এবার তুলা আমদানির ঘোষণায় এলো বালি

সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম:চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে একই কায়দায় মিথ্যা ঘোষণায় চলছে পণ্য আমদানি। ধরণা করা হচ্ছে একই চক্র এর সঙ্গে জড়িত। তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে করছে মানি লন্ডারিং। সম্প্রতি ১৪ দিনের মাথায় চক্রটির দুটি চালান আটক করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস। প্রথমটি গত ৯ অক্টোবর ঘটে। এতে ২৫ টন সুতা আমদানির কথা বলে কনটেইনার-ভর্তি বালি নিয়ে আসেন আমদানিকারক। গতকাল একই কায়দায় আরও একটি চালান আটক করা হয়। এতে স্ট্যাপল ফাইবার বা তুলার বদলে ৯১৬ ব্যাগ ভর্তি ২০ টন বালি পাওয়া যায়, যদিও ঘোষণা র্ছিল ২৩ টন তুলা আমদানির।

চালান দুটির একই রফতানিকারক। চীন থেকেও এসেছে একই জাহাজে। এতে সংশ্লিষ্টরা ধরণা করছে, একই জালিয়াত চক্র দ্বারা বারবার হচ্ছে মানি লন্ডারিং।

চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানাধীন ৮২৯ জুবিলি রোডের আনজুমান শপিং কমপ্লেক্সের মেসার্স সৈয়দ ট্রেডাসের নামে চালানটি চীন থেকে বন্দরে আসে। গত ১৬ অক্টোবর চালানটির বিল অব এন্ট্রি (সি-১৬০৪১৫৫) দাখিল করা হয় কাস্টম হাউসে। আর বিল অব এন্ট্রিতে ঘোষণা অনুযায়ী ২৩ টন স্ট্যাপল ফাইবার বা তুলা আমদানি করার কথা। কিন্তু ইপিজেড এলাকার বেসরকারি কিউএনএস ডিপোতে ৪০ ফুট লম্বা কনটেইনার খোলার পর দেখা যায় ৯১৬ ব্যাগ ভর্তি ২০ টন বালি। আর এই চালানের আমদানি মূল্য দেখিয়েছিল ৩০ লাখ ৬৪ হাজার ৫১৫ টাকা, যার বিপরীতে পাঁচ শতাংশ হারে এক লাখ ৫৭ হাজার টাকা শুল্ককর পরিশোধ করা হয়। এই চালান খালাসের দায়িত্বে ছিল চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ বাদামতলি এলাকার সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এসজিএস কোম্পানি। আর ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি করা হয়েছে।

এর ১৪ দিন আগে (গত ৯ অক্টোবর) গাজীপুরের মির্জাপুরের এনজেড এক্সেসরিজ লিমিটেড বন্ডের আওতায় চীন থেকে ২৫ টন সুতা আমদানির বদলে চট্টগ্রাম বন্দরে এক কনটেইনার বালি নিয়ে এসেছিল। কিন্তু সেদিন বিকালে চট্টগ্রাম বন্দরে এ চাঞ্চল্যকর ঘটনা ধরা পড়ে কাস্টম হাউসের কর্মকর্তাদের হাতে, যার আমদানিমূল্য ছিল ২৭ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। ওই আমদানির বিপরীতে শুল্ক আসে ১৬ লাখ ১৬ হাজার ৮৯৮ টাকা। আর চালানের জন্য এক্সিম ব্যাংক থেকে এলসি করা হয়েছিল। কনটেইনরটি খালাসের দায়িত্বে ছিল চট্টগ্রাম আগ্রাবাদের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট কালকিনি কমার্শিয়াল এজেন্সিজ লিমিটেড।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা চালান দুটির বিল অব এন্ট্রি বিশ্লেষণ করে বলছেন, আমদানিকারক আলাদা হলেও রফতানিকারক চীনের একই প্রতিষ্ঠান সিঞ্জটাই ইয়ামেইজহি টেক্সটাইল কোম্পানি লিমিটেড। চীন থেকে থরস্বীন্ড নামের একটি জাহাজে করে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনারগুলো আসে। আর এক কনটেইনারে সুতা এবং অন্য কনটেইনারে তুলা আমদানির কথা থাকলেও দুই কনটেইনারে বালিভর্তি বস্তা পাওয়া যায়। এতে বোঝা যায়, এই চালানের বিপরীতে মানি লন্ডারিং হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট চালানের সঙ্গে একই চক্র জড়িত থাকতে পারে।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের এআইআর শাখার দায়িত্বে থাকা উপ-কমিশনার নূর-উদ্দিন মিলন শেয়ার বিজকে জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটি মানি লন্ডারিং। তবে এটি চোরাচালান, নাকি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতারণা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কিন্তু অতীতে এ রকম সব চালানই মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে জড়িত ছিল। তাই এ চালান দুটি নিয়ে আমরা বিশেষভাবে তদন্ত করছি। কারণ আমদানিকারক আলাদা হলেও রফতানিকারক একই প্রতিষ্ঠান। এছাড়া তাদের আরও চালান আছে কি না খতিয়ে দেখা হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০