চট্টগ্রামে গ্যাসলাইন বিস্ফোরণে নিহত ৭

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের পাথরঘাটা এলাকার এক বাড়িতে গ্যাসলাইনের রাইজার বিস্ফোরণে শিশুসহ সাতজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১৫ জন। গতকাল সকাল ৯টায় পাথরঘাটা ব্রিকফিল্ড রোডের বড়–য়া বিল্ডিংয়ের (কুঞ্জমণি ভবন) নিচতলায় ওই বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের পর ভবন দুটির দেয়ালের একাংশ ধসে পড়ে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।

কোতোয়ালি থানার ওসি মো. মহসীন জানান, ঘটনাস্থল থেকে ১৭ জনকে আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পর সেখানে সাতজনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। বিস্ফোরণে ওই ভবনের নিচতলার দেয়াল ও সীমানাপ্রাচীর ধসে রাস্তার ওপর পড়ায় পথচারীরা হতাহত হন। বড়–য়া বিল্ডিংয়ের পাশাপাশি উল্টো দিকের জসীম বিল্ডিংয়ের নিচতলার দোকানও বিস্ফোরণের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এ সময় ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক পূর্ণচন্দ্র মুৎসুদ্দী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বড়–য়া বিল্ডিংয়ের নিচতলায় সীমানাপ্রাচীরের পাশেই ওই বাড়ির গ্যাস রাইজার ছিল। আর বিস্ফোরণটি নিচতলাতেই হয়েছে। কিন্তু বাড়ির মালিক চুরি হওয়ার ভয়ে রান্নাঘরের পাশে আরেকটি রুম বানিয়ে গ্যাসের রাইজারটি ঘরের ভেতরে ঢুকিয়ে ফেলেন। আর সেখানে স্যাঁতসেঁতে হয়ে লাইনে মরিচা পড়ে যায়। এতে রাইজার লিকেজের কারণে গ্যাস বের হয়ে পুরো রুমে জমে যায়। সকালে বাসায় নাস্তা খাওয়া অথবা পূজার ঘরে ম্যাচ জ্বালানোর সময় তাতে বিস্ফোরণ ঘটে থাকতে পারে। তবে গ্যাসলাইনের রাইজার থেকে সব সময় লিকেজের কারণে গ্যাস বের হয়। কিন্তু রাইজারগুলো বাড়ির বাইরে থাকার ফলে লিকেজের কারণে গ্যাস বাতাসে মিশে যায়। এতে তেমন দুর্ঘটনা ঘটে না। কিন্তু বড়–য়া বিল্ডিংয়ে রাইজার রুমের ভেতরে থাকায় এর ভয়াবহতা বেড়েছে। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া পাঁচতলা বড়ুয়া বিল্ডিংয়ের বর্তমান মালিক অমল বড়–য়া ও টিটু বড়–য়া।’

চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক জসীম উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসি। ১৬ জনকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে পাঠিয়েছি। সেখানে সাতজন মারা গেছেন। নন্দনকানন, চন্দনপুরা ও আগ্রাবাদ এ তিন স্টেশনের ১০টি গাড়ি উদ্ধারকাজ শুরু করে। গ্যাসলাইন পুরোনো ছিল। বিস্ফোরণে দুটি আবাসিক ভবনের প্রাচীর ও সড়কের সীমানাপ্রাচীর ধসে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের দোতলা পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছি।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (চমেক) পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপ-পরিদর্শক আলাউদ্দিন তালুকদার বলেন, পাথরঘাটায় বিস্ফোরণের পর আহতাবস্থায় ১৬ জনকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তাদের মধ্যে সাতজনকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহতদের মধ্যে চার পুরুষ, দুই নারী ও এক শিশু রয়েছেন। চমেক থেকে জানা যায়, আহত ১০ জনের মধ্যে ক্যাজুয়ালটিতে পাঁচজন, কার্ডিওলজি বিভাগে দুজন এবং অর্থোপেডিক, নিউরো ও বার্ন ইউনিটে একজন করে ভর্তি আছেন।

নিহতদের মধ্যে ছয়জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন কক্সবাজারের উখিয়ার নুরুল ইসলাম (৩১), পটিয়ার মেহেরআটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা অ্যানি বড়ুয়া (৪০), রাঙ্গুনিয়ার কাজল নাথের মেয়ে কৃষ্ণকুমারী স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অর্পিতা নাথ (১৬), নতুন ব্রিজ এলাকার শ্রমিক নুরুল ইসলাম (৩০), পাথরঘাটার জুলেখা খানম ফরজানা (৩০) ও তার ছেলে আতিকুর রহমান (৮)।

বিস্ফোরণে হতাহতের খবর পেয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, আহতদের চিকিৎসার ব্যয়ভার সিটি করপোরেশন থেকে বহন করা হবে।

ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে কমিটিকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের প্রত্যেককে জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হবে এবং আহতদের চিকিৎসাও দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০