
নিজস্ব প্রতিবেদক: পোলট্রি ফিডের মেশিনারিজ ঘোষণায় আমদানি হয়েছে মদ, সিগারেট, ফটোকপিয়ার মেশিন। এক-দুটি নয়, ১২১ কন্টেইনারে আমদানি হয়েছে এসব পণ্য। আমদানির আড়ালে পাচার করেছে এক হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। ভয়াবহ ব্যাপার হলো, যে তিন প্রতিষ্ঠানের নামে পণ্য আমদানি হয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানও অস্তিত্বহীন। অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে অর্থ পাচারকারীচক্রের মাস্টারমাইন্ড দিদারুল আলম টিটু। তিনি ১৫ মানি লন্ডারিং মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।

জালিয়াতচক্রের এ মাস্টারমাইন্ডকে সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করেছে কাস্টমস, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। সহযোগী কবির হোসেনও একটি মানি লন্ডারিং মামলার আসামি। গতকাল রাজধানীর কাকরাইলে কাস্টমস গোয়েন্দা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির মহাপরিচালক ড. মো. সহিদুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, তিনটি অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান হলো মেসার্স এগ্রো বিডি অ্যান্ড জেপি, হেনান আনহুই এগ্রো এলসি ও হেব্রা ব্রাঙ্কো। তিন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মেসার্স এগ্রো বিডি অ্যান্ড জেপির নামে ৪৩১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা পাচার হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে পৃথক ৯ মামলা দায়ের করা হয়েছে। হেনান আনহুই এগ্রো এলসির নামে ৪৩৯ কোটি ১২ লাখ টাকা পাচার হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পৃথক ছয় মামলা হয়েছে। এছাড়া হেব্রা ব্রাঙ্কোর নামে ২৯০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা পাচার হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির নামে পৃথক সাত মামলা করা হয়েছে। গত ৭ নভেম্বর কাস্টমস গোয়েন্দা পল্টন থানায় পৃথক ২২ মামলা দায়ের করে। উল্লেখ্য, এ বিষয়ে মামলা হওয়ার আগে ও পরে শেয়ার বিজে ৩ ও ৮ নভেম্বর দুটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

ড. মো. সহিদুল ইসলাম আরও জানান, দীর্ঘ তদন্ত শেষে মামলা করা হয়। তিনটি অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের অর্থ পাচারের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে দিদারুল আলম টিটুর নাম উঠে আসে। ২২ মামলার মধ্যে ১৫ মামলায় তিনি এজাহারভুক্ত আসামি। মামলার পর থেকে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল বিজয়নগরের মাহাতাব সেন্টার থেকে সহযোগীসহ দিদারুল আলম টিটুকে কাস্টমস গোয়েন্দার একটি দল গ্রেফতার করে। মূল হোতা টিটু, সহযোগী কবির, আবদুল মোতালেবসহ একটি চক্র তিনটি অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান খুলে জালিয়াতি করে আসছিলেন। ওই তিন প্রতিষ্ঠানের নামে পোলট্রি ফিডের মেশিন ঘোষণায় ১২১ কন্টেইনার পণ্য আমদানি করা হয়। জব্দ করার পর দেখা যায়, এসব কন্টেইনারে পোলট্রি ফিডের মেশিন নয়, বিপুল পরিমাণ মদ, সিগারেট ও ফটোকপিয়ার মেশিন রয়েছে। এতে প্রায় এক হাজার ১৯৭ কোটি টাকার শুল্ককর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে।

মহাপরিচালক জানান, কাস্টমস গোয়েন্দা ২০১৭ সালে চট্টগ্রামে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা ১২ কন্টেইনারভর্তি মদ, সিগারেট ও ফটোকপিয়ার মেশিন জব্দ করে। একই বছরের ২৭ নভেম্বর ৩৫ কোটি ২১ লাখ টাকা পাচারের অভিযোগে পল্টন থানায় মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করা হয়। কাস্টমস গোয়েন্দা সে মামলা তদন্ত করে। তদন্তে বেরিয়ে আসে দিদারুল আলম টিটু, তার সহযোগী কবির হোসেনসহ একটি চক্র ১২১ কন্টেনারে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির মাধ্যমে এক হাজার ১৯৭ কোটি টাকার শুল্ককর ফাঁকি দিয়েছে।

ব্যাংকে তিন প্রতিষ্ঠানের নামে হিসাব ও এলসি খোলা, পণ্য আমদানি, জাল দলিলাদি প্রস্তুত ও সরবরাহের ক্ষেত্রে দিদারুলের একান্ত সহযোগী ছিলেন কবির হোসেন। দিদারুল আলম টিটু মিরর ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী। এছাড়া কবির হোসেনের বিরুদ্ধে আমদানির আড়ালে আট কোটি ৩৬ লাখ টাকার শুল্ককর ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে। কবির আমদানির আড়ালে এ টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস গত ৩০ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দর থানায় মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করেছে। এ দুই আসামি ছাড়াও অন্যান্য আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান ড. মো. সহিদুল ইসলাম।