দেশের পর্যটনশিল্পে বিনিয়োগে আগ্রহী তুরস্ক

শেয়ার বিজ ডেস্ক: বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে তুরস্ক। তুরস্কের সংস্কৃতি ও পর্যটনবিষয়কমন্ত্রী মেহমেত নুরী এরসয় বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে বৈঠকে এ আগ্রহ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে আগামী বছরের প্রথম দিকে বাংলাদেশ সফরের আশা প্রকাশ করেছেন নুরী এরসয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল এ তথ্য জানানো হয়।

রাষ্ট্রীয় সফরে বর্তমানে তুরস্কে অবস্থান করছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গত বুধবার তিনি দেশটির রাজধানী আঙ্কারায় মেহমেত নুরী এরসয়ের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তুরস্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম আল্লামা সিদ্দিকী ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মনোয়ার আহমেদ।

নুরী এরসয় বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পে বিনিয়োগ করবেন বলে আশ্বস্ত করেন। পর্যটনশিল্পে বিনিয়োগের লক্ষ্যে কক্সবাজার সফর করবেন এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন বলে তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে দেশটির বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য পাঠাবেন বলেও উল্লেখ করেন। বিশেষ করে কৃষি, শিল্প, এসএমইতে তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেন।

সাক্ষাতে বাংলাদেশের অর্থনীতির অগ্রগতি তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজšে§র জন্য বিশ্বকে সুন্দর ও শান্তিময় করাই আমাদের দায়িত্ব। তুরস্ক শিল্পসমৃদ্ধ একটি দেশ এবং ওইসিডি ও জি-২০’র মতো সংগঠনের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। আর আমরা শিল্পসমৃদ্ধ হওয়ার পথে হাঁটছি, জি-২০’র সদস্য হওয়ার স্বপ্ন দেখছি। বাংলাদেশ গত ১০ বছরে সাত শতাংশের ওপরে প্রবৃদ্ধি অর্জনে সমর্থ হয়েছে এবং এ বছর আট দশমিক ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। আমরা আগামী বছর আট দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে আট দশমিক তিন শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রত্যাশা করছি, যা ২০২৪ সাল নাগাদ দাঁড়াবে ১০ শতাংশ এবং সেটা অব্যাহত থাকবে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন সূচক অনুসারে দ্রুততম সময়ে দারিদ্র্য হ্রাসকারী দেশগুলোর মধ্যেও বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। চলতি বছরের বিশ্ব অর্থনীতির বড় সূচকগুলোয় একে একে প্রশংসনীয় অবস্থানে চলে এসেছি আমরা। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ২০১৯ ডেভেলপমেন্ট আউটলুক অনুসারে উচ্চ প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ৪৫টি দেশের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এডিবি। বাংলাদেশ এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে দ্রুততম প্রবৃদ্ধি অর্জন অব্যাহত রাখবে।

তুরস্কের সংস্কৃতি ও পর্যটনবিষয়কমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অগ্রগতি সত্যই প্রশংসার যোগ্য। বাংলাদেশ একটি উদীয়মান অর্থনৈতিক তারকা। তুরস্ক ও বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। যদিও দুই দেশের বাণিজ্য পরিসর ততটা ভালো নয়। তারপরেও যাতে বাণিজ্য পরিসর আরও বাড়ানো যায়, সেজন্যই আমাদের প্রচেষ্টা।

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ এবং অত্যন্ত আকর্ষণীয় প্রণোদনার সুযোগ গ্রহণের মাধ্যমে অধিকহারে মুনাফার সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশে। সুযোগ রয়েছে তরুণ ও ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সুবিধা নেওয়ার। কেননা, বর্তমানে বাংলাদেশে জনমিতিক লভ্যাংশের (ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড) সুযোগ বিদ্যমান। ২০৩০ সাল পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে। চীন, ভারত ও এশিয়ার অন্য ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির মধ্যে বাংলাদেশ কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থানে রয়েছে। ২০৩২ সালে পৃথিবীতে এক নম্বর দেশ হবে চীন, দুই আমেরিকা, তিন ভারত, চার জাপান এবং পাঁচ নম্বর হবে জার্মানি। চীন, ভারত ও জাপানÑএ তিনটি বৃহৎ অর্থনীতির দেশের মাঝে থাকবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান দেশটিকে আঞ্চলিক যোগাযোগ, বিদেশি বিনিয়োগ ও গ্লোবাল আউটসোর্সিংয়ের কেন্দ্রে পরিণত করেছে। সুতরাং কৌশলগত কারণেই বাংলাদেশকে এড়িয়ে বিশ্বের সার্বিক অগ্রগতি সম্ভব নয়। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে প্রভাবশালী ২০ দেশের তালিকায় আসবে বাংলাদেশ। ২০২৪

সালের মধ্যে বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে যেসব দেশ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে, তার মধ্যে বাংলাদেশ থাকবে।

এরপর বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে বাণিজ্য বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সাহায্যসংশ্লিষ্ট যৌথ ইশতেহার স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশের পক্ষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং তুরস্কের পক্ষে স্বাক্ষর করেন সংস্কৃতি ও পর্যটনবিষয়কমন্ত্রী মেহমেত নুরী এরসয়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০