অটিজমের কয়েকটি বিষয়…

অটিজম এক ধরনের স্নায়বিক সমস্যা। এ রোগে আক্রান্ত মানুষের মস্তিষ্ক সঠিকভাবে বিকশিত হয় না। জেনেটিক বা জন্ম গত কারণে অটিজম হতে পারে। সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায় মায়ের শরীরে জিংক ও ভিটামিনের ঘাটতির কারণেও শিশুর অটিস্টিক হওয়ার ঝুঁকি থাকে। সন্তান প্রসবের সময় কোনো কারণে মাথায় আঘাত পাওয়া, কিংবা কোনো বড় ধরনের অসুখ হতে পারে অটিজমের কারণ।
অটিজমের লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় শিশুর দুই থেকে তিন বছর বয়সে। তখন থেকেই শিশুর চালচলন অস্বাভাবিক হতে থাকে। শুরুতে সঠিক যত্ন ও চিকিৎসাসেবা দেওয়া হলে কিছুটা হলেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে শিশুটি। তবে অনেক অভিভাবক বুঝতে পারেন না শিশু অটিজমে আক্রান্ত কি না। বড় হওয়ার পর বুঝতে পারেন। এর কারণ লক্ষণ সম্পর্কে ধারণা না থাকা। তাই গবেষকরা কিছু লক্ষণ শনাক্ত করেছেন যেগুলো দেখে বোঝা যাবে শিশু অটিস্টিক কি না।

হাত মুষ্টিবদ্ধ করা ও ছেড়ে দেওয়া

সাধারণ নবজাতক শিশু হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রাখে। এটা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু শিশুর বয়স ২৪ মাসের বেশি হওয়া সত্ত্বেও যদি ঘন ঘন হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ও সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে দেয়, তাহলে বুঝতে হবে শিশু অটিজমে আক্রান্ত।

আঙুলের ওপর ভর করে হাঁটা

সাধারণত শিশুরা ১২ মাস কিংবা এর একটু বেশি বয়সে হাঁটতে শুরু করে। তখন হাঁটা একটু নড়বড়ে থাকে। ধীরে ধীরে হাঁটা স্বাভাবিক হয়, সে পরিপূর্ণভাবে হাঁটতে শেখে। কিন্তু ১২ থেকে ২৪ মাসের মধ্যে শিশু যদি সব সময় দুই পায়ের আঙুলের ওপর ভর করে হাঁটে, তবে বুঝতে হবে এটা অটিজমের লক্ষণ।

ঘনঘন মাথা ঝাঁকানো ও আঘাত করা

ঘনঘন মাথা ঝাঁকানো ও মাথা দিয়ে কোথাও আঘাত করা অটিজমের লক্ষণ। শিশুকে বেবি চেয়ারে বসালে ধারাবাহিকভাবে জোরে জোরে চেয়ারের পেছনের অংশের সঙ্গে মাথাকে আঘাত করতে থাকে। দেয়াল, দরজা ও বিভিন্ন বস্তুর সঙ্গে মাথায় আঘাত করতে দেখলে এবং বারবার মাথা ঝাঁকাচ্ছে এমন লক্ষণ থাকলে বুঝে নিতে হবে শিশুটি অটিস্টিক।

অতিরিক্ত রেগে যাওয়া ও কাউকে আঘাত করা

তার সমবয়সিদের সঙ্গে খেলার সময় খুবই ছোট কোনো বিষয়ে রেগে যাওয়া ও কাউকে জোরালোভাবে আঘাত করাও অটিস্টিক হওয়ার লক্ষণ। তারা অনেক সময় অন্য শিশু বা ব্যক্তিকে সহ্য করতে পারে না। তখন অতিরিক্ত রেগে গিয়ে কাউকে কামড়ে দিতেও দেখা যায়।

ডাকে সাড়া না দেওয়া

আক্রান্ত শিশু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ডাকে সাড়া দেয় না। এমনকি তার নাম ধরে ডাকলেও সাড়া দেয় না। যতবারই তাকে ডাকা হয়, সে ততবারই সাড়া না দিয়ে একমনে অন্য কাজ করতে থাকে। কখনও কখনও ডাকার অনেকক্ষণ পর হাঁ করে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।

পুনরাবৃত্তি করার অতিরিক্ত প্রবণতা

এসব শিশু একই কাজ বারবার করতে থাকে। একই শব্দ বারবার বলতে থাকে। তাকে করতে দেওয়া কোনো কাজ কিংবা তার ভালো লাগার কোনো কাজ সে বারবার করতে থাকে। সেটা মাথা ঝাঁকানো হতে পারে, হাত-পা ছোড়া হতে পারে। আবার কোনো একটা কথাও বারবার বলার প্রবণতা তার মাঝে দেখা যায়। যেমন বাবাকে ডাকলে সে একই সঙ্গে অনেকবার ‘বাবা, বাবা’ করতে থাকে।

মনের ভাব বোঝাতে পারে না

আক্রান্ত শিশুরা কী চায় তা বলতে বা বোঝাতে পারে না। কথা বলার পরিবর্তে আকার-ইঙ্গিতে বোঝানোর চেষ্টা করে। ব্যর্থ হলে তাদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। একপর্যায়ে কাঁদতে শুরু করে।
শিশুর দুই থেকে তিন বছরের আগে এমন কোনো লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। শিশু অটিজমে আক্রান্ত হলে ভাববেন না যে শিশু বোকা ও মেধাহীন। তাই অবহেলা না করে তাদের সঠিক যত্ন নিতে হবে। শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া এসব শিশুকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিলে তাদের অনেকে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে আসতে পারে।

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০