সম্ভাবনাময় স্বর্ণদ্বীপ

নোয়াখালীর স্বর্ণদ্বীপ। উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও সম্ভাবনাময় জনপদ। দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ছে।
নোয়াখালী জেলা শহর থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে স্বর্ণদ্বীপের অবস্থান। স্বর্ণদ্বীপের বদৌলতে এ পথটুকুর সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। এ দ্বীপের ১৮ কিলোমিটার দক্ষিণে ভাসান চরের অবস্থান।
একসময় ‘জাহাইজ্যার চর’ নামে পরিচিত এ দ্বীপের কুখ্যাতি ছিল। গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কবলে পড়ে একটি কার্গো জাহাজ নিমজ্জিত হয়। পরবর্তীকালে জেগে উঠা চরের নামকরণ করা হয় জাহাইজ্যার চর। চট্টগ্রাম থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলাচলকারী পণ্যবাহী নৌযানসহ হাতিয়ার চরমজিদ রুটের শত শত পণ্য ও যাত্রীবাহী নৌযান ডাকাতের কবলে পড়ত। সংঘবদ্ধ দুর্ধর্ষ জলদস্যু চক্র উপকূলীয় ও মেঘনার পাঁচ হাজার বর্গকিলোমিটারজুড়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পর্যন্ত একাধিবার জলদস্যু বাহিনীর কাছে নাস্তানাবুদ হয়। ২০১০ সালে জাহাইজ্যার চরের বনদস্যু সর্দার বাসার মাঝি ও পরবর্তী সময়ে নাসির বাহিনীর প্রধান নাসির নিহত হওয়ার পর পুরো দস্যুরা এ স্থানটি ত্যাগ করে।
২০১৩ সালে সেনাবাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে জাহাইজ্যার চরের দায়িত্ব বুঝে নেয়। সে সময়ের ৩৬০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের স্বর্ণদ্বীপের আয়তন এখন প্রায় ৫০০ বর্গকিলোমিটার। স্বর্ণদ্বীপকে ৩৩ পদাতিক ডিভিশন ও কুমিল্লা অঞ্চলের হাতে ন্যস্ত করে সরকার। এর পরের ঘটনাপঞ্জি আশাজাগানিয়া দুর্গম চরটি সত্যিকারের স্বর্ণদ্বীপে পরিণত হয়।
২০১৮ সালের ৭ জানুয়ারি প্র্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বর্ণদ্বীপ পরিদর্শন করেন। তিনি বহুমুখী প্রকল্প পরিদর্শন করে মুগ্ধ হন।
স্বর্ণদ্বীপের দক্ষিণ পশ্চিমে মেঘনা নদী, পূর্বে সন্ধীপ, পশ্চিমে হাতিয়া উপজেলার হরণী, চানন্দী ইউনিয়নসহ চেয়ারম্যান ঘাট ও উত্তরে সুবর্ণচর উপজেলা।
নয়নাভিরাম স্বর্ণদ্বীপে ৬০ হাজার ঝাউগাছ, ভিয়েতনাম থেকে সিয়াম জাতের ১৫০০ নারিকেল গাছের চারা, দুই হাজার ফলদ গাছ রোপণ করা হয়েছে। রয়েছে গরু, মহিষ, হাঁস, ভেড়া, মুরগি ও মৎস্য খামার। এখানে মহিষের দুধ থেকে উৎপাদিত পনির দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়।
এখানে দুটি মাল্টিপারপাস ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়ণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। আরও ৩টি কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। নির্মিত দুটি আশ্রয়ণের প্রতিটিতে ২০ হাজার গ্যালন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং ও সৌরবিদ্যুৎ চালু করা হয়েছে। দুর্যোগকালীন প্রতিটি আশ্রয়ণে ৫০০ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে।
বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য এখানে দুটি লেক খনন করা হয়েছে। সুপেয় পানির জন্য এক হাজার মিটার গভীর সৌরবিদ্যুৎ চালিত পাম্প খনন ও বর্ষা মৌসুমে চলাচলের জন্য সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নদীভাঙন রোধে ৭২ হাজার একর ভূমিতে বনায়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
ইতোমধ্যে ছয় হাজার ঝাউগাছ চারা রোপণ করা হয়েছে। হেলিকপ্টার থেকে সিড বোম্বিংয়ের মাধ্যমে দুই টন কেওড়া বীজ বপন করা হয়েছে। স্বর্ণদ্বীপে চাষাবাদ ও বিভিন্ন খামারে স্থানীয় লোকজনকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এতে ১৭ হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উপকৃত হয়েছে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস বলেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত নোয়াখালীর উপকূল ও দ্বীপাঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে সরকারের সদিচ্ছা রয়েছে।

আকাশ মো. জসিম, নোয়াখালী

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০