একবার দুইবার নয়, ১৫ থেকে ৬২ বার বালাইনাশক ব্যবহার করা হয়। এক মৌসুম থেকে আরেক মৌসুমে আম সংগ্রহ করা পর্যন্ত এভাবে চলে। কারণ, ব্যয়, স্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব প্রভৃতি সম্পর্কে কিছু না বুঝে আমচাষিরা আমে স্প্রে করে থাকেন। অথচ বিষয়টি মোটেও কাম্য নয়।
আমের পাশাপাশি অন্যান্য ফল ও ফসলের বেলায়ও বালাইনাশকের ব্যবহার বাড়ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, আম উৎপাদনের জন্য ক্ষেত্রবিশেষে দুই থেকে পাঁচ বার স্প্রে করলে ভালো আম পাওয়া যায়। মাত্রাতিরিক্ত স্প্রে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ফসলের উৎপাদনকে ব্যয়বহুলও করে তোলে তা। শুধু তা-ই নয়, অতিরিক্ত স্প্রে করার ফলে উপকারি ও বন্ধু পোকার সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। বিঘ্নিত হচ্ছে আমের কাক্সিক্ষত পরাগায়ণ। তবু আম উৎপাদনে বালাইনাশক স্প্রে করা হয় অনেকটা দেখাদেখি করে। প্রয়োজন থাকুক বা নাই থাকুক সেটি মুখ্য নয়।
এমন পরিস্থিতিতে ফল উৎপাদনে ব্যাগিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে। তাহলে বালাইনাশকের ব্যবহার কমানো যাবে। ব্যাগিং করা আম অনেক দিন ঘরে রেখে খাওয়া যায়। এ ফল সংরক্ষণ করার জন্য অন্যকিছুর দরকার পড়ে না।
এ পদ্ধতি ব্যবহার করে আমকে নানা ধরনের আঘাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব। পাখির আক্রমণ, প্রখর সূর্যালোকের পাশাপাশি রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করা যায়। আমের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে থাকে ছিদ্রকারী পোকা ও মাছি। আমের বর্ধনশীল পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে থাকে এরা। নির্দিষ্ট সময়ে ব্যাগিং করা হলে কোনো স্প্রে ছাড়া ক্ষতিকর পোকা দুটি থেকে আমকে বাঁচানো যায়। ব্যাগিং প্রযুক্তিতে উৎপাদিত হবে বিষমুক্ত আম। কমবে আমের উৎপাদন খরচ। পরিবেশ রক্ষা পাবে দূষণ থেকে। ফলে বাড়বে আমের গুণগত মান।
সময় ও পদ্ধতি
সব ধরনের আম একই সময়ে ব্যাগিং করা যায় না। বারি আম ১, ২, ৬, ৭, ক্ষীরশাপাতি ও ল্যাংড়া জাত ব্যাগিং করা হয় ৪০ থেকে ৫৫ দিন বয়সের গুটিতে। বারি আম ৩, ৪, ৮, ফজলি ও আশ্বিনা জাত ব্যাগিং করা হয় গুটির বয়স ৬০-৬৫ দিন হলে। এই সময়ে আম জাতভেদে মার্বেল আকারের বা এর চেয়েও বড় হয়ে থাকে। অর্থাৎ আগাম ও মধ্যম জাতের ক্ষেত্রে আগাম ব্যাগিং করতে হবে। নাবি জাতের ক্ষেত্রে একটু দেরিতে ব্যাগিং করা ভালো। ব্যাগিং করার আগে কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক ভালোভাবে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। ফল ভেজা অবস্থায় ব্যাগিং করা ঠিক নয়। আমের ক্ষেত্রে সাধারণত তিনটি স্প্রে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। যেমন প্রথমবার আমগাছে মুকুল আসার আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ দিন আগে। দ্বিতীয়বার মুকুল আসার পর অর্থাৎ আমের মুকুল ১০ থেকে ১৫ সেমি লম্বা হলে। সবশেষে আম মটর দানার মতো হলে।
নিয়ম-কানুন
ব্যাগিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভালো ফল পাওয়ার জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত। অন্যথায় কিছু সমস্যা হতে পারে।
১.নির্দিষ্ট সময়ে ব্যাগিং আরম্ভ করতে হবে। একটি পুষ্পমঞ্জুরিতে অনেকগুলো আম থাকলে প্রথমে ফল পাতলা করতে হবে। এরপর সবচেয়ে ভালো, দাগমুক্ত একটি অথবা দুটি আমের ব্যাগিং করতে হবে। বড় জাতের আমের বেলায় প্রতি পুষ্পমঞ্জুরিতে একটির বেশি ফল রাখা ঠিক নয়। আমে উপপত্র কিংবা মুকুলের অংশবিশেষ লেগে থাকলে বা ব্যাগিং করতে অসুবিধা হলে তা পরিষ্কার করে নিতে হবে।
২.সময়মত প্রয়োজনীয় ব্যাগ সংগ্রহ করতে হবে। চেয়ার বা টুল বা মই সঙ্গে থাকলে ভালো হয়। শুকানোর পর ব্যাগিং আরম্ভ করতে হবে। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে ব্যাগিং করা শ্রেয়।
৩.ব্যাগের ওপরের অংশ দুই পাশ থেকে ভাঁজ করতে করতে মাঝ বরাবর আসতে হবে। এরপর তার দিয়ে ভালোভাবে মুড়িয়ে দিতে হবে যেন কোনো অবস্থাতেই পানি, পিপড়া, মিলিবাগ প্রবেশ করতে না পারে।
৪.রঙিন আমের জন্য একস্তর যুক্ত সাদা ব্যাগ ও অন্য যে কোনো জাতের জন্য বাদামি ব্যাগ
ব্যবহার করতে হবে।
৫.ব্যাগিং শুরু করার আগে হাতে-কলমে শিখে নেওয়া ভালো। ব্যাগ ব্যবহার করার পর ছিঁড়ে গেলে বা নষ্ট হলে তা পুড়িয়ে ফেলুন।
আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
Add Comment