স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড থেকে কঠিন শর্তে ঋণ নিতে চায় বিমান

ইসমাইল আলী : ২০১৫ সালে বিমানের বহরে যুক্ত হয় দুইটি নতুন বোয়িং। এগুলোর মূল্য পরিশোধে সোনালী ব্যাংক (ইউ.কে) থেকে পাঁচ কোটি ২৭ লাখ ডলার ঋণ নেয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। দুই বছরের মধ্যে ঋণটি পরিশোধের শর্ত থাকলেও তাতে ব্যর্থ হয় বিমান। এবার সে ঋণ শোধে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড থেকে কঠিন শর্তে নতুন ঋণ গ্রহণের প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে বিমান। তবে এ প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
কঠিন শর্তের ঋণ হওয়ায় প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের নন-কনসেশনাল ঋণ-সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটিতে পাঠায় বিমান। গত ২ মার্চ কমিটির ১৮তম সভায় তা উত্থাপনের পর ফেরত দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে বিকল্প উৎস থেকে সহজ শর্তে ঋণ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
বৈঠকের তথ্যমতে, বোয়িং কেনায় গৃহীত ঋণ শোধে ১১ কোটি ২০ লাখ ডলার রি-ফাইন্যান্সের জন্য তিনটি পৃথক প্রস্তাবনা (আরএফপি) আহ্বান করা হয়। প্রথম প্রস্তাবে চার কোটি ৫৫ লাখ ডলার, দ্বিতীয় প্রস্তাবে আরো চার কোটি ৫৫ লাখ ডলার ও তৃতীয় প্রস্তাবে দুই কোটি ১০ লাখ ডলার চাওয়া হয়। প্রথম ও তৃতীয় প্রস্তাবে সর্বনিম্ন দরদাতা হয় স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড। আর দ্বিতীয় প্রস্তাবে সর্বনিম্ন দরদাতা হয় কানাডার টরোন্টো-ডমিনিয়ন ব্যাংক।
এর মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের প্রস্তাবিত সুদহার অনেক বেশি। আবার ঋণ শোধের সময়ও অনেক কম। এজন্য স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের সঙ্গে নেগোশিয়েশন বৈঠক করে বিমান। এতে কিছুটা ছাড় দিলেও তা গ্রহণযোগ্য সীমার বাইরে বলে মনে করে অর্থ মন্ত্রণালয়।
সূত্র জানায়, প্রথম প্রস্তাবে আওতায় গৃহীতব্য চার কোটি ৫৫ লাখ ডলার ঋণ পরিশোধে পাঁচ বছর সময় পাবে বিমান। এক্ষেত্রে প্রথম দুই বছর সুদ দিতে হবে তিন মাস মেয়াদি লন্ডন আন্তঃব্যাংক অফার রেটের (লাইবর) সঙ্গে তিন দশমিক ৩৫ শতাংশ হারে। এতে সুদহার পড়বে চার দশমিক ৩৯ শতাংশ। পরের তিন বছর এ সুদের হার আরও বাড়বে। সে সময় তিন মাস মেয়াদি লাইবর রেটের সঙ্গে ৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ হারে সুদ পরিশোধ করতে হবে। পাশাপাশি ঋণের ওপর এক দশমিক ৭৫ শতাংশ চুক্তি ফি ও দশমিক ৬০ শতাংশ সমন্বয় ফি হিসেবে সুদ পরিশোধ করতে হবে। আর বছরে ১৫ হাজার ডলার হিসেবে এজেন্সি ফিও পরিশোধ করতে হবে।
তৃতীয় প্রস্তাবের দুই কোটি ১০ লাখ ডলারের জন্য আরও বেশি হারে সুদ পরিশোধ করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রথম দুই বছর ঋণের সুদ দিতে হবে ৫ দশমিক ১৪ শতাংশ। পরের তিন বছর সুদ দিতে হবে ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ। পাশাপাশি এক দশমিক ৩০ শতাংশ চুক্তি ফি ও দশমিক ৪৫ শতাংশ সমন্বয় ফি হিসেবে সুদ পরিশোধ করতে হবে। বছরে ২০ হাজার ডলার হিসেবে এজেন্সি ফি ও এককালীন ৫০ হাজার ডলার লিগাল ফিও হিসেবে পরিশোধ করতে হবে বিমানকে।
