নির্ভরতার প্রতীক কোহিনূরের পণ্য

পলাশ শরিফ: নাম নয়, গুণগত মান একটি পণ্য বাঁচিয়ে রাখে। অবশ্য আমাদের দেশে মানের কারণে টিকে আছে, এমন পণ্যের সংখ্যা হাতেগোনা। হয়তো তাই কেনাকাটার বেলায় উৎপাদনকারী পণ্যের আগে প্রতিষ্ঠান কিংবা গ্রুপের নাম বলতে দেখা যায়। তারপরও কিছু পণ্য উন্নতমানের কারণে বছরের পর বছর ব্যবসা করছে। সেসব পণ্যের জনপ্রিয়তাও আকাশছোঁয়া। এমনি একটি পণ্য ‘তিব্বত’। প্রসাধন পণ্য বলতে প্রথমে ‘তিব্বত’ নামটিই আমাদের মনে আসে।

স্বনামখ্যাত পণ্যটি উৎপাদন করছে কোহিনূর কেমিক্যালস। একসময়ের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটিকে নব্বইয়ের দশকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ছেড়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে এটি ওরিয়ন শিল্প গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান। আজকের কোহিনূর কেমিক্যালসের জš§ ১৯৫৬ সালে। প্রায় ৫৫ বছর ধরে দেশে প্রসাধনপণ্য সরবরাহ করে আসছে এ প্রতিষ্ঠান। বাজারে প্রতিযোগিতায়ও এগিয়ে রয়েছে তারা। কয়েক দশক ধরে প্রসাধন শিল্পে শীর্ষস্থানীয় পর্যায়ে রয়েছে তারা।

কোহিনূর কেমিক্যালসের পণ্য বললে প্রথমে ‘তিব্বত-৫৭০’, ‘তিব্বল বল সাবান’, ‘তিব্বত ট্যালকম পাউডার’ ও ‘তিব্বত স্নো’র নাম চলে আসে। প্রতিষ্ঠানটির সাবানের তালিকায় দুই ধরনের সাবান রয়েছে। প্রথমত, গোসলের জন্য ‘তিব্বত’, ‘স্যান্ডালিনা’ ও ‘ব্যাকট্রল’ নামে তিন ধরনের সাবান রয়েছে। একইভাবে কাপড় কাচার জন্য ‘তিব্বত-৫৭০’, ‘তিব্বত লন্ড্রি সোপ’, ‘তিব্বত বল’ নামে তিনটি ব্র্যান্ডের সাবান আছে। এর মধ্যে ‘তিব্বত-৫৭০’ সাবানের নাম শোনেনি কিংবা ব্যবহার করেনি, দেশে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কারণ লালচে রঙের ওই সাবানের মাধ্যমেই কাপড় কাচার জন্য সাবান ব্যবহারের সঙ্গে আমাদের পরিচয় ঘটে। আগে গ্রামাঞ্চলে কাপড় কাচতে ছাই ভেজানো পানিসহ আরও কিছু দেশি পদ্ধতি প্রচলিত ছিল। সাবানের পর ডিটারজেন্ট পাউডারের ধারণাটিও নিয়ে আসে তিব্বত। প্রথমে ‘তিব্বত ডিটারজেন্ট’ ও পরে ‘ফাস্ট ওয়াশ’ নামে ডিটারজেন্ট পাউডার বাজারে আনে কোহিনূর কেমিক্যালস। কোহিনূরের হাত ধরে অন্যান্য কিছু প্রতিষ্ঠান সাবান ও ডিটারজেন্ট এনেছে। তারপরও গুণগত মান আর পণ্যে নতুনত্বের কারণে এখনও এগিয়ে রয়েছে ‘তিব্বত’। তাদের জয়রথ একই গতিতে চলছে।

শুরু থেকেই পণ্যের ব্র্যান্ডিংয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। সময়োপযোগী পণ্য উদ্ভাবন, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের পাশাপাশি প্রসাধন পণ্যের জন্য শক্তিশালী বিপণন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে তারা। বাজার মনিটরিং ও গবেষণার কারণে অন্যদের তুলনায় এগিয়ে আছে কোহিনূর কেমিক্যালস। একই সঙ্গে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষ জনশক্তি ব্যবহার করে উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান ধরে রাখছে তারা। পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা পরিষদের কার্যকরী দিক-নির্দেশনা ও সিদ্ধান্ত এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। দেশ-বিদেশে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানটির এগিয়ে থাকার পেছনে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে তাদের কর্মপন্থা।

নারী-পুরুষের প্রিয় স্নো, পাউডার, সেভিং ক্রিম ও হেয়ার অয়েলের মতো প্রসাধন পণ্য তালিকায়ও ‘তিব্বত’ ব্র্যান্ডের নামটি প্রথম সারিতে রয়েছে। পঞ্চাশের দশকে ‘স্নো-পাউডার’ বলতে প্রায় সবাই শুধু ‘তিব্বত’-কেই বুঝতো। বর্তমান প্রসাধন পণ্যের তালিকায় আট ধরনের স্নো, ছয় ধরনের পাউডার, তিন ধরনের ক্লিনার, দু’ধরনের টুথপেস্ট রয়েছে। আরও আছে একটি ডিশওয়াশ ও হ্যান্ডওয়াশ। একটি টয়লেট ক্লিনারও রয়েছে তাদের পণ্য তালিকায়। অন্যান্য প্রতিষ্ঠান প্রসাধন পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করলেও ‘তিব্বত’ এখনও ‘বনেদী ব্র্যান্ড’ কিংবা সৌন্দর্য সচেতন মানুষের কাছে আভিজাত্যের প্রতীক।

‘তিব্বত’ এর পাশাপাশি কোহিনূর কেমিক্যালসের অন্য ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে ‘স্যান্ডালিনা’, ‘আইস কুল’, ‘এক্সপার্ট’, ‘জেনস্টার’, ‘হিল গার্ড’, ‘ফ্রুটি’, ‘ক্লিন মাস্টার’ ও ‘ফেয়ার অ্যান্ড কেয়ার’ উল্লেখযোগ্য। এসব ব্র্যান্ডের নামে স্নো-পাউডার, সাবান, হেয়ার অয়েল, লোশন, ক্লিনার ও শেভিং ক্রিমসহ নিত্যকার প্রয়োজনীয় প্রসাধনপণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করে আসছে এ প্রতিষ্ঠান। কোহিনূর কেমিক্যালসের উৎপাদিত পণ্যগুলো দেশের গণ্ডি পেরিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল ও ভুটানসহ বিশ্বের নানা দেশে রফতানি হচ্ছে।

১৯৮৮ সালে পুঁজিবাজারে আসা প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান পরিশোধিত মূলধন ১২ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এখন প্রতিষ্ঠানটির প্রায় এক কোটি ২১ লাখ শেয়ার এ বাজারে রয়েছে। ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়িক অগ্রগতিও উল্লেখ করার মতো। নতুন নতুন প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্যেও এ সময়ে কোহিনূর কেমিক্যালসের আয় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এর জের ধরে প্রতিষ্ঠানটির কর-পরবর্তী মুনাফা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। রাষ্ট্রীয় কোষাগারেও নিয়মিতভাবে রাজস্বের জোগান দিচ্ছে কোহিনূর কেমিক্যালস।

সাংবাদিক

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০