পুঁজিবাজারে সুশাসন ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে অর্থমন্ত্রীর আরও আগেই উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল। বাজার দীর্ঘদিন ধরে খারাপ অবস্থানে রয়েছে। অনেক বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এত নিয়ন্ত্রক সংস্থা থাকা সত্ত্বেও বাজারে আজ এ অবস্থা বিরাজ করছে। আসলে পুঁজিবাজার অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। যাহোক দেরিতে হলেও অর্থমন্ত্রী বাজার গতিশীল রাখার উদ্যোগ নিয়েছেন। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। খুজিস্তা নূর-ই-নাহারীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান এবং সেন্টার ফর এনআরবির চেয়ারপারসন এমএস সেকিল চৌধুরী।
ড. মিজানুর রহমান বলেন, গত ১৬ তারিখে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, বিএসইসির চেয়ারম্যান ও পুঁজিবাজারের আরও বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। অর্থমন্ত্রী বলেন, গত ১০ বছরে দেশের অর্থনীতি অনেক সক্ষমতা অর্জন করেছে। পুঁজিবাজার সেই গতিতে এগোবে না, এটা হতে পারে না। দেশের অর্থনীতি যতটা গতিশীল, পুঁজিবাজারকেও ততটা গতিশীল দেখতে চাই। এটাই ছিল এ সভার মূল প্রতিপাদ্য। বাজার টেকসই করার জন্য প্রাইমারি মার্কেটকে আরও গতিশীল করতে হবে। স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষাসহ ভালো মানের পণ্য বাজারে আনার পদক্ষেপ নিতে হবে। অর্থাৎ ভালো কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। আবার আইপিওতে যাতে শেয়ারের সঠিক মূল্য নির্ধারিত হয়, এ বিষয়ে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ আইপিওতে শেয়ার অতিমূল্যায়িত হলে পরে সে দাম থাকে না। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির মুখে পড়েন। এখন একটি আস্থার পরিবেশ তৈরি করতে চাই, যাতে বিনিয়োগকারী নির্ভয়ে বাজারে আসতে পারেন। একইভাবে সেকেন্ডারি মার্কেটকেও গতিশীল করা হবে। প্রায়ই শোনা যায় সেকেন্ডারি মার্কেটে বিভিন্ন ধরনের কারসাজি হয়। আসলে সরকার অনেক চেষ্টা করেছে। প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে অনেকবার বক্তব্য রেখেছেন।
তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজার ও আর্থিক খাতে তারল্য সংকট বিরাজ করছে। যদি এ খাতে ইতিবাচক ধারা বজায় রাখতে না পারি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার কার্যকর ভূমিকায় না যায়, তাহলে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি যেভাবে গতিশীল রয়েছে সেটা ধরে রাখা সম্ভব হবে না। গত ১০ বছরে যেটা অর্জিত হয়েছে, সেটা পিছিয়ে পড়বে।
এমএস সেকিল চৌধুরী বলেন, ১৬ তারিখে পুঁজিবাজার-বিষয়ক একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সভায় বাজারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে বাজারে সুশাসন ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে। অর্থমন্ত্রীর এটি আরও আগে করা উচিত ছিল। বাজার দীর্ঘদিন ধরে খারাপ অবস্থানে রয়েছে। অনেক বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন এবং আবার একটি বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। আসলে পুঁজিবাজার অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। এত নিয়ন্ত্রক সংস্থা থাকা সত্ত্বেও বাজারে আজ এ অবস্থা বিরাজ করছে। পুঁজিবাজার একটি স্পর্শকাতর জায়গা। এখানে প্রতি মিনিটে সক্রিয় থাকতে হয়। কারণ একটু ভুল হলে বাজারের বিশাল ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। যাহোক দেরিতে হলেও অর্থমন্ত্রী বাজার গতিশীল রাখার উদ্যোগ নিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের মূল ক্ষেত্র হচ্ছে পুঁজিবাজার। এখান থেকে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ হয়ে সব খাতে যাবে। এটি বিশ্বের সব পুঁজিবাজারে দেখা যায়। কিন্তু আমাদের সব পুঁজি সংগ্রহের মূল উৎস হয়ে গেছে ব্যাংক খাত, যে কারণে ব্যাংক খাতে ঋণ খেলাপির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। যখন প্রাইমারি শেয়ার বাজারে আসে তখন শেয়ারের দর অতিমূল্যায়িত করা হয়। কথা হচ্ছে এটি কারা মূল্যায়ন করছেন? তারা তো আর অশিক্ষিত নন। আসলে তারা কারও কাছে জবাবদিহি করতে দায়বদ্ধ নন। জবাবদিহির প্রক্রিয়া না থাকলে রাষ্ট্রব্যবস্থা, সমাজব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া কোনোটাই কার্যকর থাকবে না। গত ১০ থেকে ১২ বছরে দেশ অনেক এগিয়েছে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। এ উন্নয়ন ধরে রাখতে হবে। আর্থিক খাতসংশ্লিষ্ট আরও যে প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে, সেগুলোতে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে হবে।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