এক-তৃতীয়াংশের কম নারী শিক্ষার্থী: ১৬ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে

 

আবদুল হাকিম আবির: জাতিসংঘ প্রণীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার চতুর্থ লক্ষ্য সার্বিক ও গুণগত শিক্ষা লাভ এবং জীবনব্যাপী শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ। পঞ্চম লক্ষ্য লিঙ্গ সমতা অর্জন এবং নারী ও কন্যা সন্তানের ক্ষমতায়ন। বাংলাদেশে সরকারি হিসাবে দেশের জনসংখ্যায় নারী-পুরুষ প্রায় সমান। শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে পুরুষ শিক্ষার্থী এবং নারী শিক্ষার্থী সমান। কিন্তু উচ্চশিক্ষায় কাক্সিক্ষত অংশগ্রহণ নেই নারী শিক্ষার্থীদের।এক্ষেত্রে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে।

এগুলোয় নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ আশঙ্কাজনক হারে কম। দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬টিতেই এক-তৃতীয়াংশের কম নারী শিক্ষার্থী। আর কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই মোট শিক্ষার্থীর অর্ধেক নারী শিক্ষার্থী নেই। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সর্বশেষ প্রকাশিত বার্ষিক বিবরণীতে এ তথ্য উঠে এসেছে।

সূত্রমতে, মাত্র ৭ দশমিক ২১ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী রয়েছে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (ডুয়েট)। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ হাজার ৭৫৭ জন শিক্ষার্থীর মাঝে মাত্র ১৯৯ জন নারী শিক্ষার্থী। কম নারী শিক্ষার্থী বিবেচনায় দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)। এ দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থী রয়েছে যথাক্রমে ১৩ শতাংশ এবং ১৫ শতাংশ।

এ ছাড়া রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) ১৫ দশমিক ৯০ শতাংশ, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) ১৭ দশমিক ৪৬ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ১৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২২ দশমিক ১০ শতাংশ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস-এ ২৪ দশমিক ১৫ শতাংশ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৬ দশমিক ৬২ শতাংশ, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৮ দশমিক ৪১ শতাংশ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) ২৯ দশমিক ২৭ শতাংশ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩১ দশমিক ৪৮ শতাংশ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩২ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩২ দশমিক ৮৫ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছেন।

উচ্চশিক্ষায় নারী শিক্ষার্থীদের তুলনামূলক কম অংশগ্রহণের কারণ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) পরিচালক অধ্যাপক হুসনে আরা বেগম শেয়ার বিজে বলেন, আমাদের দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার আগে মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পর আর পরিবার ও সমাজের অনীহায় তারা উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী হয় না।

এ ছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নারী শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত আবাসন ব্যবস্থা এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি যার কারণে আমরা সমানসংখ্যক ছেলে এবং মেয়ের আশা করতে পারি না।

বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার পূর্বেই নানা ধরনের সামাজিক বাধার মুখে পড়ে শিক্ষাজীবন শেষ হয়ে যায় অধিকাংশ নারী শিক্ষার্থীর। আর উচ্চশিক্ষায় নারীদের কম অংশগ্রহণের কারণে শিক্ষাব্যবস্থা এবং সামাজিক উন্নয়নেও বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন তারা। তবে উচ্চশিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করার জন্য সরকার বা শিক্ষাসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও দায়সারা কিছু পদক্ষেপ নিয়ে নীরব থাকছে বলে অভিযোগ করেছেন নারী অধিকার আন্দোলন নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর নেতারা।

বাংলাদেশের শিক্ষা বিষয়ক সংস্থাগুলোর মোর্চা ‘গণসাক্ষরতা অভিযান’ এর প্রধান নির্বাহী রাশেদা কে চৌধুরী এ বিষয়ে শেয়ার বিজকে বলেন, যেখানে দশজন পুরুষ গ্র্যাজুয়েট হচ্ছে সেখানে যদি এক তৃতীয়াংশ নারীও গ্র্যাজুয়েট না হতে পারে তবে জাতি হিসেবে আমরা পিছিয়ে পড়বো। নারীদের উচ্চশিক্ষায় অংশগ্রহণের নি¤œহারের কারণে সামাজিক অবকাঠামোতে সামগ্রিকভাবে নারী-পুরুষ সমতা সম্ভব হচ্ছে না। আর যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নারীদের শিক্ষার অধিকার নিয়ে কাজ করছে তারাও নিজেদের জায়গা থেকে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। এ বিষয়টি হতাশাজনক।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কম নারী শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার বাস্তব দিকগুলো সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, বিভিন্ন অনগ্রসর শ্রেণির উচ্চশিক্ষার সুবিধার্থে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির ক্ষেত্রে কোটা সুবিধা দেওয়া হলেও দু-একটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্যগুলোতে পিছিয়ে পড়া নারী শিক্ষার্থীদের জন্য এই সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, সাংবিধানিকভাবে উচ্চশিক্ষা দেশের সব শ্রেণির জনগোষ্ঠীর অধিকার। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা নারীদের জন্য এই সুবিধা নিশ্চিত করতে পারছি না। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নারী শিক্ষার্থীর নিম্নহার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দোষ নয়।

মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে অধ্যয়নরত অবস্থাতেই নারী শিক্ষার্থীদের মানসিক বাধাগুলো ভেঙে দিতে পারলেই এই সমস্যা থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারবো বলে মন্তব্য করেন তিনি।

 

 

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০