মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ফান্ডে যারা বিনিয়োগ করেন, তারা দুইভাবে ক্যাপিটাল গেইন করতে পারেন। প্রথমত, শেয়ার ও ইউনিট বিক্রি করে। দ্বিতীয়ত, লভ্যাংশ প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে। বিশেষ করে যারা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করতে ভালোবাসেন, তারা লভ্যাংশ প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে ক্যাপিটাল গেইন করতে চান। কিন্তু সব সময় তাদের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটে না। কারণে-অকারণে লভ্যাংশ ঘোষণা করে না অনেক কোম্পানি। ২০১৭-১৮ আর্থিক বছরেও ২২ শতাংশ প্রতিষ্ঠান তাদের শেয়ারহোল্ডারদের কোনো ধরনের রিটার্ন বা লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। সম্প্রতি একটি মার্চেন্ট ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮ সালে তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে ৭৮ শতাংশ কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ড তাদের শেয়ারহোল্ডারদের বোনাস ও নগদ লভ্যাংশ প্রদান করেছে। এর মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডাররা ক্যাপিটাল গেইন করেছেন। অন্যদিকে ২২ শতাংশ কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ প্রদান করেনি। যেসব কোম্পানি লভ্যাংশ প্রদান করেছে, এর মধ্যে বেশিরভাগই ২০১১ সালের আগে তালিকাভুক্ত কোম্পানি। শুরুতে ভালো অবস্থানে থাকলেও নানা কারণে আর্থিক অবস্থা দুর্বল হয়ে গেছে ওইসব কোম্পানির, যার জেরে কোম্পানিগুলো বছরের পর বছর শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দিচ্ছে না।
এদিকে ২০১১ সালের পর তালিকাভুক্ত মিউচুয়াল ফান্ড ও কোম্পানিগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানকেই লভ্যাংশ প্রদান করতে দেখা গেছে। এ সময়ের মধ্যে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানকেই তাদের শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে দেখা যায়।
লভ্যাংশ প্রদান না করার কারণে বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪২ প্রতিষ্ঠান ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে অবস্থান করছে। এগুলো হচ্ছে: এবি ব্যাংক, অলটেক্স, আরামিট সিমেন্ট, বিডি সার্ভিসেস, বিডি ওয়েলডিং, বিচ হ্যাচারি, বিআইএফসি, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল, ঢাকা ডায়িং, ডেল্টা স্পিনিং, দুলামিয়া কটন, ইভিন্স টেক্সটাইল, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, জিবিবি পাওয়ার, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, গোল্ডেন সন, ইমান বাটন, ইনফরমেশন সার্ভিসেস, জুটস স্পিনার্স, কেয়া কসমেটিকস, কেপিপিএল, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, মেঘনা পিইটি, মিথুন নিটিং, নর্দান ইন্স্যুরেন্স, পদ্মা লাইফ, প্রাইম ফাইন্যান্স, প্রগ্রেসিভ ইন্স্যুরেন্স, সমতা লেদার, সাভার রিফ্র্যাক্টরিজ, শ্যামপুর সুগার, জিলবাংলা সুগার, সোনারগাঁও টেক্সটাইল, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স, তাল্লু স্পিনিং, তুংহাই নিটিং ও ইউনাইটেড এয়ার।
বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্টরা বলেন, পৃথিবীর সব দেশের পুঁজিবাজারেই এমন ঘটনা ঘটে। কোনো কারণে কোম্পানির ব্যবসা ভালো না হলে কিংবা প্রতিষ্ঠানের অন্য কোনো অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের কোনো ক্ষতিসাধন হলে তখন এসব কোম্পানি তাদের শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু আমাদের দেশে সুযোগসন্ধানী কোম্পানির সংখ্যা বেশি। তারা পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করে অনেক সময় আর কোম্পানি উন্নয়নের কথা মাথায় রাখে না। অনেক সময় ইচ্ছা করেই বিনিয়োগকারীদের বঞ্চিত করে তারা।
জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, আমাদের দেশের পুঁজিবাজারে ভালো মানের কোম্পানির অভাব রয়েছে। যে কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত রয়েছে, সেগুলোতে সুশাসন আছে বলেও মনে হয় না। কিছু কোম্পানি পুঁজিবাজারে এসে তাদের কোম্পানি উন্নয়নের কথা ভুলে যায়। পক্ষান্তরে নিজেরা শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে বাজার থেকে বের হয়ে যায়। যখন কোম্পানিতে তার নিজের শেয়ার থাকে না, তখন এমনিই তাদের কোম্পানি ভালো করার চিন্তা মাথায় থাকে না। ফলে কোম্পানির আর্থিক অবস্থাও ধীরে ধীরে খারাপ হতে থাকে। একসময় তারা আর শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে পারে না।
২০১৭-১৮ আর্থিক বছরের হিসাব
শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ ২২% কোম্পানি
