ষ শহরগুলোর বেশিরভাগই হয় যুদ্ধকবলিত, না হয় দারিদ্র্যপীড়িত। তবে ঢাকা শহর যুদ্ধ বা দারিদ্র্য কোনো সমস্যার মধ্যেই নেই। বরং বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। অর্থাৎ, ঢাকার সমস্যা সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির।
তিনি আরও বলেন, ক্রমশ অপরিকল্পিত নগর হিসেবে গড়ে উঠেছে রাজধানী শহর ঢাকা। জনসংখ্যার চাপে এ শহর উন্নয়নের কোনো উদ্যোগেই সাফল্য আসেনি। এছাড়া নেই পরিকল্পিত যোগাযোগব্যবস্থা। ফলে বাড়ছে যানজট। সরকারিভাবেও সুষ্ঠু ও পরিকল্পিত বিনোদন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। আর দূষণ ও ধুলোবালি তো আছেই। ফলে ক্রমেই বাস-অযোগ্য শহর হয়ে পড়ছে ঢাকা।
প্রতিবেদনে পাঁচ ক্যাটেগরির আওতায় ৩০টি অনুসূচক বিশ্লেষণ করে শহরগুলোর অবস্থান নিরূপণ করা হয়েছে। ক্যাটেগরিগুলো হলো: স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্যসেবা, সংস্কৃতি ও পরিবেশ, শিক্ষা ও অবকাঠামো। এগুলো পরিমাপে ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিট নিজস্ব রেটিং ব্যবহার করেছে। বিভিন্ন ধরনের ভর (ওয়েট) দিয়ে তার ভিত্তিতে স্কোর পরিমাপ করা হয়েছে।
সূচকের মানের ক্ষেত্রে ১০০-এর মধ্যে ৮০ বা তার বেশি স্কোর পাওয়া শহরগুলো বসবাসের জন্য সবচেয়ে আদর্শ। ৭০-৮০ স্কোর পাওয়া শহরগুলো স্বাভাবিকভাবে বসবাস উপযোগী। ৬০-৭০ স্কোর পাওয়া শহরগুলোতে দৈনন্দিন জীবনযাপনে নেতিবাচক কিছু উপাদান রয়েছে। ৫০-৬০ স্কোর পাওয়া শহরগুলোয় স্বাভাবিক বসবাস করা কঠিন। আর ৫০ বা তার কম স্কোর পাওয়া শহরগুলোয় বসবাস সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা উচিত।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, যুদ্ধ বা দাঙ্গার ঝুঁকি না থাকায় স্থিতিশীলতা ক্যাটেগরিতে ঢাকা শহরের অবস্থান মোটামুটি ভালো। এক্ষেত্রে ১০০-এর মধ্যে ঢাকার স্কোর ৫৫। তবে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা অবকাঠামো ও চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রে। এ দুই ক্যাটেগরিতেই সবচেয়ে শেষে ঢাকার অবস্থান। এর মধ্য অবকাঠামোয় ঢাকার স্কোর ২৬ দশমিক ৮০ ও চিকিৎসাসেবায় ২৯ দশমিক ২০। আর সংস্কৃতি ও পরিবেশ ক্যাটেগরিতে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে ঢাকা, স্কোর ৪০ দশমিক ৫০। এছাড়া শিক্ষাতেও দ্বিতীয় সর্বনিম্ন অবস্থান এ শহরের, স্কোর ৪১ দশমিক ৭০।
এদিকে গত বছরের মতো এবারও বিশ্বের আদর্শ বা বাস-উপযোগী শহরের শীর্ষে রয়েছে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা। ১০০-এর মধ্যে ৯৯ দশমিক ১০ স্কোর পেয়েছে শহরটি। একইভাবে তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রেখেছে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহর। স্কোরও রয়েছে একই অবস্থানে, ৯৮ দশমিক ৪০। ৯৮ দশমিক ১০ স্কোর নিয়ে তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে অস্ট্রেলিয়ার আরেক শহর সিডনি। গত বছর এ শহরের অবস্থান ছিল পঞ্চমে। আর ৯৭ দশমিক ৭০ স্কোর ধরে রাখলেও এ বছর এক ধাপ নেমে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে জাপানের ওসাকা। একইভাবে ৯৭ দশমিক ৫০ স্কোর ধরে রাখলেও পঞ্চম অবস্থানে নেমে গেছে কানাডার ক্যালগারি শহর।
বাসযোগ্য শীর্ষ ১০টির মধ্যে অন্য শহরগুলো হলো যথাক্রমে: কানাডার ভ্যানকুভার ও টরন্টো, জাপানের রাজধানী টোকিও, ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেন ও অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন শহরের মধ্যে জুরিখ ১১, ফ্রাঙ্কফুট ১২, জেনেভা ১৪, বার্লিন ২১ ও লুক্সেমবার্গ ২৩তম অবস্থানে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরের মধ্যে হনুলুলু ২২, ওয়াশিংটন ৪০ ও শিকাগো ৪১তম অবস্থানে রয়েছে। আর বিশ্বের ঐতিহাসিক বিভিন্ন শহরের মধ্যে প্যারিস ২৬, লন্ডন ৪৮ ও নিউইয়র্ক ৫৮তম অবস্থানে রয়েছে।
বাসযোগ্য শহরের তালিকায় এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্রগুলোর মধ্যে হংকং ৩৮, সিঙ্গাপুর ৪০ ও দুবাই ৭০তম অবস্থানে রয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি এ বছর ১১৮তম অবস্থানে নেমে গেছে। গত বছর শহরটির অবস্থান ছিল ১১২। আর দুই ধাপ পিছিয়ে এ বছর ভারতের আরেক শহর মুম্বাই রয়েছে ১১৯তম অবস্থানে।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০