কৃষিজমির ওপর কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান নয়

কৃষক লীগের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের উন্নয়ন এখনও অনেকাংশে কৃষির ওপর নির্ভরশীল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবাদি জমির ক্ষতিসাধন করে যত্রতত্র শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে না তোলার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নের জন্য শিল্পায়নে যাব; কিন্তু কৃষিকে বাদ দিয়ে নয়। কেননা, দেশের উন্নয়ন এখনও অনেকাংশে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। তিনি বলেন, তিনফসলি জমিতে তো শিল্প-কারখানা করতেই পারবে না। আর একফসলি যেসব জমিতে চাষ হয় না—সেখানে শিল্পপ্রতিষ্ঠান হবে।

গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ কৃষক লীগের ১০ম জাতীয় কাউন্সিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

সরকারের ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর অর্থ হলো, আমাদের কোনো কৃষিজমি যাতে নষ্ট না হয়। যেখানে-সেখানে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যাবে না। তিনি বলেন, যারা শিল্পপ্রতিষ্ঠান করতে চান, তাদের ওই অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হবে এবং সব ধরনের সেবা সেখানে দেওয়া হবে। এ সময় তার সরকারের পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক করে দেওয়ার তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী উৎপাদিত পণ্য সমবায়ের মাধ্যমে বাজারজাতকরণের উদ্যোগের উল্লেখ করেন।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন। বক্তৃতা করেন কৃষক লীগ সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামসুল হক রেজা, সহসভাপতি শরিফ আশরাফ হোসেন প্রমুখ ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ফসল বহুমুখীকরণের অংশ হিসেবে ১০৮ ধরনের উচ্চফলনশীল ধানের জাত আবিষ্কার করেছি। লবণাক্ততা-সহিষ্ণু, খরাসহিষ্ণু ও বন্যার পানিসহিষ্ণু ধান এবং কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণের অংশ হিসেবে ৪৪২ ধরনের কৃষি প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেছি।

প্রধানমন্ত্রী এবার ধানকাটার মৌসুমে ছাত্রলীগকে মাঠে গিয়ে ধান কাটার কাজে কৃষককে সহায়তার আহ্বান জানিয়েছিলেন উল্লেখ করে বলেন, এতে লজ্জার কিছু নেই। নিজের কাজ নিজে করায় লজ্জার কিছু থাকে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিজের ফসল নিজে উৎপাদন করব। নিজের খাবার নিজে খাব। এতে লজ্জার কী আছে।’

ইউনিয়ন পর্যায়ে ডিজিটাল সেন্টার এবং ইন্টারনেট সেবাকে ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে তার সরকার ডিজিটাল কৃষির প্রবর্তন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাড়ে তিন হাজার ইউনিয়নে আমরা পৌঁছে গেছি এবং ইনশাল্লাহ অচিরেই সাড়ে চার হাজার ইউনিয়নেও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে যাবে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ, ই-কৃষি চালু, কৃষকের জন্য কলসেন্টার চালু, ৪৯৯টি কৃষি তথ্যকেন্দ্র স্থাপন এবং সারা দেশে পাঁচ হাজার ২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

মোবাইল ফোনকে বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দেওয়ায় প্রতিযোগিতামূলক স্বল্পমূল্যে কৃষক মোবাইল ফোন কিনে সরকারের বিভিন্ন ডিজিটাল সেবা নিতে পারছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

তার সরকার এরই মধ্যে জাতীয় কৃষিনীতি-২০১৫ প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়ন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার সরকার ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের প্রেসক্রিপশন অগ্রাহ্য করেও কৃষি ভর্তুকি অব্যাহত রেখেছে। অথচ ওই প্রেসক্রিপশন মেনে নিয়েছিল বিএনপি।

তিনি বলেন, তার সরকার ২০১৯-২০ সালের বাজেটে কৃষি খাতের জন্য ১৪ হাজার ৫৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে, কৃষি প্রণোদনা ও পুনর্বাসন চালুর অংশ হিসেবে এক হাজার ২৭ কোটি টাকা প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। যার মাধ্যমে ৭৯ লাখ ৯৬ হাজার ২৭৬ কৃষক উপকৃত হচ্ছে। তাছাড়া, দুই কোটি আট লাখ ১৩ হাজার কৃষকের মাঝে কৃষি উপকরণ কার্ড বিতরণ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সরাসরি ভর্তুকির টাকা কৃষকের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। প্রায় এক কোটির ওপর কৃষকের এই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলারও তথ্য দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশ। আমাদের প্রবৃদ্ধি আজ আট দশমিক ১৩। এর পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান কৃষকের।

তিনি বলেন, হাওর এলাকার কৃষক অকাল বন্যায় প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া উপকূলীয় এলাকার কৃষকও প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়। তাদের জন্য কোনো বিমা ব্যবস্থা চালু করা যায় কি না—সেটাও আমাদের সরকার ভাবছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০