মালিবাগে ফ্লাইওভার দুর্ঘটনা নিহত ১, আহত ২

নিজস্ব প্রতিবেদক: মালিবাগ রেলগেটের দুই পাশে দুই পিলারের ওপর বসানো ছিল একটি গার্ডার। তার পাশে আরেকটি গার্ডার স্থাপনের কাজ শুরু করা হয় রোববার দিবাগত রাতে। এ জন্য আগেরটির বাঁধন খুলে দেওয়া হলে, তা নিচে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটে। এ দুর্ঘটনায় একজন পথচারী মারা যান। আহত হয়েছেন আরও দুজন।

ঘটনার সময় উপস্থিত ও স্থানীয়দের কয়েকজন জানান, প্রায় এক মাস আগে দুটি গার্ডার মালিবাগ রেল ক্রসিংয়ের উপরের অংশে বসানোর জন্য তৈরি করে আনা হয়। গত মাসের মাঝামাঝির দিকে গার্ডার দুটি আনা হয়েছিল। একদিন মাঝরাতে তা পিলারের উপরে তোলার সময় ১টি ক্রেনেই ভেঙে যায়। গতকাল অপরটিও পড়ে দুর্ঘটনা ঘটে।

উদ্ধারের দায়িত্বে থাকা ফায়ার সার্ভিসের খিলগাঁও স্টেশনের সিনিয়র কো-অর্ডিনেটর জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মালিবাগ রেলগেটের দুদিকের পিলারের দূরত্ব অনেক বেশি। এজন্য গার্ডার বসানো হয়েছিল স্বাভাবিকের চেয়ে বড় আকারের। এতে ভারবহন করতে না পেরে মাঝ বরাবর ভেঙে পড়তে পারে বলে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে।

জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, রোববার রাতে পিলারের ওপর আরেকটি গার্ডার ওঠানোর জন্য আগেরটির বাঁধন খুলে দেওয়া হলে, তা নিচে পড়ে গেছে বলে জানতে পেরেছি। এতে তমা কনস্ট্রাকশনের কোনো ত্রুটি নেই। তবে পরপর দুটি গার্ডার ভেঙে যাওয়ার ঘটনার বিষয়টি তার জানা নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এদিকে ফ্লাইওভারের দুর্ঘটনায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে অবহেলা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। অবহেলার বিষয়টি প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী, ব্যবস্থা নেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। এছাড়া নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাও বলেছেন তিনি।

দুর্ঘটনাকে ‘অনাকাক্সিক্ষত’ বলে দুঃখ প্রকাশ করে মেয়র বলেন, ঘটনা তদন্তে এলজিইডির অতিরিক্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা অনাকাক্সিক্ষত এবং অনভিপ্রেত। ঘটনায় কেউ দোষী প্রমাণিত হলে তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। তবে কমিটি কতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে কিংবা ক্ষতিপূরণের পরিমাণ সম্পর্কে কিছু জানাননি মেয়র।

রোববার রাত সোয়া ২টার দিকে দুর্ঘটনার পর ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা রেলপথে পড়া গার্ডার ভাঙা অংশ কেটে আলাদা করে রাস্তা চলাচল উপযোগী করেন। তিন ঘণ্টার চেষ্টায় গার্ডারের একটি অংশ কেটে সরিয়ে নেওয়া হয়। সোমবার সকাল ৬টার পর আবার ট্রেন চলাচল শুরু হয়।

দুর্ঘটনায় নিহত স্বপন স্থানীয় একটি হোটেলের কর্মী। আর আহত হয়েছেন এলজিইডির প্রকৌশলী পলাশ প্রামাণিক ও তমা কনস্ট্রাকশনের নিরাপত্তা কর্মী নুরুন্নবী। এদের মধ্যে পলাশ প্রামাণিকের একটি পা কেটে ফেলতে হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন মগবাজার ফ্লাইওভারের নির্বাহী প্রকৌশলী সুশান্ত পাল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুটি কারণে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। প্রথম কারণটি নিম্ন মানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হলে বসানো গার্ডার মাঝ বরাবর ভেঙে পড়তে পারে। আর দ্বিতীয় কারণটি হলো, দুই পিলারের মাঝে দূরত্ব বেশি হলে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

দুর্ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামছুল হক বলেন, ত্রুটিপূর্ণ নকশার কারণে আগে থেকেই ফ্লাইওভারটি ঝুঁকিপূর্ণ। এর সঙ্গে যথাযথ তদারকির অভাব তো রয়েছে। তবে এবারের দুর্ঘটনার মূল কারণ ভিন্ন কিছু।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা-টঙ্গী রেলপথ চার লেন করার জন্য নিরাপদ দূরত্ব রেখে মালিবাগ রেলগেটের দুই পাশে পিলার করা হয়েছে। এতে গার্ডার স্থাপনে কিছুটা ঝুঁকি ছিল। তবে সঠিকভাবে ও সুষ্ঠুমানের সামগ্রী দিয়ে গার্ডার নির্মাণ করলে দুর্ঘটনা ঘটার কথা নয়। এক্ষেত্রে দুই ধরনের সমস্যাই থাকতে পারে।

উল্লেখ, ঠিক এক বছর আগে গত বছরের ১৬ মার্চ মগবাজার নির্মাণাধীন এ ফ্লাইওভারের ওপর থেকে রড পড়ে গিয়ে একজন নির্মাণ শ্রমিক নিহত হন।