নতুন আইনের প্রতিবাদে জেলায় জেলায় পরিবহন ধর্মঘট

শেয়ার বিজ ডেস্কনতুন সড়ক পরিবহন আইনের প্রতিবাদে এবং এর কিছু বিধান সংশোধনের দাবিতে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় কোনো ধরনের ঘোষণা ছাড়াই অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট পালন করছেন বাসচালক ও শ্রমিকরা। গতকাল সকাল থেকে ধর্মঘটের কারণে এ অঞ্চলে বাস-মিনিবাস চলাচল বন্ধ থাকার খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে রাজশাহী বিভাগের কয়েকটি জেলায়ও অভ্যন্তরীণ রুটে বাসচালক ও শ্রমিকরা ধর্মঘট পালন করছেন বলে জানা গেছে। এর বাইরে ঢাকা বিভাগের মধ্যে শুধু টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে নতুন সড়ক আইনের কিছু বিধান সংশোধনের দাবিতে পরিবহন চালকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট করছেন। দেশের অন্যান্য অঞ্চলে সোমবার এ ধরনের ধর্মঘটের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

খুলনা জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কাজী মো. নুরুল ইসলাম বেবী জানান, খুলনা বিভাগের ১০ জেলাতেই চালকদের কর্মবিরতি চলছে। মূলত রোববার থেকেই বাসচালকরা ধর্মঘট শুরু করেছেন। তবে সেটা ছিল আংশিক। সোমবার থেকে সব বাসচালকই নিজ দায়িত্বে ধর্মঘট শুরু করেছেন। এক্ষেত্রে শ্রমিক ইউনিয়ন বা মালিক সমিতির কোনো আহ্বান নেই।

তিনি জানান, রোববার সকাল ১১টায় ঝিনাইদহে মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন ফেডারেশনের একটি বৈঠক ছিল। সেখানে সব মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠক শুরুর আগে থেকেই চালকরা কর্মবিরতি শুরু করেন। বৈঠকে ফেডারেশনের নেতারা ২২ নভেম্বর পর্যন্ত সময় চাইলে সব শ্রমিক ইউনিয়ন তা প্রত্যাখ্যান করে। ফলে সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়।

এদিকে গতকাল সকাল থেকে হঠাৎ করে রাজশাহীর সঙ্গে বিভিন্ন রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দেন শ্রমিকরা। এতে দুর্ভোগে পড়েন মানুষ। তবে ঢাকামুখী কোচগুলো রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসে। মোটর শ্রমিকরা রাজশাহী নগরীর শিরোইল ও নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল এবং ভদ্রা মোড়ে অবস্থান নিয়ে নতুন সড়ক পরিবহন আইন প্রত্যাহারের দাবি জানান।

রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এটা ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ডাকা কোনো ধর্মঘট নয়। সকাল থেকে শ্রমিকরা নিজেরাই বাস বন্ধ রেখেছেন। রাজশাহীর মালিকদের বাস দু-একটি করে নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটে ছেড়ে যাচ্ছে। তবে বাইরের জেলার মালিকদের বাসগুলো রাজশাহী আসার পর পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। বাস চলছে না রাজশাহী-নওগাঁ রুটে। এছাড়া রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলা পর্যায়েও শহর থেকে কোনো বাস ছেড়ে যাচ্ছে না।

নওগাঁর শ্রমিক নেতা ওমর ফারুক জানান, নওগাঁয় বাস মালিক ও চালকরা বাস চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্তও বিভিন্ন রুটে বাস চলছিল। রাস্তায় বাসসহ অন্যান্য যানবাহনের পরিমাণ কিছুটা কম।  নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকরের জেরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আন্তঃজেলা বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার বাস ও ট্রাকসহ অন্যান্য পরিবহন চলাচল স্বাভাবিক আছে।

এদিকে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে নতুন সড়ক আইনের কিছু বিধান সংশোধনের দাবিতে পরিবহন চালকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট করছেন। গতকাল সকাল থেকে পূর্বঘোষণা ছাড়াই ভূঞাপুর থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচলরত সব ধরনের যানবাহন বন্ধ করে দেন শ্রমিকরা। এর ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।

