ক্রীড়া প্রতিবেদক: শততম টেস্ট বলে কথা। কিছু একটা করে দেখাতেই তো চাইবেন মুশফিকুর রহিমরা। তা-ই করলেন। কলম্বো টেস্টের প্রথম দিনের লাঞ্চের আগে-পরের সেশনটা মোস্তাফিজুর রহমান ও মেহেদি হাসান মিরাজের বোলিং নৈপুণ্যে পুরোপুরি নিজেদের করে নেয় বাংলাদেশ। এ সময়েই শ্রীলঙ্কার দেড়শো রানের আগেই পাঁচ উইকেট তুলে নেয় সফরকারীরা। কিন্তু চা বিরতির পরের সেশনে সফরকারীদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ালেন দিনেশ চান্দিমাল। অষ্টম উইকেটে অধিনায়ক রঙ্গনা হেরাথকে নিয়ে ৪৩ রানের জুটি গড়ে টাইগারদের গলার কাঁটা হয়ে রয়েছেন তিনি। যে কারণে শততম টেস্টের প্রথম দিনের শেষ বিকালে হাথুরুসিংহের শিষ্যদের আক্ষেপ থেকে গেল তিন উইকেট না নিতে পারায়। দিনশেষ স্বাগতিকদের সংগ্রহ সাত উইকেটে সংগ্রহ ২৩৮ রান।
মাইলফলকের টেস্টের প্রথম সকালটা ছিল বাংলাদেশের জন্য দারুণ। টস হারলেও মিরাজ-মোস্তাফিজ নৈপুণ্যে প্রতিপক্ষের স্কোর বোর্ডে ৭০ রান উঠতেই চার উইকেট তুলে নিয়েছিল টাইগাররা। লঙ্কান ইনিংসের ১৩ রানের মাথায় মোস্তাফিজের বলে গালিতে দিমুথ করুনারতেœর ক্যাচটি নেন মিরাজ। কিছুক্ষণ পরই স্বাগতিক শিবিরে জোড়া আঘাত করেন মিরাজই। তুলে নেন উপুল থারাঙ্গা ও কুশল মেন্ডিসের উইকেট দুটি। থারাঙ্গা সিøপে সৌম্যকে ক্যাচ দেন, মেন্ডিসকে স্টাম্পিং করেন এক টেস্ট পর উইকেটকিপিংয়ে ফেরা অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। লাঞ্চের আগেই শুভাশিস রায়ের বলে আসেলা গুনারতেœ এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরলে বড় বিপর্যয়ের মুখেই পড়েছিল রঙ্গনা হেরাথের দল।
বাংলাদেশের জন্য গলার কাঁটা চান্দিমাল অপরাজিত রয়েছেন ৮৬ রানে। এর আগে তিনি নিজে দুবার বেঁচে গেছেন ভাগ্য বাংলাদেশের পাশে ছিল না বলে। তাতে কী হয়েছে। একপ্রান্ত কীভাবে আগলে রেখে খেলতে হয়, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের যেন তারই শিক্ষা দিলেন লঙ্কান এ ডানহাতি ব্যাটসম্যান। তিনি গড়েছেন ছয়টি জুটি। দলকে তিনি সতীর্থদের সঙ্গে জুটি বেঁধে এনে দিয়েছেন ২২৪ রান।
শুরু থেকেই টাইগার বোলিংয়ের সামনে খেই হারিয়ে বসে শ্রীলঙ্কা। কিন্তু এক প্রান্তে আগলে ছিলেন চান্দিমাল। তার কারণেই মধ্যাহ্ন বিরতির পর যথেষ্ট অস্বস্তিতে ভুগেছে বাংলাদেশ। সে সময় ৭৯ রান তুলে পাল্টা আক্রমণের আয়োজন করেছিল শ্রীলঙ্কা। সেশনটা নিজেদের দিকেই টেনে নিয়েছিল তারা। কিন্তু পঞ্চম উইকেটে ডি সিলভার সঙ্গে চান্দিমালের ৬৬ রানের জুটি ভেঙে দেন তাইজুল। ডি সিলভাকে বোল্ড করেন তিনি। এরপর চান্দিমাল ৪৪ রানের জুটি গড়লেন ডিকভেলাকে নিয়ে। চা বিরতির পর ষষ্ঠ ওভারে সাকিব নিজের প্রথম উইকেট নিয়ে ভাঙেন এ জুটি। কিছুক্ষণ পর পেরেরাকে ফেরান মোস্তাফিজ। তার বল আড়াআড়ি ব্যাট চালিয়ে কাট করতে চেয়েছিলেন পেরেরা। তবে বল ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় দ্বিতীয় সিøপে। আর সে বল তালুবন্দি করতে কোনো ভুলই করেননি সৌম্য সরকার।
১৯৫ রানে সাত উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া শ্রীলঙ্কাকে উদ্ধারের চেষ্টায় চান্দিমালের সঙ্গে জুটি বাঁধেন অধিনায়ক হেরাথ। অপরাজিত থেকে গড়ে তুলেছেন ৪৩ রানের জুটি। ফলে সাত উইকেটে ২৩৮ রান নিয়েই দিন শেষ করে স্বাগতিকরা।
মেহেদি হাসান মিরাজ ও মোস্তাফিজুর রহমান নিয়েছেন দুটি করে উইকেট। একটি করে উইকেট শুভাশিস, তাইজুল ও সাকিব আল হাসানের। গতকালের মতো আজও যদি মিরাজ-মোস্তাফিজরা সকালেই ছন্দ ফিরে পান, তবে দ্রুতই অলআউট হয়ে যাবে স্বাগতিকরা। এরপরের কাজটা কিন্তু ব্যাটসম্যানদের। চিন্তা থাকবে বড় লিডের। যেন আবার উল্টো গল টেস্টের গল্প না লিখতে হয়!
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কার ১ম ইনিংস: ৮৩.১ ওভারে ২৩৮/৭ (চান্দিমাল ৮৬* ডিকভেলা ৩৪, ধনঞ্জায়া ৩৪, হেরাথ ১৮*; মোস্তাফিজ ২/৩২, মিরাজ ২/৫৮, তাইজুল ১/৩৪, সাকিব ১/৪৩, শুভাশিস ১/৪৭)
Add Comment