উচ্চশিক্ষায় চমৎকার গন্তব্য হতে পারে পর্তুগালের শিক্ষাব্যবস্থা বেশ উন্নত ও আধুনিক। দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এখানে সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই। এবার আসুন টিউশন ফি প্রসঙ্গে। তাদের টিউশন ফি তুলনামূলক কম। এমনকি জীবনযাপনের জন্য খুব বেশি অর্থও খরচ করতে হয় না। জীবনযাত্রার খরচ পশ্চিম ও উত্তর ইউরোপের দেশগুলোর চেয়ে অনেক কম। মাসে মাত্র ২৫০ থেকে ৩৫০ ইউরোর মধ্যে থাকা-খাওয়ার খরচ মেটাতে পারে একজন শিক্ষার্থী। তবে ব্যক্তিগত খরচের পুরোটাই নির্ভর করে জীবনযাপনের ওপর।
উল্লিখিত কারণে উচ্চশিক্ষার জন্য পর্তুগাল আপনার চমৎকার গন্তব্য হতে পারে। পর্তুগাল সম্পর্কে কয়েকটি তথ্য জেনে নিতে পারেন। দেশটির অবস্থান ইউরোপের দক্ষিণ-পশ্চিমে। দেশটির পশ্চিমে রয়েছে স্পেন। আর বাকি সীমান্তজুড়ে রয়েছে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর। ১৫ ও ১৬ শতকে ইউরোপের প্রথম রাষ্ট্র হিসেবে তারা একটি বৃহৎ সাম্রাজ্য গড়ে তোলে। বিশ্বের নানা অঞ্চলে তাদের উপনিবেশ ছিল। এ কারণে আজও বিশ্বে প্রচলিত কয়েকটি প্রথম সারির ভাষার মধ্যে পর্তুগিজ অন্যতম। ১৭৫৫ সালে দেশটির রাজধানী লিসবনে বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়। এতে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশটির অর্থনীতি। খর্ব হয় সামরিক শক্তিও। ১৮২২ সালে তাদের অধীনে থাকা ব্রাজিল স্বাধীন হয়। ১৯১০ সালে রাজতন্ত্রের পতন ঘটে। ১৯৭৫ সালে আফ্রিকার উপনিবেশ থেকে নিজেদের কর্তৃত্ব উঠিয়ে নেয় দেশটি।
শীতপ্রধান দেশটির উত্তর দিকে প্রচুর বৃষ্টি হয়। দক্ষিণ দিক তুলনামূলক গরম ও শুষ্ক। দেশটির নাগরিকরা পর্তুগিজ নামে পরিচিত। ভাষার নামও পর্তুগিজ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র এটি। মুদ্রার নাম ইউরো। ১৯৯১ সালের ২৫ জুন সেনজেনভুক্ত অঞ্চলে নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করে পর্তুগাল।
পর্তুগালের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তাত্ত্বিক, ব্যবহারিক ও গবেষণাভিত্তিক শিক্ষাপদ্ধতি চালু রয়েছে। তিনটি পর্যায়ে শিক্ষাপ্রদান করা হয়। এগুলো হচ্ছে ব্যাচেলর, মাস্টার্স ও ডক্টরাল প্রোগ্রাম। ব্যাচেলর প্রোগ্রামকে ফার্স্ট সাইকেল অব স্টাডি বলা হয়। সেকেন্ড সাইকেল অব স্টাডি হচ্ছে মাস্টার্স। আর ডক্টরাল প্রোগ্রামকে ৩য় সাইকেল অব স্টাডি বলা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ালেখার ভাষা হিসেবে পর্তুগিজই প্রাধান। ব্যাচেলর, মাস্টার্স ও ডক্টরাল প্রোগ্রামের বেশিরভাগই পর্তুগিজ ভাষায় পড়ানো হয়। পর্তুগিজের পাশাপাশি ইংরেজিও চালু রয়েছে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্তুগিজ ও ইংরেজি উভয় ভাষাতেই পড়াশোনা করা যায়। তাই পছন্দের বিষয় খুঁজে নিতে ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাঁটি করতে পারেন। দেশটির সেরা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকানা পেয়ে যাবেন http://www.4icu.org/pt/-এ ওয়েবসাইটে।
প্রচলিত প্রায় সব বিষয়ে পড়ালেখা করার সুযোগ রয়েছে। প্রকৌশল থেকে শুরু করে আইন, মেডিসিন, অর্থনীতি প্রভৃতি বিষয়ে পড়া যায়। বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও মানবিক শাখার প্রায় সব বিষয় পেয়ে যাবেন। সেখান থেকে পছন্দের বিষয়টি খুঁজে আবেদন করতে হবে।
