নিজস্ব প্রতিবেদক: দ্রুততম সময়ের মধ্যে ত্রুটিপূর্ণ তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য তাগাদা দিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর (ডাইফ)। গত বুধবার ও গতকাল ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের ৩২৩ পোশাক কারখানার মালিকপক্ষের সঙ্গে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় দ্রুত সংস্কার কাজ শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
দুদিন অনুষ্ঠিত সভায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর এবং বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে বিভিন্ন কারখানাকে সংস্কারকাজ শেষ করার বিষয়ে কয়েক সপ্তাহের সময় বেঁধে দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংস্কারকাজ সম্পন্ন না করলে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর এবং বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে মালিকপক্ষকে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়।
বুধবার অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব কেএম আলী আজম বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি কারখানাগুলো সংস্কারকাজ সম্পন্ন করুক। সরকার কখনোই কোনো কারখানা বন্ধ করতে চায় না। যত বেশি কারখানা ব্যবসায় টিকে থাকতে পারবে, তত বেশি দেশের লাভ। কিন্তু কারখানাগুলো অবশ্যই পরিবেশবান্ধব হতে হবে। কারখানায় শ্রমিকের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হবে। এসব বিষয়ে যত ধরনের সহযোগিতা দরকার, আমরা তা দিতে প্রস্তুত। তবে কারখানার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বিচ্যুতি গ্রহণ করা হবে না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কারখানার ত্রুটিগুলো সংস্কার না করলে কারখানায় সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়াতে কঠোর হওয়া ছাড়া আমাদের উপায় থাকবে না।’
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের মহাপরিদর্শক শিবনাথ রায় বলেন, সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার জন্য ত্রুটিপূর্ণ কারখানার মালিকপক্ষকে বারবার চিঠি দেওয়া সত্ত্বেও তারা সংস্কারকাজ সম্পন্ন করছে না। এখন আপনাদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার আগে আমরা মনে করছি, আপনাদের সঙ্গে আলোচনায় বসা দরকার। জানা দরকার, আমাদের পক্ষ থেকে কোনো দুর্বলতা আছে কি না, অথবা আপনারা কোনো সমস্যায় আছেন কি না, সমস্যা থাকলে কীভাবে সমাধান করা যায়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংস্কার কার্যক্রম শতভাগ নিশ্চিত না হলে কারখানাকে লাইসেন্স প্রদান সম্ভব হবে না বলে তিনি জানান।
অনুষ্ঠানে বিজিএমইএ’র সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, ত্রুটিপূর্ণ কারখানাগুলোকে আমরা তিনটি ক্যাটেগরিতে ভাগ করেছি। আগামী ১২, ১৫ ও ১৯ অক্টোবর কারখানাগুলোর মালিকপক্ষের শুনানি নেওয়া হবে। এরপর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরে সুপারিশ পাঠানো হবে। পরে সরকার এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
ডাইফ ও বিজিএমইএ’র সম্মিলিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যেসব কারখানার ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন (ইউডি) ২০-এর ওপরে, সেগুলোর সংস্কার শেষ করতে দুই থেকে চার মাস এবং যেসব কারখানার ইউডি ২০-এর নিচে কিন্তু ১০-এর ওপরে, তাদের সংস্কারের জন্য ছয় মাস সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব রাখা হয়েছে। যাদের বার্ষিক ইউডি ১০-এর নিচে, তাদের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে কারখানাভিত্তিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে তাদের ইউডি বন্ধ করে দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ৯ অক্টোবর ঢাকা, নরসিংদী, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের ১৪৭ কারখানার মালিকপক্ষের সঙ্গে এবং ১০ অক্টোবর গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জের ১৭৬ কারখানার মালিকপক্ষের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়।
মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সভাপতি কায়েস জামান, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. জয়নাল আবেদীন, আরসিসি’র প্রকল্প পরিচালক একেএম সালেহউদ্দিন, যুগ্ম মহাপরিদর্শক ফরিদ আহম্মেদ, উপমহাপরিদর্শক আহমেদ বেলাল, সহকারী মহাপরিদর্শক আবদুল মুমিন, বিজিএমইএ’র পরিচালক রেজওয়ান সেলিম, উপদেষ্টা মো. লিয়াকত হোসেন ও অন্যান্য পদস্থ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
পোশাক কারখানার দ্রুত সংস্কারের তাগিদ
