শেয়ারবাজারে লাখো মানুষ সর্বস্বান্ত সালমানের কারণে: আনু মুহাম্মদ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানের নাম বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের তালিকায় আসার বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, ‘আপনারা শুনেছেন, তিনি বাংলাদেশের সবচেয়ে বিত্তবান ব্যক্তি হয়েছেন। অথচ  সেই লোকের কারণে শেয়ারবাজারে লাখ লাখ মানুষ সর্বস্বান্ত হয়েছে। একেকটা কোম্পানি খুলে তিনি মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।’

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে শ্রমজীবী সংঘের তৃতীয় সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর ও খনিজসম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ এসব কথা বলেন।

গত মঙ্গলবার চীনের গবেষণা প্রতিষ্ঠান হুরুন গ্লোবাল বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তিদের একটি তালিকা প্রকাশ করে। ওই তালিকায় একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে সালমান এফ রহমানের নাম উঠে আসে।

সালমান এফ রহমানের বিষয়ে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘শেয়ারবাজারে একেকটা কোম্পানি করে, প্রতারণার জন্য সেখানে আরও কিছু লোককে নিয়োগ দিয়ে, মাসে মাসে তাদের বেতন দেয়। তারা ওখানে কৃত্রিম চাহিদা  তৈরি করে; তারপর প্রচুর শেয়ার বিক্রি করে। পরে তা বিক্রির মাধ্যমে টাকা গায়েব করে দেয়। এমনকি কিছুদিন আগে তিনি জিএমজি এয়ারলাইনস খুলেছিলেন। আর এটাতেও শেয়ারের মাধ্যমে হাজার  কোটি উঠিয়ে মেরে দিয়ে সেখান থেকে সরে পড়লেন। জিএমজি এয়ারলাইনস এখন আর নেই।’

আনু মুহাম্মদ বলেন, খণ্ড খণ্ড আন্দোলনের মাধ্যমে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থাকে উৎখাত করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন সব শোষিত ও নির্যাতিত মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা।

তিনি বলেন, পুঁজিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদের মুক্ত করতে না পারলে দাসত্ব থেকে বের হওয়া সম্ভব নয়। মাত্র এক শতাংশ মানুষ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের এক ধরনের সম্মতি নিয়েই শোষণ চালাচ্ছে। তার মানে শুধু বল প্রয়োগ করেই যে তারা ক্ষমতায় আছে, তা ঠিক নয়।

শিক্ষা, সংস্কৃতি ও গণমাধ্যমের সাহায্যে শাসকগোষ্ঠী নিজেদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণমাধ্যমে আমরা দেখি সারা দিন সাধারণ মানুষকে বলা হচ্ছে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, নারীর ক্ষমতায়নসহ নানা কথা। আমরা যদি বুদ্ধি দিয়ে তাদের এই মিথ্যা প্রচার না বুঝতে পারি, তাহলে এ অন্যায়  থেকে নিজেদের বাঁচাতে পারবো না।

শ্রমজীবী সংঘের সম্মেলন উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি গাইবান্ধায় সাঁওতাল পল্লিতে পুলিশের জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘যারা মানুষকে নিরাপত্তা  দেবে, তারাই মানুষকে উচ্ছেদ করছে। মানুষের বাঁচার অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। এটিই হচ্ছে রাষ্ট্রের চরিত্র। এই রাষ্ট্র মানুষকে নিরাপত্তা দিচ্ছে না। নিরাপত্তা কেড়ে নিচ্ছে।’

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার হুরুন গ্লোবালের তালিকায় বিশ্বের দুই হাজার ২৫৭ ধনকুবেরের মধ্যে এক হাজার ৬৮৫ নম্বরে রয়েছেন সালমান এফ রহমান। তার সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয় ১৩০ কোটি ডলার। যদিও সম্পদের হিসাবের সঙ্গে একমত নন সালমান এফ রহমান। এক বিবৃতিতে তিনি জানান, ‘বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী বেক্সিমকো গ্রুপের নিট সম্পদের পরিমাণ ১৩০ কোটি ডলারের কাছাকাছি হতে পারে। তবে তার ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ এটা নয়।’

সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক মোদাচ্ছের হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন শ্রমজীবী সংঘের সভাপতি আবদুল আলী, সহ-সভাপতি মজিবুর রহমান, সমাজতান্ত্রিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার  মোর্শেদ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক, কমিউনিস্ট ইউনিয়নের সমন্বয়ক ইমাম গাজ্জালী ও জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চের সভাপতি মাসুদ খান।