জাকারিয়া পলাশ : ব্যবসায়ীরা সবসময়ই করের বোঝা কমানোর দাবিতে সোচ্চার। এবারও বাজেট সামনে রেখে কর ব্যবস্থা নিয়ে নানা সংস্কারের প্রস্তাব দিচ্ছেন তারা। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) এ বছর করপোরেট কর ব্যবস্থায় সংস্কারের প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে। একই সঙ্গে নন-পাবলিকলি ট্রেডেড বা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত না হওয়া কোম্পানিগুলোকে ম্যানুফাকচারিং ও নন-ম্যানুফ্যাকচারিং ক্যাটাগরিতে ভাগ করার প্রস্তাব দিয়েছে। গত সপ্তাহে এ-সংক্রান্ত খসড়া আলোচনা চূড়ান্ত করেছে এফবিসিসিআই।
সংগঠনটির খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারের স্বার্থে বর্তমানে প্রযোজ্য কম হারে কর আরোপের সুযোগ তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির জন্য আরও অবারিত করা প্রয়োজন। এজন্য তালিকাভুক্ত কোম্পানির আয়ের ওপর আরোপিত করপোরেট করের হার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৩ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়। এদিকে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বিতরণ না করা লভ্যাংশের ওপর অতিরিক্ত পাঁচ শতাংশ কর আরোপের নিয়ম রয়েছে আয়কর অধ্যাদেশের ১৬ (বি) ধারায়। ওই ধারাটি বাতিলের প্রস্তাব করেছে এফবিসিসিআই।
তবে ব্যাংক, বিমা, অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মোবাইল ফোন অপারেটর, মার্চেন্ট ব্যাংকের ওপর আলাদা করের হার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে সিগারেট প্রস্তুতকারক কোম্পানির করের ওপর বর্তমান ব্যবস্থায় কোনো সংস্কারের প্রস্তাব করেনি শীর্ষ ব্যবসায়ীদের এ সংগঠন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনডেন্টিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি এমএস সিদ্দিকী শেয়ার বিজকে বলেন, কোম্পানিগুলোকে পাবলিকলি ট্রেডেড করতে উৎসাহিত করার জন্য করপোরেট কর কমানো হয়। কারণ যত বেশি অংশগ্রহণ হবে, তত বেশি বিনিয়োগ হবে। এটা অর্থনীতির জন্য লাভজনক হবে।
তালিকাভুক্ত নয় বা নন-পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির জন্যও করের হার কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব কোম্পানির জন্য বর্তমান করপোরেট করের হার ৩৫ থেকে কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে নন-পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানিগুলোকে ম্যানুফ্যাকচারিং ও নন-ম্যানুফ্যাকচারিং ক্যাটাগরিতে ভাগ করার কথা বলা হয়েছে। ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির জন্য করপোরেট কর ৩৫ শতাংশের পরিবর্তে ২৮ শতাংশ এবং নন-ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির কর ৩৫-এর বদলে ৩৩ শতাংশ করার প্রস্তাব করবে এফবিসিসিআই।
প্রস্তাবের ব্যাখ্যায় বলা হয়, ম্যানুফ্যাকচারিং এবং ট্রেডিং (নন-ম্যানুফ্যাকচারিং) উভয় কোম্পানির ক্ষেত্রে একই হারে কর আরোপণ যুক্তিযুক্ত নয়। ম্যানুফ্যাকচারিং খাত বৈদেশিক মুদ্রা আয় এবং ইমপোর্ট সাবমিশনের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করে। এতে অর্থনীতিতে অধিকতর মূল্য সংযোজন হয় এবং আয়কর বৃদ্ধি পায়। ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের এ অবদানের জন্য তাদের বাড়তি প্রনোদনা দেওয়া উচিত।
ব্যাংক, বীমা ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও ট্যাক্স কমানোর প্রস্তাব করেছে এফবিসিসিআই। সংগঠনটি বলছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যেগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত, সেগুলোর ওপর ৪০ শতাংশ কর আরোপিত আছে। একে দেড় শতাংশ কমিয়ে ৩৮ দশমিক ৫ শতাংশ করা প্রয়োজন। তালিকাভুক্ত না থাকা কোম্পানিগুলোর বর্তমান কর ৪২ দশমিক পাঁচ শতাংশ। এটাও দুই শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া অতিরিক্ত মুনাফা কর-সংক্রান্ত ধারা বাতিলের দাবি করা হয়েছে। এছাড়া মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার বর্তমান ৩৭ দশমিক পাঁচ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়।
করপোরেট করের হার কমানোর এসব প্রস্তাবের সপক্ষে যুক্তি দিয়ে এফবিসিসিআই বলেছে, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) ত্বরান্বিত করা এবং ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে বিনিয়োগ আকর্ষণ করার পাশাপাশি করপোরেট করের হার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা দরকার। আরও বলা হয়েছে, কর হার বেশি বলে পুঁজিবাজারের বাইরের কোম্পানিগুলো সঠিক আয় প্রদর্শনে নিরুৎসাহিত হচ্ছে। এজন্য এসব হার সহনীয় করার প্রস্তাব করা হয়েছে সংগঠনটির পক্ষ থেকে। এছাড়া আয়কর ও আমদানি শুল্কেও বিশেষ বিছু সংস্কারের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
Add Comment