মোহাম্মদ আলী, চট্টগ্রাম: জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্প নিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। আর এ কাজে সহায়তা করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরীতে খাল দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু করেছে সিডিএ। প্রকল্প শুরুর গত আড়াই বছরে মাত্র ২২ শতাংশ কাজের অগ্রগতি হয়েছে। পুরো প্রকল্প শেষ করতে প্রকল্প মেয়াদ আরও তিন বছর বাড়ানো হচ্ছে। এতে ব্যয়ভারও বাড়ছে।
চলতি বছরের ২ জুলাই থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে সিডিএ। সেনাবাহিনীর সহায়তায় ওইদিন বাকলিয়া থানার কল্পলোক আবাসিক এলাকাসংলগ্ন রাজাখালী খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের মধ্য দিয়ে এ অভিযান শুরু হয়। জামাল খান ওয়ার্ডে খালের ওপর গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের মাধ্যমে গত ৫ নভেম্বর প্রাথমিকভাবে উচ্ছেদ অভিযান শেষ করে সিডিএ। তবে উচ্ছেদ অভিযান শেষ হলেও প্রকল্পের অধীনে ৩৬টি খালের মধ্যে ৩৫টি খালপাড়ে এখনও রয়ে গেছে পাঁচশতাধিক অবৈধ স্থাপনা। সময় দেওয়ার পরও অবৈধ স্থাপনা ভবন মালিক কর্তৃক অপসারিত না হওয়ায় ফের উচ্ছেদ অভিযান চালাতে পারে সিডিএ।
সিডিএ সূত্রে জানা যায়, ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক সিডিএ’র প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ৯ আগস্ট একনেকে অনুমোদিত হয়। পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার প্রকল্পটি চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনে নেওয়া সবচেয়ে বড় প্রকল্প। প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল সিডিএ’র সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সমঝোতা স্মারক সই হয়। ওই বছরের ২৯ এপ্রিল থেকে খালের আবর্জনা অপসারণের মধ্য দিয়ে প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০২০ সালের ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রকল্পের মূল কাজের মধ্যে রয়েছেÑছয় হাজার ৫১৬ কাঠা জমি অধিগ্রহণ, ৮৫ দশমিক ৬৮টি কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ, ১০ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার সাইড ড্রেন নির্মাণ, ৯৭ দশমিক ৭০ কিলোমিটার খাল খনন, ছয়টি কালভার্ট নির্মাণ, ৪৮টি পিসি ব্রিজ নির্মাণ, এক লাখ ৭৬ হাজার মিটার রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, পাঁচ লাখ ২৮ হাজার ২১৪ ঘনমিটার কাদা অপসারণ। সিডিএ কেবল ভূমি অধিগ্রহণ ও স্থাপনার ক্ষতিপূরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে এবং সেনাবাহিনী কর্তৃক প্রকল্পের সব কাজ সম্পন্ন করবে।
তথ্যমতে, নির্ধারিত মেয়াদে শেষ হচ্ছে না এ মেগা প্রকল্পের কাজ। গত ১১ নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় আড়াই বছরে প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ২২ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৭০০ কোটি টাকা, যা মোট ব্যয়ের শতকরা ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ। এরই মধ্যে প্রকল্পের ডিপিপি সংশোধনের কাজ শুরু করেছে সিডিএ। এতে প্রকল্পের মেয়াদ আরও তিন বছরে বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত প্রস্তাব করা হচ্ছে।
জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় ৩৬টি খাল থেকে এক কোটি ২০ লাখ সিএফটি কাদা ও মাটি অপসারণ করা হয়েছে। ২৩টি খালের পাড়ে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ কাজ চলছে এবং এরই মধ্যে ২২ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। বৃষ্টির পানির বাঁধামুক্ত প্রবাহ নিশ্চিত করার জন্য এরই মধ্যে ৬০ কিলোমিটার রোড সাইড ড্রেন পরিষ্কার ও মেরামত করা হয়েছে এবং চার কিলোমিটার নতুন ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ৩৬টি খালের পাড় থেকে তিন হাজার ১৮৭টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। ৪০টি ব্রিজের ড্রয়িং-ডিজাইন চূড়ান্ত করা হয়। এর মধ্যে ৩০টি ব্রিজের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশে মহেখখালে রেগুলেটর নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। বাকি তিনটি রেগুলেটরের টেস্ট পাইল সম্পন্ন হয়েছে।
প্রকল্পের উপপরিচালক কাজী কাদের নেওয়াজ জানান, ৩৬টি খালের লে-আউট এবং ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র গ্রহণের কাজ চলছে। শিগগিরই ভূমি অধিগ্রহণ প্রস্তাব জেলা প্রশাসকের দপ্তরে পাঠানো হবে।
সিডিএ বলছে, ‘প্রকল্পের আওতায় অধিকাংশ কাজ খালকেন্দ্রিক হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত কাজ করা দুরূহ। সেনাবাহিনার ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেড সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে উদ্ভাবনী পদ্ধতি ব্যবহার করে বেশ কিছু কাজ করেছে। ২০২০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পের ৬০-৬৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর তা হলে আগামী বর্ষা মৌসুমে চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতার ৭৫ শতাংশ সমাধান হবে।
প্রকল্পর উপপরিচালক ও সিডিএর সহকারী অথরাইজ কর্মকর্তা কাজী কাদের নেওয়াজ শেয়ার বিজকে বলেন, ৩৫টি খালের পাড় থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ প্রাথমিকভাবে শেষ হয়েছে। দুই থেকে তিন তলাবিশিষ্ট বেশ কিছু অবৈধ স্থাপনা এখনও রয়ে গেছে। স্থাপনার মালিকদের সময় দেওয়া হয়েছে নিজ উদ্যোগে ভেঙে ফেলার জন্য। প্রকল্পের ডিপিপি সংশোধন করা হচ্ছে। মেয়াদ আরও তিন বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হচ্ছে। পাশাপাশি ব্যয়ও হ্রাস-বৃদ্ধি হতে পারে।