সাধারণত দুটি সেশনে ভর্তির সুযোগ দিয়ে থাকে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়। একটি নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারিতে। অন্য সেশন এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত। তবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব কিছু সেশন মেনে চলে। যেমন কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে নানা সময়ে ভর্তির সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়।
আবেদন প্রক্রিয়া
* ভর্তির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অনলাইন পোর্টালে আবেদন করতে হবে।
* ফি প্রদান করতে হবে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো আবেদন ফি নেই।
* সর্বশেষ পরীক্ষার সনদপত্রের স্ক্যান কপি।
* সিভি। সিভিটি ইউরোপাস হতে হবে। আজই অনলাইনে এই সিভি তৈরি করে ফেলুন।
* ছবি।
* মটিভেশনাল লেটার।
* রিকমেন্ডেশন লেটার।
* পাসপোর্টের স্ক্যান কপি। অনেক ক্ষেত্রে আবেদনের জন্য পাসপোর্টের দরকার পড়ে না।
এসব কাগজপত্র অনলাইন পোর্টালে সংযুক্ত করতে হবে। বিস্তারিত জানার জন্য ভিজিট করুন www.studyinportugal.edu.pt ওয়েবসাইটে। কোনো প্রশ্ন থাকলে infoÑStudyInPortugal.edu.pt এখানে ই-মেইল করুন। সবচেয়ে ভালো হয়, বিশ্ববিদ্যালয় বা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ই-মেইল করলে।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি ই-মেইল পাবেন। সেখানে ইন্টারভিউর সময় ও তারিখ উল্লেখ করা থাকবে। নির্দিষ্ট দিনে স্কাইপে সাক্ষাৎকার দিতে হবে। সাধারণত সপ্তাহ দু’একের মধ্যে রেজাল্ট জানতে পারবেন।
ধরে নিচ্ছি ভর্তি হয়েছেন। এবার ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। আমাদের দেশে পর্তুগালের কোনো দূতাবাস নেই। তাই ভিসার জন্য দিল্লিতে যেতে হবে। সেখানে লং টার্ম ন্যাশনাল ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। এজন্য নিচের নিয়মগুলো অনুসরণ করতে পারেন।
* প্রথমে ভিসার জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে।
* এরপর ভিসা ফরম পূরণ করতে হবে।
* অবশ্যই রেসিডেন্স ভিসার জন্য আবেদন করবেন।
* পাসপোর্টের মূল কপি ও ৩৫ী৪০ মাপের দুই কপি ছবি সঙ্গে রাখুন।
* ১২০ দিনের স্বাস্থ্যবিমা করতে হবে।
* পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে।
* বিশ্ববিদ্যালয়ের অফার লেটার সঙ্গে রাখুন।
* পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সর্বশেষ পরীক্ষার সনদপত্র ও ট্রান্সক্রিপ্টের সত্যায়ন করিয়ে রাখুন। ভিসা আবেদনের সময় এর ফটোকপি জমা দিতে হবে।
* একোমোডেশন লেটারের ব্যবস্থা করুন। সাধারণত তিন মাসের দেখাতে হয়।
* ব্যাংকের সনদপত্র ও স্টেটমেন্ট।
* সর্বশেষ বিশ্ববিদ্যালয়ের এনওসি।
* ভিসা ফি।
* ফ্লাইট বুকিং।
এসব কাগজপত্র দেখতে চাইবেন ভিসা অফিসার। এরপর তিনি কিছু প্রশ্ন করবেন। সাধারণত শিক্ষা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, চাকরি প্রভৃতি বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। ভিসা প্রসেসিংয়ের জন্য প্রায় ৩০ দিন লেগে যায়।
পর্তুগালে প্রথম ছয় মাসের খরচ নিয়ে যাওয়া ভালো। শিক্ষার্থী হিসেবে সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজের সুযোগ পাবেন। তবে খণ্ডকালীন কাজের জন্য একটু কষ্ট করতে হবে। প্রথম দিকে কাজের সন্ধান পাওয়া বেশ কষ্টের। কাজ ও জীবনযাপনের জন্য পর্তুগিজ ভাষা শিখে নেওয়া ভালো। সহজ ভাষা এটি। তাই অল্প সময়ে রপ্ত করতে পারবেন।
Add Comment