স্মরণকালের দুরবস্থায় শেয়ারবাজার

পুঁজিবাজারে এখন স্মরণকালের সবচেয়ে দুরবস্থা যাচ্ছে। এর আগে যখন বাজারের খারাপ অবস্থা ছিল তখন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এমন হতাশা দেখা যায়নি। কিন্তু বাজারের এ অবস্থায় ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ), মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ), বিএসইসি এবং ডিএসই প্রভৃতি সংস্থাগুলোর কারও কোনো ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না। আসলে ২০১০ সালের থেকেও বেশি সংকট শুরু হয়েছে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। খুজিস্তা নূর-ই-নাহারিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক মুহাম্মদ মহসীন, কোম্পানি ও সিকিউরিটিজ আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার এএম মাসুম এবং পুঁজিবাজারের টেকনিক্যাল অ্যানালিস্ট ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ।  

অধ্যাপক মুহাম্মদ মহসীন বলেন, পুঁজিবাজারে এখন স্মরণকালের সবচেয়ে দুরবস্থা যাচ্ছে। এর আগে যখন বাজারের খারাপ অবস্থা ছিল তখন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এমন হতাশা দেখা যায়নি। কিন্তু বাজারের এ অবস্থায় ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ), মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ), বিএসইসি এবং ডিএসই প্রভৃতি সংস্থাগুলোর কারও কোনো ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না। আসলে ২০১০ সালে থেকে বেশি সংকট শুরু হয়েছে। তখন থেকেই বাজারে আন্তর্জাতিক মানের যে কাজগুলো করা উচিত ছিল, সেটা এখনও করা হয়নি। কিন্তু বাজারসংশ্লিষ্টরা বারবার বলে আসছেন, এ পর্যন্ত বাজার-সংক্রান্ত যে কাজগুলো করা হয়েছে সবই আন্তর্জাতিক মানের। যদি তাই হয়, তাহলে বাজারের এ অবস্থা কেন। যদি এ সময় বিশ্বের পুঁজিবাজারের দিকে তাকাই দেখা যাচ্ছে, তাদের পুঁজিবাজার ঊর্ধ্বগতিতে রয়েছে। কিন্তু এদেশের বাজারের চিত্র উল্টো। এটা মেনে নেওয়া যায় না। কথা হচ্ছে, কেন বাজারের এ সংকট ঘটতে দেওয়া হচ্ছে। কেনইবা এ সংকট মোকাবিলা করা যাচ্ছে না। এখানে অনেকগুলো কারণ রয়েছে বলে মনে করি। প্রথম কারণ হচ্ছেÑবাজারের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যেসব ব্যক্তিদের বসানোর কথা অর্থাৎ যারা বাজার সম্পর্কে ভালো বোঝেন, তাদের বসানো হয়নি। আবার যাদের নতুন করে বসানো হবে শোনা যাচ্ছে, তাদের যোগ্যতার অভাব রয়েছে। আরেকটি কারণ হচ্ছেÑঅসচেতনতা, দেশপ্রেমের অভাব এবং সর্বোপরি মানবিক গুণাবলির অভাব। এখানে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী রয়েছেন। আজ তারা নিঃস্ব হয়ে দিশেহারা অবস্থায়। 

ব্যারিস্টার এএম মাসুম বলেন, ইতোমধ্যে একটি আর্থিক খাতের পিপলস লিজিং কোম্পানিকে অবসায়ন করা হয়েছে। কোম্পানিটি অবসায়ন করার সময় কখনও কী সরকার বিবেচনা করেছে, এখানে আরও আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং সেখানে অনেক বিনিয়োগকারী রয়েছেন। যখন কোম্পানিটি অবসায়ন করা হয় তখনই আমানতকারীরা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আমানত তুলে নেন। এখন তাদের শেয়ার বিক্রি করে আমনতকারীর অর্থ ফেরত দিচ্ছে। প্রায় ১৭ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছেন। এর একটি প্রভাব দেখা যাচ্ছে বলে মনে করি। আরেকটি বড় বিষয় হচ্ছেÑবাজারের মোট বিনিয়োগের  ৪২ থেকে ৫০ শতাংশ হচ্ছে ব্যাংক, আর্থিক এবং ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির। যদি এসব প্রতিষ্ঠানের প্রফিট কমে যায় এবং বিনিয়োগকারীর আস্থা না থাকে বাজার এমনিতেই কমে যাবে। আবার একদিকে রপ্তানি কমেছে অন্যদিকে বেসরকারি বিনিয়োগও কমেছে। 

মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, ২০১০ সাল থেকেই বাজার সংকট অবস্থা চলছে। এখানে আইপিও ও প্লেসমেন্ট শেয়ারের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে কারসাজি করে বাজার থেকে অর্থ সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এভাবে  যদি বাজার থেকে অর্থ সরিয়ে ফেলা হয়, তাহলে বাজার অন্তঃসারশূন্য হবেই। এখন আমরা তা হারে হারে টের পাচ্ছি। বাজার যেভাবে দিন দিন নি¤œগতির দিকে যাচ্ছেÑএটা আসলেই বড় ধরনের ঝুঁকির বিষয়।

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০