জয়পুরহাটে খাদ্য নিয়ন্ত্রকের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

শামীম কাদির, জয়পুরহাট: চলতি বোরো মৌসুমে সরকারিভাবে চাল ক্রয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে জয়পুরহাট জেলা খাদ্য বিভাগের বিরুদ্ধে। নীতিমালা উপেক্ষা করে মোটা অঙ্কের উৎকোচ নিয়ে সদর উপজেলার ২৬ চালকল মালিককে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ করেছেন ৭৫ চালকল মালিক। তাদের দাবি, কাগজে-কলমে চাল উৎপাদনের ক্ষমতা বাড়িয়ে তাদের অধিক পরিমাণ চাল সর্বরাহের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এতে ন্যায্য অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত হয়েছেন। এ অবস্থায় তদন্তের মাধ্যমে বরাদ্দ বিভাজনের দাবিতে ইতিপূর্বে তারা সংবাদ সম্মেলন এবং মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করেছেন।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চালকলের সংখ্যা ৫২৬টি। এর মধ্যে অটোমেটিক চালকল ২০টি, সেমি অটোমেটিক সাতটি এবং বাকিগুলো হাসকিং। চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় সরকারিভাবে চাল ক্রয়ের বরাদ্দ হয় ২১ হাজার ৪১৮ টন। যার মধ্যে সদরে পাঁচ হাজার ৫৮৬ টন, পাঁচবিবিতে পাঁচ হাজার ৯০, কালাইয়ে চার হাজার ৫৩১, ক্ষেতলালে চার হাজার ৪৯ এবং আক্কেলপুরে এক হাজার ৯৯০ টন। নির্ধারিত কমিটির মাধ্যমে প্রতিটি চালকলের পাক্ষিক চাল উৎপাদনের ক্ষমতা অনুযায়ী চালকল মালিকদের চাল সরবরাহের বরাদ্দ দেওয়া হয়।
কিন্তু সদর উপজেলায় কাগজে কলমে ২৬ চালকলে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে বেশি বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ করেছেন ৭৫ চালকল মালিক। তাদের অভিযোগ, বাস্তবে উৎপাদন ক্ষমতা না বাড়লেও শুধু কাগজে-কলমে উৎপাদন ক্ষমতা বেশি দেখিয়ে আটটি অটোমেটিক, পাঁচটি সেমি অটোমেটিক ও ১৩টি হাসকিং চালকল মালিককে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পাঁচ হাজার ৫৮৬ টন বরাদ্দের মধ্যে ২৬ চালকল মালিককে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রায় চার হাজার টন। আর বাকি ৭৫ চালকল মালিকদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এক হাজার ৫৮৬ টন। উৎকোচ নিয়ে ওইসব চালকল মালিকদের বরাদ্দ বেশি দেওয়া হয়েছে বলে তারা দাবি করেন।
এ নিয়ে বঞ্চিত ৭৫ চালকল মালিক গত ২০ আগস্ট জয়পুরহাট প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। তাতে অভিযোগ করেন, প্রত্যেক চালকলের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রতি কেজি চালে দেড় থেকে দুই টাকা উৎকোচ নিয়েছে জেলা খাদ্য বিভাগ। এ ঘটনা জানাজানির পর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে প্রতিবাদ জানিয়ে অভিযুক্ত ২৬ চালকলের উৎপাদন ক্ষমতা তদন্তের মাধ্যমে বরাদ্দ দেওয়ার আবেদন জানানো হয়। কিন্তু জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে কালক্ষেপণ করেন এবং অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও ওই ২৬ চালকল মালিকদের বাড়তি বরাদ্দ দেন।
একইভাবে জেলা খাদ্য বিভাগের সরকারি চাল ক্রয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদে বঞ্চিত চালকল মালিকরা গত ১২ সেপ্টেম্বর জয়পুরহাট কেন্দ্রীয় মসজিদ চত্বরের প্রধান সড়কে মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করেন। সেখানেও তারা ওই ২৬ চালকলের বিরুদ্ধে নীতিমালা উপেক্ষা করে চাল বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগ করেন।
কয়েকজন চালকল মালিক জানান, শুনতে পাচ্ছি, যেসব চালকল মালিক অভিযোগ করেছেন তাদের না-কি আগামীতে কোনো বরাদ্দই দেওয়া হবে না। এভাবে ভয় দেখানো হচ্ছে। সরকার প্রতি টন ধান থেকে চাল তৈরির বরাদ্দ দিচ্ছেন ৮৫০ টাকা। কিন্তু এ বিল তুলতে টেবিলে টেবিলে স্পিড ম্যানি ও ভ্যাটসহ দিতে হচ্ছে ৬৫০ টাকা। তাহলে কোটি কোটি টাকায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে আমরা চলব কীভাবে। উৎকোচ ছাড়া খাদ্য বিভাগে ব্যবসার কোনো ফাইল নড়ে না।
পুরানাপৈল বাজারের মেসার্স খন্দকার চালকলের মালিক দেলোয়ার হোসেন অভিযোগ করেন, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনিরুল ইসলাম অর্থের বিনিময়ে সদর উপজেলার ৭৫ চালকল মালিককে বঞ্চিত করে ২৬ জন চালকল মালিককে বিশেষ সুবিধা দিয়েছেন। সুবিধা নেওয়া ২৬ চালকলের মধ্যে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির জয়পুরহাট জেলা শাখার সভাপতি কেএম লায়েক আলী বঞ্চিত চালকল মালিকদের অভিযোগের বিরোধিতা করে গত ৯ সেপ্টেম্বর জয়পুরহাট প্রেস ক্লাবে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি দাবি করেন, সরকারের বিধি মোতাবেক ক্যাপাসিটি নির্ধারণ এবং উক্ত নির্ধারিত ক্যাপাসিটি মোতাবেক বরাদ্দকৃত চালের বিভাজন হয়েছে। কাজেই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
বঞ্চিত চালকল মালিক আবুল হাসনাত সংগঠনের জেলা সভাপতি কেএম লায়েক আলীর বিষয়ে বলেন, তার চালকল আগের অবস্থানে থাকলেও তিনি ক্যাপাসিটি বাড়িয়ে বেশি বরাদ্দ নিয়েছেন। ওই ২৬ চালকলের পাক্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা সঠিকভাবে তদন্ত করলেই অভিযোগের সত্যতা মিলবে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনিরুল ইসলাম সব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, জেলার সব চালকল মালিকের সঙ্গেই তার সুসম্পর্ক আছে। শুধু সম্পর্ক গড়তে পারেননি অভিযোগকারীদের নেতৃত্ব দেওয়া হাসনাত সাহেবের সঙ্গে। নির্ধারিত কমিটির মাধ্যমে প্রতিটি চালকলের পাক্ষিক উৎপাদন ক্ষমতার ভিত্তিতে বরাদ্দ বিভাজন করা হয়েছে। এখানে বাড়তি সুবিধা দেওয়া বা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অটো চালকল মালিকদের দ্বিগুণ বরাদ্দ দেওয়ার কথা সরকারি নীতিমালায় আছে। তাদের তাই দেওয়া হয়েছে। এখানে কাউকে বঞ্চিত করা হয়নি। কমিটির মাধ্যমে গোটা জেলায় চালকলগুলোর পাক্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা নতুন করে জরিপ করার জন্য উপজেলা খাদ্য অফিসগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়া গেলে বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যাবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০