নিজস্ব প্রতিবেদক: চীনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ কার্যক্রম সম্প্রসারিত হলে বাংলাদেশের লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এতে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়বে। তবে প্রকল্প বাছাই, ঋণ, শর্ত সর্বোপরি বাস্তবায়ন সক্ষমতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আরও সতর্ক থাকতে হবে। ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যেন উচ্চ ঋণের ফাঁদে না পড়ার ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ: তুলনামূলক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনারে সংস্থাটির পক্ষ থেকে এসব কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের সুবিধা বাড়ানোর জন্য আরও দরকষাকষি করারও কথা বলেছে বেসরকারি সংস্থাটি।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, চীনে নবনিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুব উজ জামান, চীনের ইউনান একাডেমি অব সোশ্যাল সায়েন্সের ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের অধ্যাপক চেং মিন, ভারতের রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম ফর ডেভেলপিং কান্ট্রিজের মহাপরিচালক ড. শচীন চতুর্বেদী, সিপিডির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সৈয়দ মঞ্জুর ইলাহী প্রমুখ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ হুমায়ুন। বিশেষ অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) মাধ্যমে আমাদের যে প্রস্তাবগুলো দেওয়া আছে আমরা তা নেব। কিন্তু অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বিনিয়োগের শর্তগুলোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে। দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে টেন্ডার থেকে শুরু করে সবকিছুর পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, আমাদের লক্ষ রাখতে হবে, বিআরআই যে ঋণ দিচ্ছে সেই ঋণে সুদের হার যাতে কম হয়। আমরা কেন তিন শতাংশ দেব? ঋণ যেন এক শতাংশের নিচে হয়। আমরা যাতে ঋণের ফাঁদে না পড়ি। আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য হতে হবে রাজনীতির বাইরে গিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা।
শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ হুমায়ুন বলেন, বিআরআই বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াবে। এখন কোনো দেশই এককভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে পারবে না। তাই সম্মিলিত উন্নয়নে সব প্রকল্পেই অংশ নেবে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, এ দেশের অবকাঠামো, জ্বালানি খাতে আঞ্চলিক সহযোগিতা লাগবে। বিআরআই এই সুযোগ নেওয়ার ফোরাম হতে পারে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক বলেন, বাংলাদেশ যে কোনো ধরনের সামরিক জোটে যোগদান এড়িয়ে চলছে। নিজেদের স্বার্থরক্ষা করেই অন্য জোটে যোগদান করছি।
শহীদুল হক আরও বলেন, আমরা চীনের বিআরআই-এ যোগ দিয়েছি। এর মাধ্যমে আমরা লাভবান হবো বলে আশা করি। এ উদ্যোগে যোগ দেওয়ায় বাংলাদেশের অর্থনীতি, ব্যবসা, বাণিজ্য, যোগাযোগসহ নানা বিষয়ে সহযোগিতা বাড়বে।
তিনি বলেন, বর্তমানে বিশ্ববাণিজ্যে ইন্দো-প্যাসিফিক, ইউরো-এশিয়া ও বিআরআই’র উদ্যোগ আছে। আমরা সব উদ্যোগের সঙ্গে যাব। কিন্তু ক্ষতিকর কিছুর সঙ্গে থাকব না। যখন আমরা এসব নিয়ে দরকষাকষি করব, তখন জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেব।
সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, বিআরআই বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চীন আমাদের দেশে বিনিয়োগ করছে। ভবিষ্যতে বিনিয়োগ আরও বাড়বে। তবে বিআরআইয়ের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা দরকার।
তিনি বলেন, বিআরআইয়ের প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অন্য দেশের সঙ্গে যেন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নষ্ট না হয় সেদিকেও নজর রাখতে হবে। প্রকল্পে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ যেন সমানভাবে উপকৃত হয় সেদিকেও বিশেষ নজর রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিচার-বিবেচনা ছাড়া প্রকল্প নিলে তা হিতে বিপরীত হতে পারে। বাংলাদেশের সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে প্রকল্প নিতে হবে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মঞ্জুর এলাহী বলেন, ‘আমরা বাজার চাই, এটা সত্য। কিন্তু সবকিছু যাচাই-বাছাই করে নেওয়া উচিত। এসব ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।
সিপিডির সংলাপে বক্তারা
বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগে লাভবান হবে বাংলাদেশ
