চলতি বছরের ৯ মাস

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে ঋণ বিতরণে বেশি আগ্রহী অগ্রণী

শেখ আবু তালেব: দেশের ব্যাংক খাতের মোট খেলাপির ৪৭ শতাংশের বেশি রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের। খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে নতুন ঋণ বিতরণে সতর্ক রয়েছে পাঁচ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক। কিন্তু বিশাল অঙ্কের খেলাপির বোঝা নিয়েও ঋণ বিতরণে বেশি আগ্রহী অগ্রণী ব্যাংক। এতে নতুন খেলাপির সঙ্গে বাড়ছে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণও।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাস (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের স্থিতি দাঁড়ায় এক লাখ ৭৪ হাজার ৬২২ কোটি টাকা। এর মধ্যে রয়েছে অগ্রণীর ৩৮ হাজার ৬১১ কোটি ৮০ লাখ, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (বিডিবিএল) এক হাজার ৬০১ কোটি ৬৯ লাখ, বেসিক ব্যাংকের ১৪ হাজার ৯০৬ কোটি ৩৮ লাখ, জনতার ৪৮ হাজার ৬০০ কোটি ২৭ লাখ, রূপালীর ২৬ হাজার ৯৫৪ কোটি ২৪ লাখ এবং সোনালীর ৪৩ হাজার ৫৪৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরের চেয়ে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ বৃদ্ধি পেয়েছে ১১ হাজার ৭০১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে সেপ্টেম্বর শেষে অগ্রণী ব্যাংকের ঋণের স্থিতি বৃদ্ধি পেয়েছে চার হাজার ৭০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ। এ হিসেবে অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের চেয়ে ঋণ বিতরণে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক।

এ বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস্-উল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘ঋণের চাহিদা একটু বেশি ছিল, তাই বিতরণ একটু বেশি হয়েছে সত্য, তার পরও আমরা সীমার মধ্যে আছি। আমাদের ঋণখেলাপির হার কিন্তু বৃদ্ধি পায়নি।’

যদিও এ সময়ে অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মধ্যে বিডিবিএলের ৩৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, জনতার ৩৭৭ কোটি ১৫ লাখ, রূপালীর তিন হাজার ৮৮৩ কোটি ও সোনালীর তিন হাজার ৪২৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। ঋণের লাগাম টানায় এ সময়ে বেসিক ব্যাংকের ঋণ স্থিতি কমেছে ৯২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, খেলাপি ঋণের উচ্চ হারের কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণে লাগাম টেনেছে। অগ্রণী, সোনালী ও রূপালী ব্যাংকের ঋণ বিতরণের পরিমাণ তিন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বাকি ব্যাংকগুলোর সর্বোচ্চ ৩৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত বিতরণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব ব্যাংক বড় অঙ্কের ঋণ বিতরণে যায়নি।

যদিও গত বছর ডিসেম্বরে অগ্রণী ব্যাংক আগ্রাসী ব্যাংকিংয়ে জড়িয়েছে বেশি। এ ধারবাহিকতায় ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ডিসেম্বরে ব্যাংকটির খেলাপির পরিমাণ ছিল পাঁচ হাজার ৭৫০ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। গত সেপ্টেম্বর শেষে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ছয় হাজার ২৩৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এ সময় খেলাপি বৃদ্ধি পায় ৪৮৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এ কারণে ব্যাংকটির খেলাপির বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতিও (প্রভিশন) বৃদ্ধি পায়।

২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির প্রভিশন সংরক্ষণের পরিমাণ ছিল চার হাজার ৭৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা। গত সেপ্টেম্বর শেষে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৩৯২ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো প্রতিবছর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি করে থাকে। এতে ব্যাংকগুলোর মান উন্নয়নে বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পাদিত বার্ষিক চুক্তি অনুযায়ী, ২০২০ সালের জুন মাসের মধ্যে অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ পাঁচ হাজার কোটি টাকার মধ্যে নামিয়ে আনার জন্য বলা হয়।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের বিষয়ে শামস্-উল ইসলাম বলেন, আমরা খুবই আশাবাদী, অর্থবছর শেষে লক্ষ্যমাত্রার সবগুলোই বাস্তবায়ন করতে পারব।

ব্যাংকাররা আশঙ্কা করছেন, আগ্রাসী ঋণ বিতরণে ভবিষ্যতেও ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির শঙ্কা রয়েছে। এতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের ধারেকাছেও যেতে পারবে না ব্যাংক। যদিও দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ব্যাংকটি এক হাজার ১০০ কোটি টাকার বিপরীতে মাত্র ৩৫ কোটি টাকা ডাউন পেমেন্ট পেয়েছে।

ব্যাংকঋণ বিতরণ ও খেলাপিঋণ বৃদ্ধির বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস উল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু একাধিকবার তার মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০