দ্বিতীয় প্রস্তাবে ৪ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের জন্য কানাডার টরোন্টো-ডমিনিয়ন ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে হবে ১২ বছরে। এক্ষেত্রে তিন মাস মেয়াদি লাইবর রেটের সঙ্গে দশমিক ৫৫ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। এতে সুদ হার পড়বে এক দশমিক ৫৯ শতাংশ। পাশাপাশি দশমিক ৩০ শতাংশ হারে সমন্বয় ফি ও দশমিক ২৫ শতাংশ অ্যারেঞ্জমেন্ট ফি পরিশোধ করতে হবে। আর বছরে ১০ হাজার ডলার হিসেবে এজেন্সি ফি ও এককালীন ৬৫ হাজার ডলার লিগাল ফিও হিসেবে পরিশোধ করতে হবে বিমানকে।
বৈঠকে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের প্রস্তাবে আপত্তি জানান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। লাইবর রেট বাড়লে পরবর্তীতে সুদের হার আরও বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব। এক্ষেত্রে বিকল্প উৎস থেকে ঋণ নেওয়া যায় কিনা তা খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনরকে বলেন অর্থমন্ত্রী। তবে টরোন্টো-ডমিনিয়ন ব্যাংকের প্রস্তাবটি অনুমোদন দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএম মোসাদ্দিক আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, বোয়িং কেনার সময় গৃহীত ঋণ শোধে তিনটি পৃথক প্রস্তাব আহ্বান করা হয়েছিল। এর মধ্যে টরোন্টো-ডমিনিয়ন ব্যাংকের প্রস্তাবটি অনুমোদন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ সংক্রান্ত চুক্তি সই হলে দ্রুতই সোনালী ব্যাংক ইউ.কে’র ঋণ শোধ করা হবে।
তথ্যমতে, ২০১৫ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে বিমানের বহরে যুক্ত হয় দুইটি বোয়িং ‘মেঘদূত’ ও ‘ময়ূরপঙ্খী’।
নামের বোয়িং দুটি দেশে এসে পৌঁছায়। এজন্য প্রি-পেমেন্ট ডেলেভারি হিসেবে সোনালী ব্যাংক ইউ.কে লিমিটেড থেকে পাঁচ কোটি ২৭ লাখ ডলার (৪২১ কোটি ৬০ লাখ টাকা) ঋণ নেয় বিমান। বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় ২০১৪ সালের ১০ মার্চ ঋণটি গ্রহণ করা হয়। এটি অনুমোদন হয়েছিল সে বছর ২ মার্চ।
৬ মাস মেয়াদি লাইবর রেটের সঙ্গে তিন দশমিক ৯০ শতাংশ যুক্ত করে সুদহার নির্ধারণ করা হয় এ ঋণের। আর ঋণের মেয়াদ ধরা হয় দুই বছর। প্রথমবার ঋণ পরিশোধের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৬ সালের ১০ মার্চ। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে বিমান বাংলাদেশ টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়। পরে ঋণ পরিশোধে ৬ মাস সময় বাড়ানো হয়েছে। বর্ধিত সময় অনুযায়ী গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর টাকা পরিশোধ করার সময় দেওয়া হয়। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে টাকা পরিশোধেও ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ বিমান। পরে তা চলতি বছরের ১০ মার্চ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। ওই ঋণ শোধে নতুন করে ঋণ নিচ্ছে বিমান।
উল্লেখ্য, বিমান দুটির ডেলিভারি পেমেন্ট বাবদ পুরো অর্থ পরিশোধের কথা ছিল যুক্তরাজ্যের মারিয়ানা (প্রাইভেট) লিমিটেডের। প্রতিষ্ঠানটি এ অর্থ প্রদানে ব্যর্থ হয়। পরে বিমানের নিজস্ব তহবিল থেকে চার কোটি ৪ লাখ ৩০ হাজার ডলার সরবরাহ করে। আর স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, ইস্টার্ন ব্যাংক ও সিটি ব্যাংক থেকে ৯২ লাখ ২০ হাজার ডলার ঋণ নেওয়া হয়। এর সঙ্গে সোনালী ব্যাংক (ইউ.কে) লিমিটেড থেকে গৃহীত পাঁচ কোটি ২৭ লাখ ডলার মিলিয়ে মোট ১০ কোটি ২৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার বোয়িংকে প্রদান করা হয়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০