খুলনার পরিবহন শ্রমিকনেতারা বলছেন, নতুন সড়ক পরিবহন আইন কয়েকটি ধারায় সংশোধনের পর এটি কার্যকর করা হোক। সরকারের বিভিন্ন দফতরে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও আইনটি সংশোধন ছাড়াই বাস্তবায়নের ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে খুলনায় সব রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ২১ ও ২২ নভেম্বর শ্রমিক ফেডারেশন বর্ধিত সভা ডেকেছে। ওই সভার আলোচ্যসূচির ১ নম্বরে আছে সড়ক পরিবহন আইন সম্পর্কে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ।

খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম বলেন, নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকরের প্রতিবাদে শ্রমিকেরা বাস চালাচ্ছেন না। তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু করেছেন। তিনি আরও বলেন, নতুন পরিবহন আইনে কোনো কারণে দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে চালকদের মৃত্যুদণ্ড এবং আহত হলে পাঁচ লাখ টাকা দিতে হবে। এত টাকা দেওয়ার সামর্থ্য শ্রমিকদের নেই। বাস চালিয়ে তারা জেলখানায় যেতে চান না।

কুষ্টিয়ায় বাস শ্রমিকদের সংগঠন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা বলছেন, কঠিন আইনে বাস চালাবেন না চালকেরা। জেলাটিন বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাহাবুবুল হক বলেন, রাতে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দেন, আজ (সোমবার) নতুন সড়ক আইন প্রয়োগ হবে। এ জন্য আতঙ্ক নিয়ে সড়কে বাস চালাবেন না। কঠিন আইনে বাস চালাবেন না চালকেরা। তিনি আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে খুলনা কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্তে শ্রমিকেরা কর্মবিরতিতে আছেন। ঢাকার সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।

ঝিনাইদহ থেকে যশোরগামী রবিউল ইসলাম নামের এক যাত্রী বলেন, সকালে ভিসার আবেদন করার জন্য যশোর যেতে হবে। সকাল থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা বসে থেকে বাস পাচ্ছেন না। রাশেদ আলী নামের আরেক যাত্রী বলেন, সরকার আইন করেছে। আর বাসমালিক ও শ্রমিকেরা সাধারণ যাত্রীদের জিম্মি করে বসে আছেন। সরকারের এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় সাতক্ষীরা বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, টার্মিনাল থেকে খুলনা, যশোর, কালীগঞ্জ, শ্যামনগর ও চাপড়া রুটে কোনো বাস চলাচল করছে না। টার্মিনালে কিছু যাত্রী বাস ছাড়ার অপেক্ষায় বসে আছেন।

সাতক্ষীরা বাস টার্মিনাল মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের কয়েকজন নেতা জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে নতুন আইনে চালকদের মৃত্যুদণ্ড এবং আহত হলে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। শ্রমিকদের এত টাকা দেওয়ার সামর্থ্য নেই। এ কারণেই আইন সংশোধনের পর এটি বাস্তবায়নের জন্য তারা জোর দাবি জানান। তা না হলে তারা বাস চালাবেন না।

চুয়াডাঙ্গায় সকাল ১০টায় অভ্যন্তরীণ ও বেলা ২টার পর থেকে দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। চুয়াডাঙ্গা জেলা বাস-ট্রাক সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি এম জেনারেল ইসলাম দাবি করেন, শ্রমিক ইউনিয়ন কোনো ধর্মঘট ডাকেনি। পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

শ্রমিকনেতারা জানান, গত রোববার ঝিনাইদহে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শ্রমিক সংগঠনগুলোর যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল স্থানীয়ভাবে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত যানবাহন চালাবে। ২২ তারিখে ঢাকায় বৈঠক শেষে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে, কিন্তু তার আগেই বন্ধ হয়ে গেল।

গত রোববার সকাল থেকে বাসচালকেরা কর্মবিরতি শুরু করেন, যা গতকাল বিকাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। জানতে চাইলে যশোর জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মামুনুর রশীদ বলেন, ‘অনেক চালকের গাড়ির চালানোর লাইসেন্স নেই। গাড়ির বৈধতা নেই অনেকের। নতুন আইন কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছেন সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যে কারণে ভয়ে মালিক ও চালকেরা গাড়ি চালানো বন্ধ করে দিয়েছেন। এটা আমাদের শ্রমিক সংগঠনের কোনো কর্মসূচি নয়।’

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০